সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৩৯ অপরাহ্ন

আল্লাহর ক্ষমা ও দয়া

মাওলানা এম এ হালিম গজনবী এফসিএ:
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ৪ নভেম্বর, ২০২১

আমাদের কল্যাণ প্রাপ্তির জন্য পরম করুণাময় আল্লাহ তায়ালার ক্ষমা ও দয়া শীর্ষস্থানীয়। তাই আবেগাপ্লুত হয়ে তাঁর দরবারে আমি গোলাম পেশ করছি-
ক্ষমা তোমার চাইরে মাওলা, ক্ষমা তোমার চাই
তোমার ক্ষমা বিনে মাওলা, মোদের উপায় নাই।
দয়া তোমার চাইরে মাওলা, দয়া তোমার চাই
তোমার দয়া বিনে মাওলা মোদের উপায় নাই।
ক্ষমা ও দয়া যে কল্যাণ সাধনে শীর্ষস্থানীয় তার যথার্থ প্রমাণ আমাদের আদি পিতা হজরত আদম আ:-এর দোয়া, যখন তিনি ও মা হাওয়া আ: নিষিদ্ধ গাছের ফল ভক্ষণ করার অপরাধে জান্নাত হারা হলেন এবং আদি পিতা আদম আ:কে পাঠালেন শ্রীলঙ্কার পাহাড়ে ও আদি মাতা হাওয়া আ:কে পাঠালেন জেদ্দাতে। তখন আদম আ: আমার জানামতে তিন শতাধিক বছর ধরে আল্লাহর দরবারে প্রার্থনারত ছিলেন এ দোয়া পড়েন- ‘রাব্বানা জালামনা আনফুছানা, ওয়া ইল্লাম তাগফিরলানা ওয়া তারহামনা লানা কুনান্না মিনাল খাছিরিন।’ অর্থ- ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা আমাদের ওপর অত্যাচার করেছি (নিষিদ্ধ গাছের ফল খেয়ে), এমতাবস্থায় আপনি যদি মেহেরবানি করে আমাদিগকে ক্ষমা না করেন, দয়া না করেন তাহলে আমরা নিশ্চিত মহাক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবো অর্থাৎ জাহান্নামবাসী’ (সূরা আরাফ : ২৩)।
উপরোক্ত আবেদনটি ছিল দু’টি বিষয়ের জন্য। একটি আল্লাহর তরফ থেকে ‘ক্ষমা’ অপরটি ‘দয়া’ অতুলনীয় অভূতপূর্ব ঘোর দুঃসময়ে। এ চরম পরম সাধনা, ত্যাগ, যথাযথ আবেদন-নিবেদন, কান্নাকাটি সুদীর্ঘ তিন শতাধিক বছর ধরে করার পর পরম করুণাময় ক্ষমাশীল ও ক্ষমাপ্রিয় আল্লাহ তায়ালা আদম আ:কে ক্ষমা করেন।
যিনি আমাদের দোয়া কবুল করবেন তিনিই দোয়া শিখিয়ে দিলেন- ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাকে ক্ষমা করুন, আমাকে দয়া করুন, আপনি সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু’ (সূরা মুমিনুন : ১১৮)।
পিতা-মাতার জন্য আল্লাহ দোয়া শেখালেন- ‘হে আমার প্রতিপালক! দয়া করুন আমার পিতা-মাতাকে যেমনি করে তারা আমাকে লালন পালন করেছেন শিশুকালে (আদর-যত্ন , মায়া-মমতার সাথে)’ (সূরা বনি ইসরাইল : ২৪)। শিখালেন অন্য দোয়া- ‘হে আমার প্রতিপালক! ক্ষমা করুন আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে, সব মুমিনকে পরকালে হিসাব গ্রহণের সময়’ (সূরা ইবরাহিম : ৪১)।
পিতা-মাতার জন্য আল্লাহর শেখানো দোয়া দু’টির একটিতে ক্ষমা অন্যটিতে রহমতের জন্য প্রার্থনা স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে ‘ক্ষমা’ ও ‘দয়া’ আল্লাহর অন্যতম সর্বশেষ্ঠ গুণাবলি। আল্লাহর বাণী- ‘আল্লাহর দয়া থেকে নিরাশ হয়ো না’ (সূরা জুুমার : ৫৩)।
আল্লাহর বাণী (দোয়া)- ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে আপনার পথে এনেছেন, আমাদের অন্তরকে ভ্রান্ত পথের দিকে ঘুরিয়ে দেবেন না। দান করুন আপনার কাছ থেকে আমাদেরকে দয়া। নিশ্চয় আপনি অতিশয় দাতা’ (সূরা ইমরান : ৮)। ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের পাপ মোচন করুন, আমাদেরকে ক্ষমা করুন, আমাদেরকে দয়া করুন’ (সূরা বাকারা : ২৮৬)।
মৃতদেহ সামনে রেখে জানাজার সালাত আদায় করা হয় চার তাকবিরে। তৃতীয় তাকবিরের পর যে দোয়াটি পড়া হয় তার অর্থ- ‘হে আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ! ক্ষমা করেন আমাদিগকে (বিশ্বমুমিন মুসলিম), আমাদের জীবিতদেরকে, আমাদের মৃতদেরকে, আমাদের উপস্থিতদেরকে, আমাদের অনুপস্থিতদেরকে, আমাদের শিশু-কিশোরদের, আমাদের বয়স্ক ও বৃদ্ধদের, আমাদের পুরুষদের, আমাদের মহিলাদেরকে। হে আল্লাহ! আপনি আমাদের মধ্যে যাদেরকে জীবিত রেখেছেন তাদেরকে ইসলাম ধর্ম পালনকারী হিসেবে জীবিত রাখুন, যাদের মৃত্যু দান করবেন তাদেরকে ঈমানের ওপর মৃত্যু দান করুন।’
সালাত জান্নাতের চাবি, তন্মধ্যে সিজদা সর্বোচ্চ আত্মসমর্পণ, আল্লাহর নিকটতম অবস্থানে অবস্থান, তাঁর কুদরতি কদম মুবারকে মস্তক নত করা। এহেন সিজদাদ্বয়ের মাঝখানে ‘ওয়াজিব বৈঠক’ সালাতের মাহেন্দ্রক্ষণ। এ বৈঠকে যে দোয়াটি পড়া হয় তা বিশেষভাবে লক্ষ্য করুন- ‘আল্লাহুম্মাগফিরলি ওয়ারহামনি ওয়াফিনি ওয়াহদিনি ওয়ারজুকনি ওয়াযবারনি ওয়ারফিনি’ অর্থ- ‘হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করুন, আমাকে দয়া করুন, আমার পাপ মোচন করুন, আমাকে সরল পথ দেখান, আমাকে রিজিক দান করুন, আমাকে উপদ্রব মুক্ত করুন, আমার মর্যাদা বাড়িয়ে দিন।’ (সম্মানিত পাঠক, দয়া করে আরবি দোয়াটি মুখস্থ করে নিতে পারেন নিয়মিতভাবে পালন করার জন্য)। ‘বিশেষ রহমতে ভূষিত করেন আল্লাহ যাকে ইচ্ছা করেন’ (সূরা আল ইমরান, আয়াত-৭৪)।
দয়া সংক্রান্ত আল্লাহর গুণবাচক নাম দুটি কুরআনের শুরুতেই উল্লিখিত হয়ে তার তাৎপর্য ও গুরুত্ব প্রমাণ করল। (আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন। আর রাহমানির রাহিম) ‘রহমান’ পার্থিব জীবনে সবার জন্য। পক্ষান্তরে, ‘রহিম’ শুধুমাত্র পারলৌকিক জীবনে একমাত্র মুমিন মুসলিমদের জন্য।
তাশাহুদ ও দরুদ পাঠ শেষে যে দোয়াটি আমরা পড়ি, তথায় এ ক্ষমার ও দয়ার দরখাস্ত আমরা করি। যথা- ‘হে আমার প্রতিপালক! নিশ্চয়ই আমি অনেক অনেক অত্যাচার করেছি আমার নিজের ওপর (নানা পাপাচারে লিপ্ত হয়ে)। আমার পাপগুলো ক্ষমাকারী আপনি ছাড়া আর কেউ নেই। মেহেরবানি করে আমাকে ক্ষমা করুন, আমাকে দয়া করুন। নিশ্চয়ই আপনি ক্ষমাশীল ও দয়ালু।’
উপরোক্ত আলোচনা থেকে আল্লাহর ‘ক্ষমা’ ও ‘দয়ার’ অসাধারণ গুরুত্ব ও তাৎপর্য সহজেই অনুমেয়। হে আল্লাহ! দয়া করে তাওফিক দিন আমরা যেন উপরোক্ত দোয়াগুলো আপনার দরবারে নিয়মিত পেশ করে আপনার ক্ষমা ও দয়া উভয় জগতে অর্জন করতে পারি। আমীন। লেখক: সাবেক সভাপতি, ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্টস অব বাংলাদেশ ও চেয়ারম্যান এবং প্রতিষ্ঠাতা অংশীদার, আজিজ হালিম খায়ের চৌধুরী, চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্টস।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com