সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৩৯ অপরাহ্ন

বিরোধ নিরসন না হওয়ায় ২৩ নৌঘাট ঘাটের অবকাঠামোগত উন্নয়ন হচ্ছে না

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় বুধবার, ১০ নভেম্বর, ২০২১

বিআইডব্লিউটিএ সূত্র জানায়, ১৯৫৮ সালের বিআইডব্লিউটিএ অর্ডিন্যান্স, দ্য পোর্ট অ্যাক্ট, ১৯৮০ ও পোর্ট রুল ১৯৬৬ অনুযায়ী, দেশের সব নদীবন্দরের মালিক সংস্থাটি। এসব নদীবন্দরের রক্ষণাবেক্ষণ এবং নৌপথের বাধা দূর করার দায়িত্বও তাদের। আইনে আরো বলা আছে, বন্দর সীমানায় অন্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ঘাট পরিচালনা কিংবা অন্য কোনো কার্যক্রম পরিচালনা আইনবহির্ভূত। সংস্থাটি বলছে, ২০০৪ সালে একটি প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে নদীবন্দরের সীমানা বর্ধিত করা হয়। এরপর স্থানীয় সরকারের দখলে থাকা ২৩টি ঘাট বিআইডব্লিউটিএর মালিকানায় চলে আসে। কাগজে-কলমে এখন এসব ঘাটের মালিক সংস্থাটি। কিন্তু স্থানীয় সরকারের সংস্থাগুলো তাদের কাছে মালিকানা হস্তান্তর করছে না।
বিআইডব্লিউটিএর বন্দর বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বিবদমান ২৩টি ঘাট আটটি নদীবন্দরের অন্তর্ভুক্ত। এর মধ্যে রয়েছে ঢাকা নদীবন্দরের পাঁচটি, মুন্সীগঞ্জের মীরকাদিম নদীবন্দরের দুটি, কিশোরগঞ্জের ভৈরব নদীবন্দরের একটি, খুলনা নদীবন্দরের সাতটি, চাঁদপুর নদীবন্দরের পাঁচটি, চট্টগ্রামের মিরসরাই নদীবন্দরের একটি, কুড়িগ্রামের বাঘাবাড়ী নদীবন্দরের একটি এবং শরীয়তপুরের শিমুলিয়া নদীবন্দরের একটি ঘাট। দেশের ২৩টি নৌঘাট নিয়ে স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে বিরোধ চলছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ)। ২০০৪ সালে বিআইডব্লিউটিএর পক্ষ থেকে বিরোধ নিরসনের নানা উদ্যোগ নেয়া হলেও এখনো এর সুরাহা হয়নি। ফলে দীর্ঘ সময় ধরে এসব ঘাটের অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়নি। গড়ে ওঠেনি উন্নত যাত্রীসেবাও।
তবে স্থানীয় সরকার প্রশাসন বলছে, এসব ঘাটের মূল মালিক জেলা প্রশাসক ও দখলে থাকা সংস্থাগুলো। দেশে বিদ্যমান ৩৬টি নদীবন্দরের অন্তর্ভুক্ত ৪৫৭টি ঘাট ও পয়েন্টের মধ্যে ওই ২৩টি ঘাট স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন সংস্থাই পরিচালনা করছে ও ইজারা দিচ্ছে। এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, কোনো কোনো জেলার একমাত্র আয়ের উৎসই এসব ঘাট। তারা ঘাটের উন্নয়ন করেছেন, যাত্রীসেবা নিশ্চিত করেছেন। এখন হঠাৎ করে বিআইডব্লিউটিএ এসে বলবে, ঘাটের মালিক আমি, তা তো হবে না। ঘাটগুলো যাদের দখলে আছে তারাই বৈধ মালিক।
তবে এসব ঘাট থেকে ইজারার মাধ্যমে স্থানীয় সরকারের সংস্থাগুলো আয় করলেও দৃশ্যমান কোনো উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করেনি বলে অভিযোগ করেছেন বিআইডব্লিউটিএর বন্দর বিভাগের কর্মকর্তারা। এতে সেবা না পেয়ে যাত্রীরা নানা হয়রানির শিকার হচ্ছে বলেও অভিযোগ তাদের। সংশ্লিষ্ট নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, আগে বিবদমান ২৩টি নৌঘাটের মালিকানায় ছিল স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন সংস্থা। পরবর্তী সময়ে বিআইডব্লিউটিএর নদীবন্দরের সীমানা বাড়ানো হলে ওই ২৩টি ঘাটের মালিকানা নিয়ে বিরোধ দেখা দেয়। এ নিয়ে ২০০৪ সাল থেকে বিভিন্ন সভা ও চিঠি চালাচালি করেও কোনো সমাধানে আসা যায়নি। সর্বশেষ গত বছরের ১৯ নভেম্বর সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য একটি সভা ডাকা হয়। ওই সভায় নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ঘাট ও পয়েন্ট নিয়ে বিআইডব্লিউটিএর সঙ্গে জেলা পরিষদ, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ এবং বাংলাদেশ রেলওয়ের সঙ্গে যে বিরোধ রয়েছে তা নিষ্পত্তি জরুরি। এ বিষয়ে তিনি সংশ্লিষ্টদের মতামত আহ্বান করেন।
সভায় উপস্থিত বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তারা নিজেদের দাবির পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন। বেশির ভাগ সংস্থার কর্মকর্তাদের যুক্তি ছিল, এ ঘাটগুলোই তাদের একমাত্র আয়ের উৎস। হস্তান্তর করলে তাদের আয় বন্ধ হয়ে যাবে। তবে আইনিভাবে এ বিষয়গুলো সুরাহা হওয়া দরকার বলেও মন্তব্য করেন অনেকে। এ প্রসঙ্গে তৎকালীন চট্টগ্রাম বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার এবিএম আজাদ বলেন, এ সভার আগেও বিষয়টি নিয়ে তিনটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা হয়েছে। বিরোধপূর্ণ এসব ঘাট নিয়ে বিভিন্ন সংস্থার পৃথক পর্যবেক্ষণ রয়েছে। বিরোধ নিষ্পত্তি হওয়ার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সুষ্ঠু আলোচনার মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান হওয়া জরুরি। কেননা বিআইডব্লিউটিএ এবং বিরোধে জড়িয়ে পড়া সংস্থাগুলোর সংশ্লিষ্ট আইন একটি আরেকটির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। কিছু আইনি জটিলতা আছে স্বীকার করে তিনি বলেন, প্রয়োজনে বিআইডব্লিউটিএ এবং বিরোধে জড়িয়ে পড়া সংস্থাগুলোর আইন সংশোধন করে হলেও এ বিষয়ে মীমাংসায় আসা জরুরি। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিএর পরিচালক (বন্দর ও পরিবহন) কাজী ওয়াকিল নওয়াজ বলেন, আইন অনুযায়ী এ ঘাটগুলোর মালিক বিআইডব্লিউটিএ। কিন্তু বিভিন্ন সংস্থা ঘাটগুলো এখনো আমাদের বুঝিয়ে দেয়নি। উল্টো আমাদের বিরুদ্ধেই মামলা করে রেখেছে। ঘাটগুলো বুঝে পেতে বিআইডব্লিউটিএর প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com