মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২:১৮ পূর্বাহ্ন

বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমা অব্যাহত

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় সোমবার, ২২ নভেম্বর, ২০২১

বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম আরো কমেছে। এক দিনের ব্যবধানে অপরিশোধিত তেলের দর ব্যারেলপ্রতি ৭৬.১০ ডলারে নেমে এসেছে। এ দর গত দুই মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম। সিএনএনের প্রতিবেদনে জানানো হয়, যুক্তরাষ্ট্র ও চীন সংরক্ষিত তেল বাজারে ছাড়ায় বিশ্ববাজারে পণ্যটির দামে পতন লক্ষ করা যাচ্ছে। শনিবার অপরিশোধিত ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (ডব্লিউটিআই) ব্যারেলপ্রতি ৭৬ ডলার ১০ সেন্টে বিক্রি হয়েছে। আর ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম একই হারে কমে ৭৮ ডলার ৪৬ সেন্টে বিক্রি হয়েছে। গত শুক্রবার রয়টার্স ও সিএনএনের খবরে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ও চীন সংরক্ষিত তেল বাজারে ছাড়ায় বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমতে শুরু করেছে। এদিন জ্বালানি তেলের দর ব্যারেলপ্রতি ৮০ ডলারে নেমে এসেছিল। এর আগে ব্যারেলপ্রতি দাম ৮৫ ডলার ছাড়িয়ে গিয়েছিল। বর্তমানে ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (ডব্লিউটিআই) ও ব্রেন্ট অপরিশোধিত তেলের দর গত ছয় সপ্তাহের মধ্যে সবচেয়ে কম। জ্বালানি তেলের দাম কমার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে ধন্যবাদ দেওয়া হচ্ছে। জ্বালানিবিষয়ক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান রিস্ট্যাড এনার্জির বিজোরনার টনহাউজেন বলেন, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন। দেশ দুটি সংরক্ষিত তেল বাজারে ছাড়ায় দাম কমতে শুরু করেছে।
জানা যায়, কয়েকদিন আগে জো বাইডেন ও শি জিনপিংয়ের ভার্চুয়াল বৈঠকে বৈশ্বিক জ্বালানি তেল সরবরাহের বিষয়ে আলোচনা হয়। বিশেষ করে বাইডেন সংরক্ষণ করা তেল বাজারে ছাড়তে চীনের প্রেসিডেন্টকে অনুরোধ জানান। এরপরই দেশ দুটির সমন্বিত পদক্ষেপের পর লাখো ব্যারেল তেল বাজারে আসে।
তবে যুক্তরাষ্ট্র যে কেবল চীনকেই সংরক্ষিত রাখা তেলের ব্যবহার বাড়াতে বলেছে তা নয়, একই অনুরোধ করা হয়েছে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও ভারতের মতো বৃহৎ তেল ব্যবহারকারী দেশগুলোকেও। এর মধ্যে শুরুতেই চীন অনুরোধ রক্ষা করেছে। টনহাউজেন বলেন, বিনিয়োগকারীরা আশা করছেন ডিসেম্বরে ২০ থেকে ৩০ মিলিয়ন ব্যারেল তেল আসতে পারে। এটা হতে পারে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন থেকে কিংবা আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থার বৃহত্তর সমন্বিত পদক্ষেপের মাধ্যমে। তবে সংরক্ষিত তেল ছাড়ে দীর্ঘ সময়ের জন্য সামগ্রিক চিত্র পরিবর্তন নাও করতে পারে। চীন-যুক্তরাষ্ট্রের চেষ্টাকে ‘অনর্থক’ বলছে ভারত : বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমাতে চীন-যুক্তরাষ্ট্রের প্রচেষ্টাকে অনর্থক বলে দাবি করেছে ভারত। তাদের মতে, দেশের মজুত থেকে তেল ব্যবহার বিশ্ববাজারে দামের ওপর খুব সামান্যই প্রভাব ফেলবে। বুধবার ভারতের তেলমন্ত্রী হরদ্বীপ সিং পুরি ব্লুমবার্গ টিভিকে বলেন, কৌশলগত তেল মজুত কখনোই এমন পরিস্থিতির জন্য ছিল না … যদি ভূমিকম্প হয়, বিশ্বজুড়ে যুদ্ধের প্রাদুর্ভাব হয় এবং তেল সরবরাহ বন্ধ থাকে, এটি তেমন কোনো দুর্যোগকালীন পরিস্থিতির জন্য। টাইমস অব ইন্ডিয়ার দাবি, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে নিজ দেশে বেশ চাপের মুখে রয়েছেন বাইডেন। সেই চাপ কমানোর পাশাপাশি তেলের দাম কমানোর আহ্বানে সাড়া না দেওয়া ওপেক প্লাসকে (ওপেকভুক্ত ১৫ দেশ ও রাশিয়া) বিশেষ বার্তা পাঠানোর উদ্দেশে এশীয় দেশগুলোকে তেলের মজুত ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
আন্তর্জাতিক বাজার পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, ইউরোপে কভিড সংক্রমণ আবার নতুন করে ভয়াবহ রূপ নেয়ায় মহাদেশটিতে পণ্যটির চাহিদা নিয়ে নতুন করে সংশয় তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে বৃহৎ দুই অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্র ও চীন এখন বাজার থেকে সংগ্রহের পরিবর্তে মজুদকৃত জ্বালানি তেল ব্যবহারে মনোযোগ দিয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে নি¤œমুখী হয়ে উঠেছে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বাজার সূচক।
নিউইয়র্ক মার্কেন্টাইল এক্সচেঞ্জে (নিমেক্স) গত সপ্তাহে জানুয়ারিতে সরবরাহের চুক্তিতে মার্কিন বাজার আদর্শ ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের (ডব্লিউটিআই) দাম কমেছে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ। শুক্রবার বাজারের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে চুক্তিটির অধীনে ডব্লিউটিআইর মূল্য স্থির হয়েছে প্রতি ব্যারেল ৭৫ ডলার ৯৪ সেন্টে। আগের দিনের তুলনায় হ্রাস পেয়েছে ব্যারেল ২ ডলার ৪৭ সেন্ট বা ৩ দশমিক ২ শতাংশ। আইসিই ফিউচার্স ইউরোপে গত সপ্তাহে জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক বাজার আদর্শ ব্রেন্টের দাম কমেছে প্রায় ৪ শতাংশ। শুক্রবার জানুয়ারিতে সরবরাহের চুক্তিতে পণ্যটির বাজার স্থির হয়েছে প্রতি ব্যারেল ৭৮ ডলার ৮৯ সেন্টে। দিনব্যাপী লেনদেনে পণ্যটির দাম কমেছে ২ দশমিক ৯ শতাংশ বা ব্যারেলে ২ ডলার ৩৫ সেন্ট। এর আগে আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দামে ঊর্ধ্বমুখিতার প্রেক্ষাপটে দেশে ডিজেল ও কেরোসিনের মূল্য বাড়িয়েছিল সরকার। গত ৩ নভেম্বর আগের চেয়ে ১৫ টাকা বাড়িয়ে জ্বালানি পণ্য দুটির মূল্য লিটারপ্রতি ৮০ টাকা করে নির্ধারণের ঘোষণা দেয় সরকার। ওই সময়ে বলা হয়েছিল, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমলে দেশের বাজারেও ডিজেল ও কেরোসিনের মূল্য হ্রাস করা হবে। তবে জ্বালানি খাতসংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, বাজারের এক সপ্তাহের গতিপ্রকৃতির ভিত্তিতে মূল্য সংশোধন করলে সেটি টেকসই কোনো সিদ্ধান্ত হবে না। এক্ষেত্রে কয়েক মাস ধরে মূল্যের নি¤œগতি স্থিতিশীলভাবে অব্যাহত রয়েছে কিনা, সে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করা জরুরি।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ বলেন, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমছে। সেটি আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। তবে যে পরিমাণে দাম কমছে, তা শতাংশের হিসেবে খুব বেশি নয়। মাসব্যাপী এ ধারা অব্যাহত থাকলে একটা সিদ্ধান্তে আসা যাবে হয়তো। আমরা জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক ওঠানামা সম্পর্কে জ্বালানি বিভাগকে নিয়মিতভাবে জানাচ্ছি। সরকার যে সিদ্ধান্ত নেবে, সে অনুযায়ী আমরা বাস্তবায়ন করব। এর আগে বিশ্ববাজারে কয়েক মাস ধরে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম অব্যাহত আকারে বেড়েছে। একপর্যায়ে প্রায় সব প্রধান বাজার আদর্শেই তা ব্যারেলপ্রতি ৯০ ডলার ছুঁয়ে যায়। বৈশ্বিক শিল্পোৎপাদন খাত কভিডের অভিঘাত কাটিয়ে চাঙ্গা হয়ে ওঠার পরিপ্রেক্ষিতে এ সময় সব খানেই জ্বালানি তেলের চাহিদা বেড়েছে। চাহিদা বাড়লেও এ সময় বিভিন্ন দেশের বৃহৎ উত্তোলনকারী কোম্পানিগুলো উত্তোলন বাড়ায়নি। চাহিদা ও উত্তোলনের মধ্যকার এ অসামঞ্জস্যই বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের মূল্যকে করে তোলে ঊর্ধ্বমুখী। দেশেও এরই পরিপ্রেক্ষিতে ডিজেল ও কেরোসিনের মূল্য বাড়ানোর ঘোষণা দেয় সরকার। মূল্যবৃদ্ধির সময়ে দেয়া ঘোষণায় জ্বালানি বিভাগ জানিয়েছিল, আন্তর্জাতিক বাজার থেকে অতিরিক্ত মূল্যে ক্রয় করে আগের দামে সরবরাহ অব্যাহত রাখলে বিপিসির লোকসান বেড়ে যেত। ডিজেল ও কেরোসিনের মূল্যবৃদ্ধি দেশের জ্বালানিনির্ভর খাতগুলোয় অস্থিরতা তৈরি করে। যানবাহনের ভাড়া বাড়ে। একই সঙ্গে বেড়ে যায় নিত্যপণ্যের দামও। তবে সরকারের ওই ঘোষণার দুই সপ্তাহ যেতে না যেতেই বিশ্ববাজারে আবারো নি¤œমুখী হয়ে উঠেছে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম।
এর পরিপ্রেক্ষিতে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা অধ্যাপক ম তামিম মনে করছেন, ডিজেল ও কেরোসিনের মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণা দেয়ার আগে আরো পর্যবেক্ষণের প্রয়োজন ছিল। তিনি বলেন, ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বাড়ানোর আগে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রবণতা একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করা দরকার ছিল। এখন দাম কমলেও অর্থনীতিতে যে প্রভাব পড়ার কথা, সেটি তো পড়েছে। বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। যানবাহনের ভাড়া বৃদ্ধিসহ নানাভাবে মাশুল দিতে হচ্ছে ভোক্তাদের। এখন সরকার জ্বালানি তেলের মূল্য কমালেও অন্য কিছুর দাম কমানো সম্ভব নয়। বরং দাম কমালে শুধু ব্যবসায়ীদেরই সুবিধা হবে। তবে এক্ষেত্রে সরকার জ্বালানি তেলের মূল্য না কমিয়ে কিছুটা মুনাফা করে নিয়ে জনগণকে অন্য জায়গায় সুবিধা দিতে পারে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com