সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার অবস্থা সঙ্কটাপন্ন বলে সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়। রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার অবস্থা ‘ভেরি ক্রিটিক্যাল’ বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গত ২৪ নভেম্বও গতকাল বুধবার দুপুরে নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ে এক যৌথসভা শেষে তিনি এ কথা জানান। মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার অবস্থা ভেরি ক্রিটিক্যাল। ডাক্তার সাহেবরা মনিটরিং করছেন। তারা তাদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা দিচ্ছেন।’ তিনি বলেন, ‘সরকার গত তিন বছরে বেগম খালেদা জিয়াকে কোনো চিকিৎসা না দিয়ে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে। সরকার গণতন্ত্রকে হরণ করার জন্য এ ক্যারিশম্যাটিক নেত্রীকে বন্দী করে রেখেছে।’ এদিকে গত ২৩ নভেম্বর বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে একটি মহল অসৎ উদ্দেশ্যে গুজব ছড়াচ্ছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপির মহাসচিব। গুজবে কান না দিয়ে তার সাথে যোগাযোগ করার কথা বলেন তিনি।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে যৌথ সভায় অন্যদের মধ্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুস সালাম, উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান, দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু, উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল ইসলাম, যুবদলের সভাপতি সাইফুল ইসলাম নীরব, সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবুল, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদার স্বাস্থ্যের উন্নতি নেই: রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দলের চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকলেও তার মনোবল শক্ত আছে বলে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। একইসঙ্গে তিনি এ-ও বলেছেন, বেগম জিয়ার উন্নত চিকিৎসা কেবল যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য বা জার্মানির মতো দেশগুলোতেই সম্ভব। গত মঙ্গলবার (২৩ নভেম্বর) রাতে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন। মির্জা ফখরুল বলেন, ম্যাডামের শক্ত মনোবলের কারণেই চিকিৎসকরা আশাবাদী, তিনি সুস্থ হয়ে আমাদের মাঝে ফিরে আসবেন।
তিনি বলেন, দেশে চিকিৎসকরা খালেদা জিয়াকে সর্বোচ্চ চিকিৎসা দিচ্ছেন। কিন্তু এখানে তার চিকিৎসা সম্ভব নয়। কালবিলম্ব না করে অবিলম্বে বিদেশে পাঠানো দরকার। উনার মেডিকেল বোর্ড স্পষ্ট করে বলেছে যে, ম্যাডামকে অ্যাডভান্স চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং জার্মানিতে পাঠাতে হবে। অতিদ্রুত তাকে বিদেশে পাঠানো জরুরি। খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, চিকিৎসকদের কাছে থেকে সবশেষ তথ্য জেনেছি, ম্যাডামের ফারদার ই¤প্রুভ হয়নি। ভালো কিছুই হয়নি তার। তার অবস্থা এখনো আগের মতোই রয়েছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির যাবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি যাবে না। এটা পরিষ্কার করে বলছি, আমরা এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাচ্ছি না।
খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য না পাঠালে বিএনপির সংসদ সদস্যরা পদত্যাগ করার ইঙ্গিত করেছে- এ বিষয়ে জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, তাদের সংসদ থেকে পদত্যাগের বিষয়টি দলীয় সিদ্ধান্ত। তারা তো বিএনপির সংসদ সদস্য। দল যদি মনে করে, তাহলে তারা পদত্যাগ করবে।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য বিএনপির পক্ষে থেকে প্রধানমন্ত্রী কিংবা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে কি না জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব বলেন, আনুষ্ঠানিকভাবে তো আমরা প্রতিটি অনুষ্ঠান থেকে কথাবার্তা বলছি। সেগুলো তো সরকারের কাছে যাচ্ছে। তবে, এই প্রধানমন্ত্রী কিংবা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিনি। শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়ার দাবিতে চলমান আন্দোলনের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব বলেন, হাফ ভাড়ার দাবি তো যৌক্তিক। আমরা যখন ছাত্র ছিলাম তখন এয়ারে ১১৫ টাকা ভাড়ায় ঢাকা থেকে করাচি গিয়েছি। বাসেও হাফ ভাড়া দিয়েছি।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ফখরুল জানান, ম্যাডামের চিকিৎসকেরা কথা বলবেন না। রোগীর তথ্য নিয়ে কথা বলার বিষয়টি তাদের পেশাগত এথিক্সে নেই। সব দায়িত্ব নিয়ে বলছি, অবিলম্বে ম্যাডামকে কালবিলম্ব না করে বিদেশে পাঠানো দরকার। দেশনেত্রীর জীবন অত্যন্ত মূল্যবান। এত বেশি মূল্যবান যে, গণতন্ত্রের উন্নয়নের জন্য, স্থিতিশীল অবস্থার জন্য তার সুস্থ হয়ে ফিরে আসা জরুরিভাবে দরকার। খালেদা জিয়াকে সরকারের ব্যক্তিরা কটূক্তি করেন বলে অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, এমন একটা রাষ্ট্র আমাদের গড়ে তোলা উচিত যে রাষ্ট্রে গণতন্ত্রের চর্চা হবে, সুন্দর সমাজ হবে। আগামী ফেব্রুয়ারিতে বতর্মান নিবাচন কমিশনের মেয়াদ শেষে নতুন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতির আহ্বানে সংলাপে বিএনপি যাবে কি না, এমন প্রশ্নে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা এই সংলাপে যাবো না। এই সরকারের অধীনে আমরা নির্বাচনেও যাবো না।
বিকেলে হিমোগ্লোবিন কমে গেলেও রাতে পূর্বের অবস্থায় খালেদা: মঙ্গলবার (২৩ নভেম্বর) সন্ধ্যার দিকে হাসপাতালের সিসিইউতে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার হিমোগ্লোবিন কমে যায়। তবে চিকিৎসকরা রক্ত দেওয়ার পর স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে তার শরীর। কিছুক্ষণ আগে তিনি হেঁটেই ওয়াশরুম ব্যবহার করেছেন। গত মঙ্গলবার রাত ১১. ১২ মিনিটে খালেদা জিয়াকে দেখে এসে তার কেবিন ব্লকের সামনে দাঁড়িয়ে ঢাকা পোস্টের সঙ্গে আলাপকালে এ তথ্য জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এর আগে, মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়। এ পরিস্থিতিতে নানা ধরনের কথা ছড়িয়ে পড়ে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে কয়েকজন নেতাও বসুন্ধরার এভারকেয়ার হাসপাতালে তার প্রকৃত অবস্থা জানতে চলে আসেন। তবে নিয়মিত পরিদর্শনে এদিন রাত ১০টার দিকে হাসপাতালে আসেন বিএনপি মহাসচিব। রাতে গুলশানে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি জানিয়েছিলেন, বেগম জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও জার্মানিতে নেওয়ার বিকল্প নেই।
রাতে সরেজমিনে হাসপাতালে এসে বিএনপির কয়েকজন নেতাকে দেখা গেছে। তাদেরও উদ্বিগ্ন দেখা যায়। পরে রাত ১১. ১১ মিনিটে বিএনপি মহাসচিব এ প্রতিবেদককে বলেন, আমি প্রায় এক ঘণ্টা ছিলাম ম্যাডামের সিসিইউতে। সেখানে ডা. এফএম সিদ্দিকীসহ অন্য চিকিৎসকরা আছেন। বিকেলের দিকে ম্যাডামের হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ায় শরীরের অবস্থা ফ্লাকচুয়েট হয়েছিল। পরে উনাকে রক্ত দেওয়া হয়। এখন আগের অবস্থায় আছেন তিনি।
হাসপাতালে কেবিন ব্লকে বসে কথা হয় বিএনপির ঢাকা মহানগর (উত্তর) আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ম্যাডামের অবস্থা ভালো নয়। তার উন্নত চিকিৎসা দরকার। দলের মহাসচিব রাতেই সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ম্যাডামের এখন বিদেশে নেওয়া ছাড়া বিকল্প নেই। দেশের চিকিৎসা দিয়ে তাকে বাঁচানো সম্ভব নয়। পরে রাত সোয়া ১১টার দিকে বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গে হাসপাতাল ত্যাগ করেন তিনি।