বুধবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:২৭ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
বিএফইউজে সভাপতি রুহুল আমিন গাজী আর নেই সংস্কারে সরকারকে সহযোগিতা করা হবে যেন ১৮ মাসের মধ্যে নির্বাচন হতে পারে: সেনাপ্রধান দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূতের সাথে বিএনপির বৈঠক টাকা ছাপালে সাময়িক স্বস্তি মিলবে, সমস্যার সমাধান হবে না: গভর্নর নতুন নারী প্রধানমন্ত্রী পেল শ্রীলঙ্কা চকরিয়ায় যৌথবাহিনীর অভিযান চলাকালে সন্ত্রাসী হামলায় সেনা কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট তানজিম ছরোয়ার নির্জন নিহত মানিকগঞ্জে প্রতিবন্ধিতা বিষয়ক সভা নকলার নবাগত ওসিকে জামায়াতের ফুলেল শুভেচ্ছা পিরোজপুর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব গাজী ওয়াহিদুজ্জামান লাভলু’র বিরুদ্ধে নানা ধরনের অপ্রপ্রচারের অভিযোগ শ্রীমঙ্গলে মিটার টেম্পারিং করে গ্যাস চুরির দায়ে মেরিগোল্ড সিএনজি পাম্প থেকে সংযোগ বিচ্ছিন্ন

সংসারে আয় বাড়াতে কুমড়োবড়ি

সোহেল রানা মহাদেবপুর (নওগাঁ) :
  • আপডেট সময় রবিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২১

সারাদেশে সুস্বাদু কুমড়ো বড়ির ভরা মৌসুম এখন। মূলত: চাপাইনবাবগঞ্জ আর নওগাঁ জেলার সীমান্তবর্তী পোরশা ও সাপাহার অঞ্চলের মানুষের মধ্যে ঐতিহ্যবাহী প্রোটিনযুক্ত মাসকলাইয়ের রুটি খাওয়ার প্রচলন রয়েছে বছরজুড়ে। যারা ভারত থেকে একচেঞ্জ করে এদেশে এসেছেন তাদের দেখাদেখি অন্যরাও মজা করে খান এই রুটি। এই মাসকলাই দিয়েই তৈরি হয় আরেক সুস্বাদু খাবার কুমড়ো বড়ি। তবে শীত এলেই এর কদর বাড়ে। নওগাঁর গ্রামাঞ্চলে ঘরে ঘরে এখন তৈরি হচ্ছে কুমড়ো বড়ি। কেউ নিজের পরিবারের জন্য, আবার কেউ বাণিজ্যিকভাবে তৈরি করে হাটে বাজারে বিক্রি করছেন। কুমড়ো বড়িতেই চলছে কারো কারো সংসার। শুক্রবার (২৭ নভেম্বর) সকালে নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার রাইগাঁ ইউনিয়ন সদরের মাতাজীহাটে গিয়ে দেখা যায় পাকা রাস্তার পাশেই চলছে কুমড়ো বড়ি তৈরির যাবতীয় কাজ। কেউ কুমড়ো আর মাসকলাইয়ের আটা মিশিয়ে ফেটিয়ে নিচ্ছেন, কেউ চাটাইয়ে বড়ি দিচ্ছেন, কেউ কাঁচা বড়ি শুকাতে দিচ্ছেন, আবার কেউ শুকানো বড়ি বাজারে নেয়ার কাজ করছেন। কাজের তদারকি করছিলেন এক গৃহবধূ। নাম জানালেন মাধবী রাণী মহন্ত(৫০)। তার স্বামী প্রফুল্ল চন্দ্র মহন্ত রাস্তার আরেক পাশে কুমড়ো আর মাসকলাইয়ের আটা ফেটানোর কাজ করছিলেন। মাধবী জানালেন, কুমড়ো বড়ি তৈরি করা খুবই সহজ। বাজার থেকে ৯৫ টাকা কেজি দরে মাসকলাই আর ৩০/৪০ টাকায় কুমড়ো কিনে আনেন। কলাই পানিতে ভিজিয়ে রাখেন আর কুমড়ো কেটে কাটাচামচ দিয়ে কুড়ে নেন। কুমড়ো কুচির ভর্তা তৈরি করে পানি ঝরানোর জন্য পরিস্কার কাপড়ে বেঁধে চালের বাতায় ঝুলিয়ে রাখা হয়। ভিজে নরম হওয়া মাসকলাই সনাতন পদ্ধতির জাঁতায় পিষে আটা বানানো হয়। জাঁতায় পিষা আটায় আঠা হয় বেশি। এখন অবশ্য অনেকে আটাকোটা মেশিনেই মাসকলাই পিষে নেন। মেশিনের আটায় বানানো বড়ির স্বাদ কম হয়। একটা বড় কুমড়ার সাথে ৫ কেজি মাসকলাইয়ের আটা, কালোজিরা আর বিভিন্ন মশলা মিশিয়ে পানি দিয়ে ভালভাবে ফেটিয়ে নিতে হয়। যত বেশি ফেটানো যায় তত ভাল বড়ি হয়। রাস্তার অপর পাশে ফেটানো মিকচার বাঁশের চাটাইয়ের উপর ছোট ছোট করে বিছিয়ে বড়ি বানাচ্ছিলেন সুজালা রাণী মহন্ত(৪০)। তিনি জানালেন ৫ কেজি মাসকলাইয়ের আটার বড়ি শুকিয়ে সাড়ে ৩ কেজি হয়। প্রতিকেজি বড়ি বিক্রি হয় ৩০০ টাকায়। রাস্তার আরেক পাশে আতুড়া গ্রাম। সেখানে অসংখ্য চাটাইয়ে দেয়া বড়ি উঁচু মাচানে রেখে রোদে শুকাচ্ছিলেন সুদর্শন চন্দ্র মহন্তের স্ত্রী শংকরী রাণী মহন্ত(৫০)। তিনি জানালেন কেউ কেউ একটি কুমড়োর সাথে ১০ কেজি মাসকলাইয়ের আটা মেশান। স্থানীয়রা জানান, কেউ কেউ ৩০ টাকা কেজির গমের আটাও মেশান। কিন্তু এই মহল্লার বড়ি তৈরির কারিগররা তা অস্বীকার করেন। পাকা রাস্তার পূর্বপাশে শুকানো বড়ি বাজারে বিক্রির জন্য বাছাই করছিলেন সুজালার স্বামী চঞ্চল কুমার মহন্ত। তিনি জানালেন, এসব বড়ি নিজ এলাকা ছাড়াও উপজেলার পীরগঞ্জ হাট, পতœীতলা উপজেলার গগণপুর হাট, ধামইরহাট উপজেলার ফতেপুর হাট প্রভৃতি স্থানে বিক্রি করেন। শীতের শুরুতেই শুরু হয় তাদের এ ব্যবসায়। আশি^ন, কার্তিক, অগ্রহায়ণ আর পৌষ এই ৪ মাস জমজমাট বিক্রি হয় কুমড়ো বড়ি। প্রতিদিন তারা আধামণ থেকে ৬ ধারা (৩০ কেজি) পর্যন্ত বড়ি তৈরি করেন। তাদের সাথে বড়ি তৈরির কাজ করেন অমল ও তার স্ত্রী নমিতা, অন্তর ও তার স্ত্রী সমাপ্তি, কাজল ও তার স্ত্রী সাথী। মেয়েরা বড়ি তৈরি করেন আর পুরুষেরা বিক্রি করেন। শংকরী রাণী জানালেন, তার ছেলে সুজন বিভিন্ন হাটে নিয়ে গিয়ে বড়ি বিক্রি করে। বড়ি বিক্রি করে যে লাভ হয় তা দিয়ে তারা স্বামী-স্ত্রী, ছেলে, ছেলের বউ আর এক নাতনির সংসার চলে যায়। বড়ির মৌসুম পার হলে তারা কৃষি কাজ করেন। এই বড়ি পল্লীতেই দেখা হলো রাইগাঁ ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান লুৎফর রহমানের সাথে। পাশেই বাড়ি তাঁর। তিনি জানালেন, দীর্ঘদিন ধরে এই পল্লীর বাসিন্দারা কুমড়ো বড়ি তৈরির কাজ করে আসছেন। কিন্তু একাজে তাদেরকে সহযোগিতা করেননি কেউ। এই কম্পিউটারের যুগেও তাদেরকে রাস্তার পাশে খোলা জায়গায় ধূলা ময়লার মধ্যে এ খাবার তৈরির কাজ করতে হয়। শুকাতে হয় খোলা জায়গাতেই। এলাকার প্রায় ঘরে ঘরে এই খাবার তৈরি হলেও পরিকল্পিত মানসম্মত পরিবেশে বাণিজ্যিকভাবে কুমড়ো বড়ি তৈরির কোন কারখানা গড়ে ওঠেনি।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com