মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:২৬ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
নতুন নারী প্রধানমন্ত্রী পেল শ্রীলঙ্কা চকরিয়ায় যৌথবাহিনীর অভিযান চলাকালে সন্ত্রাসী হামলায় সেনা কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট তানজিম ছরোয়ার নির্জন নিহত মানিকগঞ্জে প্রতিবন্ধিতা বিষয়ক সভা নকলার নবাগত ওসিকে জামায়াতের ফুলেল শুভেচ্ছা পিরোজপুর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব গাজী ওয়াহিদুজ্জামান লাভলু’র বিরুদ্ধে নানা ধরনের অপ্রপ্রচারের অভিযোগ শ্রীমঙ্গলে মিটার টেম্পারিং করে গ্যাস চুরির দায়ে মেরিগোল্ড সিএনজি পাম্প থেকে সংযোগ বিচ্ছিন্ন রাস্তা নেই সেতু নেই, নেই কোন স্কুল: উল্লাপাড়ার অবহেলিত গ্রামের নাম রশিদপুর নয়াপাড়া মোংলায় ইসলামী ব্যাংকের ব্যবসায়ীদের সাথে মতবিনিময় কালিয়ায় লুটপাট, ভাংচুর ও হুমকির বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের দাবিতে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান

টানা পতনের মুখে জ্বালানি তেলের দাম

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় বুধবার, ১ ডিসেম্বর, ২০২১

কয়েক সপ্তাহ ধরে টানা পতনের মুখে ছিল অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বাজারদর। এ পতনকে আরো অবশ্যম্ভাবী করে তোলে করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনের আবির্ভাব। গত সপ্তাহেও বিভিন্ন বাজার আদর্শে পণ্যটির দাম কমেছে ৮-১০ শতাংশ। এর মধ্যে শুক্রবার সাপ্তাহিক লেনদেনের শেষ দিনে দেড় বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় মূল্যহ্রাসের দেখা পায় অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক বাজার। সব মিলিয়ে সদ্যসমাপ্ত নভেম্বরে বিভিন্ন বাজার আদর্শে পণ্যটির গড় দরপতন হয়েছে প্রায় ২০ শতাংশ।
করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন আতঙ্কে শুক্রবার (২৬ নভেম্বর) বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমেছিলো ব্যারেলপ্রতি প্রায় ১০ মার্কিন ডলার। সেই ধারা অব্যাহত রয়েছে মঙ্গলবারও (৩০ নভেম্বর)।
অয়েল প্রাইস ডটকমের তথ্যমতে, মঙ্গলবার বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের বেঞ্চমার্ক ব্রেন্টের দাম কমেছে অন্তত ৩ দশমিক ৭৪ শতাংশ। এদিন বিকেলে ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ২ দশমিক ৭৫ ডলার কমে প্রতি ব্যারেল বিক্রি হয়েছে ৭০ দশমিক ৬৯ ডলারে। প্রায় একই পরিমাণে কমেছে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট বা ডব্লিউটিআই তেলের দামও। মঙ্গলবার এর দাম ৩ দশমিক ৪৭ শতাংশ, অর্থাৎ ২ দশমিক ৪৩ ডলার কমে প্রতি ব্যারেল বিক্রি হয়েছে ৬৭ দশমিক ৫২ ডলারে। এছাড়া হিটিং অয়েলের দাম কমেছে অন্তত ২ দশমিক ৬৫ ডলার বা ০.০৫৭ ডলার। মঙ্গলবার প্রাকৃতিক গ্যাসের দামও কমেছে। অয়েল প্রাইস ডটকমের তথ্যমতে, এদিন বিশ্ববাজারে প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম ৪ দশমিক ১৪ শতাংশ, অর্থাৎ ০.২০১ ডলার কমে গেছে। সিএনএন জানিয়েছে, ওমিক্রন আতঙ্কের প্রভাব পড়েছে আন্তর্জাতিক শেয়ারবাজারেও। মঙ্গলবার এশিয়া, ইউরোপ, আমেরিকা- প্রায় সবখানেই সূচক ছিল নিম্নমুখী। শেয়ারের দর হারানোয় সবার ওপরে রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার কসপি। মঙ্গলবার এর সূচক পড়ে গেছে অন্তত ২ দশমিক ৪ শতাংশ। জাপানের নিক্কেই ২২৫’র সূচক নেমেছে ১ দশমিক ৬ শতাংশ, একই অবস্থা হংকংয়ের হ্যাং সেং ইনডেক্সেরও। তবে সাংহাই কম্পোজিটের অবস্থা স্থিতিশীল দেখা গেছে।
গত সপ্তাহে ওমিক্রনের ধাক্কায় শেয়ারবাজারে বড় পতনের পর সোমবার কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছিল মার্কিন শেয়ারবাজার। তবে মঙ্গলবার আবারো নি¤œমুখী ধারায় ফিরেছে তারা। এদিন ডো জোনসের সূচক কমেছে ১ শতাংশ, এসঅ্যান্ডপি ৫০০’র সূচক কমেছে ০.৮ শতাংশ আর নাসদাকের সূচক কমেছে অন্তত ০.৪ শতাংশ।
অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বাজার পরিস্থিতি বর্তমানে কোন দিকে যাচ্ছে, সে বিষয়ে এখন পর্যন্ত কেউই নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছেন না। বাজার বিশ্লেষকদের মতে, বিষয়টি অনেকটাই নির্ভর করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) ওপর। করোনার ওমিক্রন ধরন সম্পর্কে বিস্তারিত জানার আগ পর্যন্ত জ্বালানি তেলসহ আন্তর্জাতিক পণ্য বাজারের ভবিষ্যৎ গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে নিশ্চিত কোনো পর্যবেক্ষণ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এজন্য ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে বাজারসংশ্লিষ্টদের সবাই এখন ওমিক্রন নিয়ে ডব্লিউএইচওর বিস্তারিত ব্যাখ্যার অপেক্ষায় রয়েছেন। এছাড়া ওপেক প্লাস জোটের উত্তোলনসংক্রান্ত সম্ভাব্য সিদ্ধান্ত, ইরানের পরমাণু চুক্তিসহ ভূরাজনৈতিক আরো অনেক বিষয় এখন জ্বালানি তেলের বাজার পরিস্থিতিতে বড় প্রভাবক হয়ে উঠেছে।
টানা কয়েকদিনের ব্যাপক পতনের পর বাজার সংশোধনের নিয়মে ভর করে সোমবার ফিউচার মার্কেটগুলোয় সাপ্তাহিক লেনদেনের প্রথম দিন শেষ হয়েছে কিছুটা ঊর্ধ্বমুখিতায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ওই সময় অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম সহসাই ঊর্ধ্বমুখী হয়ে উঠবে বলে বাজার বিশ্লেষণকারী সংস্থাগুলোর কোনো কোনোটি ভবিষ্যদ্বাণীও দিয়ে বসে। যদিও এর প্রতিক্রিয়ায় অধিকাংশ পর্যবেক্ষকই বলেছিলেন, সোমবারের দর বৃদ্ধির বিষয়টি সাময়িক। সামনের দিনগুলোয় জ্বালানি তেলের বাজারগতি কেমন হবে, তা নিয়ে এ মুহূর্তে স্পষ্ট কোনো বক্তব্য দেয়ার মতো পরিস্থিতি এখনো আসেনি। আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যটির দাম গতকাল আবারো নি¤œমুখী হয়ে উঠলে তাদের এ বক্তব্যের সমর্থন পাওয়া যায়। নিউইয়র্ক মার্কেন্টাইল এক্সচেঞ্জে (নিমেক্স) শুক্রবার একদিনে জ্বালানি তেলের মার্কিন বাজার আদর্শ ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের (ডব্লিউটিআই) দাম কমেছিল ১৩ শতাংশের বেশি। জানুয়ারিতে সরবরাহের চুক্তিতে এদিন পণ্যটির বাজার স্থির হয় প্রতি ব্যারেল ৬৮ ডলার ১৫ সেন্টে। সেখান থেকে সামান্য বেড়ে সোমবার দিন শেষে একই চুক্তিতে পণ্যটির বাজারমূল্য দাঁড়িয়েছে প্রতি ব্যারেল ৬৯ ডলার ৯৫ সেন্টে। সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ সময় অনুযায়ী গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় নিমেক্সে ডব্লিউটিআই বিক্রি হয়েছে প্রতি ব্যারেল ৬৮ ডলার ৩৮ সেন্টে। ওই সময় পর্যন্ত গতকালের লেনদেনে পণ্যটির দরপতনের হার ছিল ২ দশমিক ২ শতাংশ।
আইসিই ফিউচার্স ইউরোপ এক্সচেঞ্জে শুক্রবার জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক বাজার আদর্শ ব্রেন্টের দাম একদিনে কমেছিল ১২ শতাংশের কাছাকাছি। এদিন জানুয়ারিতে সরবরাহের চুক্তিতে পণ্যটির সাপ্তাহিক বাজার শেষ হয় প্রতি ব্যারেল ৭২ ডলার ৭২ সেন্টে। সোমবার সপ্তাহের প্রথম দিনশেষে পণ্যটির বাজারমূল্য স্থির হয়েছে ৭৩ ডলার ৪৪ সেন্টে। গতকাল সন্ধ্যায় একই চুক্তিতে পণ্যটির বাজারদর নেমে এসেছে ৭১ ডলার ৪৫ সেন্টে। দরপতনের হার ২ দশমিক ৭ শতাংশ।
ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট-সংক্রান্ত অনিশ্চয়তার পরিপ্রেক্ষিতে সামনের দিনগুলোয় অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বাজার পরিস্থিতি কেমন হবে সে বিষয়ে ধারণা নেই খোদ ওপেক প্লাস জোটের দেশগুলোরও। এর আগে জোটভুক্ত দেশগুলো প্রতি মাসে চার লাখ ব্যারেল করে বাড়ানোর মাধ্যমে উত্তোলন মহামারীপূর্ব পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য হাতে নিয়েছিল। তবে এ লক্ষ্য কোনো মাসেই পূরণ হয়নি। জোটভুক্ত বেশ কয়েকটি দেশকে এ সময় উত্তোলন বাড়াতে গিয়ে নানামুখী সংকটের মোকাবেলা করতে হয়েছে। অনিশ্চিত এ পরিস্থিতিতে ওপেক প্লাস এখন সরবরাহ কমিয়ে দেয়ার পথে হাঁটতে পারে বলে মনে করছেন বাজার পর্যবেক্ষকরা। স¤প্রতি যুক্তরাষ্ট্র নিজের মজুদ থেকে বাজারে সরবরাহ বাড়িয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় বাজারে জ্বালানি তেলের কাঙ্ক্ষিত মূল্য তুলে নিতে পারেনি ওপেক প্লাস।
ওপেকের ইকোনমিক কমিশন বোর্ড জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়াশিংটনের মিত্র কয়েকটি দেশ উত্তোলন বাড়ানোয় জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারির মধ্যে জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক সরবরাহে দৈনিক উদ্বৃত্তের পরিমাণ দাঁড়াবে চাহিদার চেয়ে প্রায় ১১ লাখ ব্যারেল বেশিতে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে বর্ধিত ওপেক প্লাস জোটের দুই শীর্ষস্থানীয় দেশ সৌদি আরব ও রাশিয়া উত্তোলন বাড়ানোর পরিকল্পনা থেকে সরে আসতে পারে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। সংশ্লিষ্ট এক সূত্রের বরাত দিয়ে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালও স¤প্রতি এ তথ্য জানিয়েছে। গত সপ্তাহেই সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছিল, সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) কয়েকটি দেশ সৌদি আরব ও রাশিয়ার সঙ্গে এ বিষয়ে একমত না-ও হতে পারে। তবে এ ধারণাকেও উল্টে দিয়েছে শুক্রবারের বাজার পরিস্থিতি। এর মধ্যেই আবার জ্বালানি তেলের উত্তোলন ট্রাম্প সরকারের আমলে যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত পুনর্নিষেধাজ্ঞার আগের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ইরান। তেহরান জানিয়েছে, বর্তমানে পরমাণু আলোচনার ভবিষ্যৎ যা-ই হোক, উত্তোলন বাড়াবে দেশটি।
পণ্যটির বাজারে এখন অনিশ্চয়তার আরেক বড় উৎস হয়েছে ওমিক্রন নিয়ে আতঙ্ক। ডব্লিউএইচও কভিডের নতুন ধরনটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানানোর আগ পর্যন্ত এ অনিশ্চয়তা কাটানোর কোনো সম্ভাবনা নেই বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান প্রাইস স্ট্রিটের এমডি রোরি জনসন স¤প্রতি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম এফটিকে এ বিষয়ে বলেছেন, করোনার নতুন এ ধরন জ্বালানি তেলের বাজারে আসলেই কতটা হুমকির কারণ হয়ে উঠবে, সে বিষয়ে এখনো বড় ধরনের প্রশ্ন রয়ে গিয়েছে। তবে বাজার এ তথ্যের জন্য অপেক্ষা করতে খুব একটা আগ্রহী নয়। ব্যবসায়ীদের মধ্যে এখন প্রবণতা দেখা দিয়েছে ‘আগে বিক্রি, তারপর অনুসন্ধান’। অতিরিক্ত এ বিক্রয়চাপই বাজারের নিম্নগতিকে আরো জোরালো করে তুলছে বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com