নিরাপদ সড়ক ও বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় জড়িতদের বিচারসহ ৯ দফা দাবিতে প্রতীকী লাশ নিয়ে মিছিল করেছে শিক্ষার্থীরা। গতকাল রোববার (৫ ডিসেম্বর) রাজধানীর শাহবাগ মোড় থেকে এ কর্মসূচি শুরু করে তারা। এসময় শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিতে চাইলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। পরে শিক্ষার্থীরা একটি মিছিল নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) দিকে যায় এবং সংক্ষিপ্ত মিছিল করে কর্মসূচি শেষ করে।
মিছিলে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সমন্বয়ক শ্রাবণ চৌধুরী, আরদিতা রায়, সাজ্জাদ হোসেন শুভ, জুয়েল মিয়াসহ বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। শিক্ষার্থীরা জানান, একের পর এক লাশের ভার তারা বইতে পারছে না। বাধ্য হয়ে তারা রাস্তায় নেমে কর্মসূচি করছে। তাদের মূল দাবি নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করতে হবে। দাবি আদায় না হলে এবং এ বিষয়ে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না নিলে তারা কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন।
শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবি: ১. বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো চালককে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ- দিতে হবে এবং এই বিধান সংবিধানে সংযোজন করতে হবে। ২. নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহার করে শিক্ষার্থীদের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে। ৩. ফিটনেসবিহীন গাড়ি রাস্তায় চলাচল বন্ধ ও লাইসেন্স ছাড়া চালকরা গাড়ি চালাতে পারবেন না। ৪. বাসে অতিরিক্ত যাত্রী নেওয়া যাবে না। ৯ দাবিতে প্রতীকী লাশ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মিছিল
৫. শিক্ষার্থীদের চলাচলে এমইএস ফুটওভারব্রিজ বা বিকল্প নিরাপদ ব্যবস্থা নিতে হবে। ৬. প্রতিটি সড়কে দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকায় স্পিডব্রেকার দিতে হবে। ৭. সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ছাত্রছাত্রীদের দায়ভার সরকারকে নিতে হবে। ৮. শিক্ষার্থীরা বাস থামানোর সিগন্যাল দিলে অবশ্যই থামিয়ে তাদের নিতে হবে। ৯. শুধু ঢাকা নয়, সারাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ ভাড়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
নভেম্বরে সড়কে ঝরেছে ৫৪ শিক্ষার্থীর প্রাণ: চলতি বছরের নভেম্বরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ও নটরডেম কলেজের দুজনসহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৫৪ জন শিক্ষার্থী সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন।
গত শনিবার এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন। সংগঠনটি সাতটি জাতীয় দৈনিক, পাঁচটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে। সংগঠনটি জানায়, নভেম্বর মাসে দেশে ৩৭৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় মোট নিহত হয়েছেন ৪১৩ জন এবং আহত হয়েছেন ৫৩২ জন। নিহতের মধ্যে নারী ৬৭ জন এবং শিশু ৫৮ জন এবং শিক্ষার্থী ৫৪ জন। এছাড়া এই সময়ে শুধুমাত্র ঢাকায় ১৪টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১৬ জন।
দেশে সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণ হিসেবে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, বেপরোয়া গতি, চালকদের বেপরোয়া মানসিকতা, অদক্ষতা ও শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা, বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট না থাকা, মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল, তরুণদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো, জনসাধারণের মধ্যে ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, বি আরটিএর সক্ষমতার ঘাটতি ও গণপরিবহন খাতে চাঁদাবাজিকে উল্লেখ করেছে সংগঠনটি।