বিশ্বব্যাপী আতঙ্ক ছড়ানো করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন ইতোমধ্যে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে শনাক্ত হয়েছে। সতর্কতা হিসেবে দিনাজপুরের হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে ভারত থেকে আসা পাসপোর্টযাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হলেও, স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য নিয়ে আসা ট্রাকচালক ও সহকারীদের পরীক্ষার আওতায় আনা হয়নি। শুধু তাদের তাপমাত্রা পরিমাপ করা হচ্ছে। এতে হিলি স্থলবন্দর এলাকায় ওমিক্রনের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে বলে দাবি স্থানীয়দের।
যদিও ওমিক্রন সংক্রমণ ঠেকাতে বন্দর দিয়ে যাত্রী গ্রহণ করছে না ভারত। বাংলাদেশি পাসপোর্টযাত্রীদের ‘বাই এয়ার’ বলে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। তবে হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে যাত্রী বহির্গমন শুরু না হলেও ভারত থেকে প্রতিদিন চার-পাঁচ জন করে পাসপোর্টযাত্রী দেশে ফিরছেন। করোনার নেগেটিভ সনদ নিয়ে দেশে ফেরার পরও তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষাসহ নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। অপরদিকে, স্থলবন্দর দিয়ে প্রতিদিন ১৮০ থেকে ২০০ পণ্যবাহী ভারতীয় ট্রাক দেশে ঢুকছে। যার সঙ্গে চালক ও সহকারী মিলিয়ে প্রায় ৪০০ জন আসে। তাদের তাপমাত্রা পরিমাপ, গাড়িতে জীবাণুনাশক স্প্রে করা হলেও ভারত-বাংলাদেশের কোথাও করোনার অ্যান্টিজেন টেস্ট করা হচ্ছে না। ভারতীয় ট্রাকচালকদের সংস্পর্শে বাংলাদেশি চালক ও শ্রমিকরা আসায় ওমিক্রন সংক্রমণের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।
ভারত থেকে হিলি স্থলবন্দরে পণ্য নিয়ে আসা ট্রাকচালক রনজিৎ কুমার ও বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেছেন, আমদানিকৃত পণ্য নিয়ে বাংলাদেশে আমরা যারা আসছি, তাদের প্রায় সবার টিকা নেওয়া আছে। তবে ভারত থেকে আসার পথে কোথাও করোনা পরীক্ষা করা হচ্ছে না। বাংলাদেশে ঢোকার পরও পরীক্ষা করা হয় না। আমাদের সঙ্গে করোনার নতুন ধরনের সংক্রমণ আসছে কিনা কিংবা আক্রান্ত কিনা, তা জানতে পারছি না। পরীক্ষা ছাড়া তো বলা সম্ভব না। আমরা কোন অবস্থায় বাংলাদেশে আসলাম এটা এ দেশের সংশ্লিষ্টরা যেমন জানতে পারলো না, তেমনি যখন বাংলাদেশ থেকে পণ্য খালাস করে ভারতে যাচ্ছি সে সময় টেস্ট না করায় ভারতের সংশ্লিষ্টরাও জানতে পারছে না।
তারা জানান, আগে যখন করোনার ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ ছিল তখন পরীক্ষা করা হলেও এখন আর করা হচ্ছে না। তবে ট্রাকচালকদের যদি করোনা টেস্ট করা হলে ভালো হতো। এতে তারা যেমন সুরক্ষিত থাকতেন, তেমনই অন্যরা সুরক্ষিত থাকতো। স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল হালিম বলেন, ভারতে করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে। ভারত থেকে আসা পাসপোর্টযাত্রীদের টেস্ট করা হচ্ছে। কিন্তু ভারত থেকে পণ্য নিয়ে আসা ট্রাকের চালক ও সহকারীদের টেস্টের আওতায় আনা হয়নি। তারা অবাধে বন্দরের ভেতরে বাংলাদেশি ট্রাকচালক ও শ্রমিকদের সঙ্গে মিশছেন। এতে আমরা হিলিবাসী করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনের ঝুঁকিতে রয়েছি। তাই আমাদের দাবি, ট্রাকচালকদের যেন করোনা পরীক্ষার আওতায় আনা হয়। তাহলে আমরা শঙ্কামুক্ত থাকবো।
হিলি স্থলবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন বলেন, করোনার মাঝেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য অব্যাহত রয়েছে। করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন ভারতে শনাক্ত হওয়ার পর থেকে উপজেলা প্রশাসন ও স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ থেকে যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, তা মেনেই বন্দরের কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। ভারতীয় ট্রাক বন্দরে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে জীবাণুনাশক স্প্রে করা হচ্ছে। চালকদের শরীরের তাপমাত্রা পরিমাপ করা হচ্ছে। বিশেষ ঝুড়ির মাধ্যমে ট্রাক থেকে কাগজ সংগ্রহ করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে তাদের টিকা দেওয়া হয়েছে কিনা সেটাও জানতে চাওয়া হয়বন্দরের ভেতরে নির্দিষ্ট স্থানে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখানে তাদের জন্য আলাদা ওয়াশরুমের ব্যবস্থা রয়েছে। তারা যেন সেখান থেকে বেরিয়ে যেতে না পারে সে জন্য নিরাপত্তারক্ষী নিয়োজিত আছে।
হাকিমপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিক্যাল কর্মকর্তা ডা. হুমায়ুন কবির বলেন, ভারতে ওমিক্রন শনাক্ত হওয়ায় আমরা হিলি স্থলবন্দরে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করেছি। ভারত থেকে দেশে ফেরা যাত্রীদের করোনা নেগেটিভ সনদ আছে কিনা দেখা হচ্ছে। দেশে আসার পর স্বাস্থ্য পরীক্ষাসহ তাদের নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। একই সঙ্গে ভারত থেকে পণ্য নিয়ে আসা ট্রাকচালকদের স্ক্রিনিংয়ের আওতায় আনা হচ্ছে। যদি কারও মাঝে লক্ষণ থাকে সেক্ষেত্রে আইসোলেশনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। কয়েকটি হোটেল প্রস্তুত করা হয়েছে। যেখানে তাদের কোয়ারেন্টিনে রাখা হবে।