‘আম পাকে বৈশাখে, কুল পাকে ফাগুনে/কাঁচা ইট পাকা হয় পোড়ালে তা আগুনে’ বরই পাকা নিয়ে সুকুমার রায় তাঁর ‘পাকাপাকি’ ছড়ায় এমনটাই বলেছিলেন। তবে টাঙ্গাইলের সখীপুরের সিদ্দিক হোসেনের বাগানের বরই অগ্রহায়ণ মাসেই পাকে। আগাম জাতের বরই তিনি প্রতি কেজি ১২০ থেকে ১৬০ টাকায় বিক্রি করেন। নভেম্বর মাসে তিনি প্রায় ১২ লাখ টাকার বরই বিক্রি করেছেন। তার ৩ হাজার গাছে প্রচুর বরই আসায় এ মৌসুমে তিনি কমপক্ষে ৫০ লাখ টাকার বরই বিক্রির আশা করছেন।
সিদ্দিক হোসেন সখীপুর উপজেলার নিজ গ্রাম টিকুরিয়া চালা ছাড়াও আশপাশের আরও ৪ গ্রামে মোট ২৭ একর জমিতে ৭টি টক বরইয়ের বাগান করেছেন। উপজেলার গড়বাড়ীতে পাঁচ একর, বিন্নাখাইরাতে ছয় একর, শিরীরচালায় ছয় একর, শ্রীপুরে তিন একর ও নিজ গ্রামের বাড়ির আশপাশের সাত একর জমিতে মোট ৩ হাজার বরইগাছ লাগিয়েছেন। এ বছর তার তিন হাজার গাছেই বরই ধরেছে।
সিদ্দিক হোসেন বলেন, কয়েকটি বাগানে বরইগাছের ফাঁকে-ফাঁকে উন্নত জাতের কমলা, মাল্টা, পেয়ারা, সফেদা, জাম্বুরা, ডালিম, বেল ও রামভুটানগাছ লাগিয়েছেন। বরইগাছ থেকে বরই তোলা শেষ হলে গোড়ার দিকে দুই ফুট পরিমাণ গাছ রেখে কেটে ফেলা হয়। ওই সময় বরইগাছের ফাঁকে বোনা ফল গাছ থেকেও ফলন পাওয়া যাবে। সম্প্রতি সিদ্দিকের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ১০ থেকে ১২ জন নারী ও পুরুষ শ্রমিক বাগান থেকে সংগ্রহ করা বরই বাছাই করে বস্তায় ভরছিলেন। বিকেলে সেগুলো তাঁর নিজস্ব পিকআপ ভ্যানে করে ঢাকার কারওয়ান বাজার, যাত্রাবাড়ী ও শ্যামবাজারে পাঠান। তার ৭টি বরইবাগানে ২০ জন নারী শ্রমিক ও ১০ জন পুরুষ শ্রমিক কাজ করেন।
বরই চাষে জড়িয়ে পড়ার গল্প বলতে গিয়ে সিদ্দিক হোসেন আরও বলেন, বিগত ১৯৯২ সালে তিনি এসএসসি পাস করেন। কলেজে ভর্তি হলেও আর পড়াশোনা হয়নি। ২০০৩ সালের দিকে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকায় যাওয়ার জন্য ৫ লাখ টাকা জমা দেন। দালাল চক্র তার টাকা নিয়ে উধাও হয়ে যায়। একপর্যায়ে ব্র্যাক থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ করে ‘বিকল্প নার্সারি’ নামে একটি নার্সারি গড়ে তোলেন। নার্সারি থেকে তার বেশ আয় হতে থাকে। ২০০৯ সালে তিনি নার্সারির মালিক হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর পুরস্কার লাভ করেন। এরপর তিনি আগাম জাতের বরই চাষে মনোযোগী হন। সিদ্দিক হোসেন জানান, ১০ বছর আগে তার বাড়িতে একটি আগাম জাতের বরইগাছ ছিল। ওই গাছ থেকেই তিনি পর্যায়ক্রমে কলম করে ৩ হাজার গাছ বুনেছেন। মৌসুম শুরু হওয়ার ২ মাস আগেই এই বরই পাকায় বাজারে এর বেশ চাহিদা থাকে। এখন বাজারে তিনি ১৬০ টাকা কেজি দরে বরই বিক্রি করছেন। ঢাকা শহরে এই বরই ২০০ থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কাকড়াজান ইউনিয়ন পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান দুলাল হোসেন বলেন, সিদ্দিকের বরইয়ের বেশ সুনাম। গ্রামের মানুষ তাকে বরই সিদ্দিক নামে চেনেন ও ডাকেন।
এ বিষয়ে সখীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিয়ন্তা বর্মন বলেন, সিদ্দিক হোসেন একজন সফল বরইচাষি। তার সাফল্য দেখে সখীপুরে শতাধিক ব্যক্তি বরই চাষ করছেন। তাদের মধ্যে কয়েকজন সফলও হয়েছেন।