সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:২১ অপরাহ্ন

মোরেলগঞ্জে শুটকি ব্যবসায় ধস: হতাশ সমুদ্রগামী জেলেরা

মোড়েলগঞ্জ (বাগেরহাট) প্রতিনিধি :
  • আপডেট সময় সোমবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২১

ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে ভেসে গেছে অর্ধকোটি টাকার মাছ

ঘূর্নিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে উপকূলীয় অঞ্চল বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে সমুদ্রগামী জেলে শুটকি ব্যবসায়ীদের ব্যবসায় ধস ভেসে গেছে অর্ধকোটি টাকার বিভিন্ন প্রজাতির শুটকি মাছ। দিশেহারা এখন ব্যবসায়ীরা। দুশ্চিন্তায় দাদন নেওয়া একাধিক জেলেরা। খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, মোরেলগঞ্জ উপজেলার পুটিখালী, বারইখালী, বলইবুনিয়া, পঞ্চকরণ, চিংড়াখালী, খাউলিয়া ও সদর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে ২ হাজার জেলে পরিবার সমুদ্রে মাছ ধরার ওপর নির্ভরশীল। এ মৌসুমে তারা ছোট বড় একাধিক ট্রলার ও নৌকা যোগে এক একটি গ্রুপে ৫০ থেকে ১০০ জেলে শ্রমীক নিয়ে শরণখোলা রেঞ্জের অধিনে সমুদ্র তীরে শেওলা, নারিকেল বাড়িয়া, মাজের কেল্লা, দুবলা, মেহের আলী ও আলোর কোল চর অঞ্চলে মাছ ধরে শুটকি ব্যবসা করে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারির ৪ মাসে শীতকালিন শুটকি ব্যবসার সাথে জড়িত এসব ব্যবসায়ীরা খুলনা, শরিয়তপুর ও চট্রগ্রামের বিভিন্ন মহাজনদের কাছ থেকে অগ্রিম ১০ থেকে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত দাদন নিয়ে মাছ ধরতে যায় সাগরে। জেলেরা শীতকালিন এ মৌসুমে ছুরি, লাঠিয়া, বৈরাগী, চিংড়ি, ফ্যাসা ও পোমা ভোল মাছ সংগ্রহ করে। এসব মাছ শুকিয়ে দাদান নেওয়া ব্যবসায়ী আড়ৎদারদের কাছে বিক্রি করতে হয় তাদের। প্রাকৃতিক দুর্যোগ জলোচ্ছ্বাস দেখা দিলে ব্যবসায় লোকসান দিয়ে খালি হাতে ফিরতে হয় বাড়িতে। ঘূর্নিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে পানিতে প্লাবিত এবং কয়েক দিন টানা বৃষ্টি হওয়ায় রক্ষিত শুটকি মাছ ও খোলায় রাখা আধাঁ শুটকি অর্ধকোটি টাকার মাছ ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। দিশেহারা এখন সমুদ্রগামী এসব জেলেরা। কথা হয় সোনাখালী গ্রামের জেলে আব্দুর রহিম(৬০), তার নৌকায় জেলে শ্রমীক রয়েছে ২২ জন, একই গ্রামের আসলাম খান(৩৮), নৌকায় শ্রমীক রয়েছে ২১ জন, বারইখালী গ্রামের আল আমিন শেখ(৫০), ৩টি নৌকায় শ্রমীক ৪৮, রুহুল আমীন, বাচ্চু হাওলাদার, শাহ আলম খলিফা, শ্রেনীখালী গ্রামের সরোয়ার খান, আশ্রাব আলী শেখ, পঞ্চকরণ গ্রামের দুলাল শেখ, পশুরবুনিয়া গ্রামের হাসান তালুকদার, কুমারখালী গ্রামের সুজন শেখ, চিংড়াখালী ইউনিয়নের পূর্ব চন্ডিপুর গ্রামের মনির গাজী, চাঁন মিয়া বেপারী ও মোড়েলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের গাবতলা গ্রামের শহিদুল শেখ, গফফার তালুকদারসহ একাধিক শুটকি ব্যবসায়ী জেলেরা বলেন, প্রতিটি জেলেদের একাধিক নৌকায় ৫০ থেকে শতাধিক জেলে শ্রমীক মাসিক বেতনে তাদের সাথে সাগরে মাছ ধরতে এসেছে। এদের নি¤œতম ৪ মাসে প্রতি শ্রমীককে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা গুনতে হবে। এবারে জাওয়াদে সবকিছু কেড়ে নিয়ে গেছে। শ্রমীকদের বেতনের টাকা দিবো কোথা থেকে। আবার দাদান ব্যবসায়ী আড়ৎদারদের কাছ থেকে অগ্রিম নেওয়া প্রতি এক লাখ টাকায় ২০ হাজার টাকা কিভাবে পরিশোধ করবে। তারা এখন দিশেহারা। সরকারিভাবে সহযোগিতার দাবি করেন ক্ষতিগ্রস্ত শুটকি ব্যবসায়ী এ সব জেলেরা। এ সর্ম্পকে উপজেলা মৎস্যজীবী সমিতির আহবায়ক ও মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি মো. মুনসুর আলী শেখ বলেন, সমুদ্র গামী শুটকি ব্যবসায়ীর ওপর নির্ভরশীল এ উপজেলার ২/৩ হাজার জেলে রয়েছে। প্রতি বছর এ জেলেরা ভাল মাছ পেলে ৫/৬ টন মাছ বিক্রি করতে পারে। বৈরি আবহাওয়া ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিলে তাদের দুর্ভোগের অন্ত থাকে না প্রতিবছরই দেনায় জজ্জরিত হয়। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় জেলেদের বিনা সুদে অথবা স্বল্পো সুদে ঋণ দিয়ে এ পেশাকে ধরে রাখার দাবী জানান। এ বিষয়ে জাতীয় মৎস্যজীবী সমিতির জেলা যুগ্ম আহবায়ক ও উপজেলা মৎস্যজীবী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আল আমিন শেখ বলেন, সমুদ্রগামী শুটকি ব্যবসায়ী এ সব জেলেদের উন্নত প্রশিক্ষনের পাশাপাশি শুটকি ব্যবস্থাপনায় সরকারিভাবে মৎস্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে নীতি মালা প্রনয়ন করে বড় ধরনের অথনৈতিক সহযোগিতার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবী রাখেন। উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা বিনয় কুমার রায় বলেন, উপজেলার সমুদ্রগামী শুটকি ব্যবসায়ী জেলেদের ঘূর্নিঝড় জাওয়াদের ক্ষতিগ্রস্ত বিষয়টি অবহিত হয়ে তাৎক্ষনিক উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে তিনি লিখিতভাবে জানিয়েছেন। শুটকি ব্যবসার সাথে জড়িত জেলেদেরকে ধরে রাখার জন্য মৎস্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্তরা সহযোগিতা পেতে পারে সে ক্ষেত্রে সুপারিশ পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com