শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:১৬ অপরাহ্ন

কক্সবাজার সৈকতে পর্যটকদের আসতে মানা

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২১

বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার এখন মানুষে পরিপূর্ণ। হোটেলগুলোয় নেই থাকার স্থান। বলে দেয়া হচ্ছে হোটেল বুকিং না দিয়ে কেউ এই সময়ে কক্সবাজারে আসবেন না। কেননা এখানে এসে আপনি বিড়ম্বনায় পরতে পারেন। কক্সবাজার শহরে প্রবেশমূখ কলাতলী হাঙর ভাস্কর্য মোড়। এখান থেকে কয়েক শ’ মিটার দূরে গাড়িতে বসেই দেখা যায় সমুদ্রের বিশাল জলরাশি। গতকাল শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে কেন্দ্রীয় বাসটার্মিনাল থেকে কলাতলী হাঙর ভাস্কর্য মোড় পর্যন্ত চার কিলোমিটার সড়কে দেখা গেছে, পাঁচ শতাধিক দূরপাল্লার বাসের সারি। মধ্যখানের সরু রাস্তা দিয়ে চলছে শত শত ছোট আকৃতির যানবাহন মাইক্রোবাস, সিএনজিচালিত ইজিবাইক, ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক-(টমটম) ও ব্যক্তিগত গাড়ি। তীব্র যানজটে গাড়ি চলছে না। যানজটে আটকে থাকা দূরপাল্লার বেশির ভাগ গাড়ি ঢাকা থেকে আসা। যে বাসগুলো রাতে ছেড়েছিল, শুক্রবার সকালে কক্সবাজার পৌঁছেছে সেগুলো। কতক্ষণ বাসে বসে থাকা যায়? পর্যটকেরা গাড়ি থেকে নেমে শুরু করেন হাঁটা। অনেকের হাতে, পিঠে ব্যাগ-লাগেজ। উদ্দেশ্য, হোটেল কক্ষে ওঠা, তারপর সমুদ্রের লোনাজলে শরীর ভেজানো। কিন্তু কোনোটাই হচ্ছে না শত শত পর্যটকের। কারণ, ঠাঁই নেই। সবখানে মানুষ আর মানুষ। লাখ পর্যটক। এর মধ্যে দুই লাখের মতো পর্যটক হোটেল–মোটেলে উঠেছেন। কিছু পর্যটক সেন্টমার্টিন, টেকনাফ, ইনানী, হিমছড়ি, চকরিয়ার সাফারি পার্ক, মহেশখালীর আদিনাথ মন্দির ভ্রমণে গেছেন। আরো অন্তত ২০ হাজার পর্যটক হোটেল কক্ষ না পেয়ে বাসে কিংবা রাস্তাঘাটে ঘোরাফেরা করে সময় পার করছেন। আনন্দের ভ্রমণ যেন তাদের কাছে দুর্ভোগে পরিণত হয়েছে।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো: জিললুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, সকালে এক লাখের বেশি পর্যটক সৈকতে নেমে লোনাজলে শরীর ভিজিয়েছেন। বিকেলে আরো এক লাখের বেশি পর্যটকের সমাগম ঘটতে পারে এ সৈকতে। অবশিষ্ট পর্যটকেরা শহর ও শহরের বাইরে বিনোদনকেন্দ্রে ছোটাছুটিতে আছেন।
বিপুলসংখ্যক পর্যটকের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর।
কক্সবাজারের সাতটি পৃথক হোটেল ও রেস্তোরাঁ মালিক সংগঠনের সমন্বিত মোর্চা ‘ফেডারেশন অব ট্যুরিজম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’-এর সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার বলেন, আজ সৈকত এলাকার পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেলে অবস্থান করছেন দুই লাখের বেশি পর্যটক। গত তিন দিনে সৈকত ভ্রমণে এসেছেন পাঁচ লাখের বেশি পর্যটক। এখন অধিকাংশ হোটেল-মোটেল গেস্টহাউসের শতভাগ কক্ষ ভাড়া হয়ে গেছে। ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৯৫ শতাংশ হোটেল কক্ষ বুকিং করা আছে। সুতরাং অগ্রিম কক্ষভাড়া না নিয়ে পর্যটকদের কক্সবাজার না আসতে অনুরোধ জানানো হচ্ছে। কারণ, হোটেল কক্ষ বুকিং না দিয়ে কেউ সৈকতে চলে এলে বিপদে পড়তে পারেন। তখন রাস্তাঘাটে পায়চারি করেই সময় পার করতে হবে। কক্সবাজারের হোটেল-মোটেলে দৈনিক এক লাখ ৬০ হাজার মানুষের রাতযাপনের ব্যবস্থা আছে। চাপ বেড়ে গেলে হোটেল কক্ষে গাদাগাদি কিংবা লোকজনের বাসাবাড়ি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিতে হয়।
ঝুঁকি নিয়ে গোসল, স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই: শুক্রবার দুপুর ১২টা। সমুদ্রসৈকতের সুগন্ধা পয়েন্ট। এক কিলোমিটার দীর্ঘ এই সৈকতে অন্তত ৫০ হাজার পর্যটকে ভরপুর। এর মধ্যে অন্তত ২০ হাজার পর্যটক কোমরসমান পানিতে নেমে গোসলে মত্ত। ট্যুরিস্ট পুলিশ ও লাইফগার্ডের কর্মীরা বাঁশি বাজিয়ে পর্যটকদের কূলে উঠে আসার অনুরোধ জানাচ্ছেন। কিন্তু সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই পর্যটকের। পর্যটকেরা দ্রুতগতির জেডস্কি নিয়ে ছুটছেন গভীর সাগরের দিকে। কেউ কেউ টায়ারে গা ভাসিয়ে ঢেউয়ের সাথে মিতালি করছেন। কেউ দিচ্ছেন ডুবসাঁতার। কেউ বালুচরে ঘোড়ার পিঠে চড়ে কিংবা বিচ বাইকে ওঠে ছুটছেন বালুররাজ্যে। কেউ কেউ সৈকততীরে ঝাউবাগানে ঢুকে ধারণ করছেন স্মৃতির মুহূর্ত।
সি-সেফ নামে বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের লাইফগার্ড মো: আলমগীর (৩৪) বলেন, ভাটার সময় সমুদ্রে গোসলে নামা নিষেধ। কারণ, স্রোতের টানে অনেকে ভেসে যান। তা ছাড়া সৈকতের কাছাকাছিতে একাধিক গুপ্তখাল আছে। যেখানে কেউ আটকা পড়লে উদ্ধার করা কঠিন। ভাটার সময় ও গুপ্তখালের কাছে নামতে নিষেধ করে বালুচরে একাধিক লাল নিশানা উড়ানো হচ্ছে। কিন্তু কেউ মানছেন না। সুগন্ধা পয়েন্টের উত্তর পাশের সিগাল ও লাবণী এবং দক্ষিণ পাশের কলাতলী সৈকতের দৌড়ঝাঁপ ৩০ থেকে ৪০ হাজার পর্যটকের।
সি-সেফ লাইফগার্ডের ব্যবস্থাপক সাইফুল্লাহ সিফাত বলেন, গত তিন দিনে পাঁচ থেকে ছয় লাখ পর্যটক নেমেছেন দুই কিলোমিটার সৈকতের পৃথক চারটি পয়েন্টে। অথচ ৯০ শতাংশ মানুষের মুখে মাস্ক নেই, সামাজিক দূরত্বও বজায় রাখা হচ্ছে না। ট্যুরিস্ট পুলিশের একজন পরিদর্শক বলেন, সৈকতে নামার সময় অনেক পর্যটক মুখে মাস্ক পরে নামেন। কিন্তু পানির কাছে গিয়ে মাস্ক খুলে পকেটে রাখেন। অধিকাংশ পর্যটক হোটেল মাস্ক রেখে সৈকতে ছুটে আসেন। মাস্ক ছাড়া নামতে বাধা দিলে বড় ধরনের ঝামেলা হবে বলে চুপ থাকতে হয়। মানুষের মধ্যে এখন করোনা নিয়ে কোনো আতঙ্কই নেই।
অতিরিক্ত কক্ষভাড়া আদায়, ছাড়ও প্রত্যাহার গতকালণ শুক্রবার দুপুরে সৈকতের লাবণী পয়েন্টে স্ত্রী ও তিন ছেলেমেয়ে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন নোয়াখালী থেকে ভ্রমণে আসা ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম।
কারণ জানতে চাইলে নজরুল বলেন, ‘সকাল ৯টায় বাস থেকে নেমেছি, দুপুর ১২টা পর্যন্ত ২০টার বেশি হোটেলে গিয়ে কক্ষভাড়া পাইনি। সব কটি হোটেল ভাড়া হয়ে গেছে। তবে কয়েকটি হোটেলে কক্ষ খালি থাকলেও ভাড়া চাওয়া হয়েছে চার-পাঁচ গুণ বেশি। অর্থাৎ এক হাজার টাকার কক্ষ ভাড়া চাওয়া হচ্ছে তিন থেকে চার হাজার টাকা। এত টাকায় হোটেল থাকার সামর্থ্য নাই, তাই বিকেল পর্যন্ত সৈকতে ঘুরেফিরে সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছি। ‘রাজশাহী থেকে ভ্রমণে আসা আরেক পর্যটক সাইফুল ইসলাম (৪০) বলেন, অনলাইনে বেশির ভাগ হোটেল কক্ষভাড়া ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়ের ঘোষণা দিয়ে পর্যটকদের কক্সবাজার নিয়ে এসেছে। এখন কোনো হোটেলে ছাড় দেয়া হচ্ছে না। এটা এক ধরনের প্রতারণা। রেস্তোরাঁগুলোতে খাবারের দাম অতিরিক্ত হারে আদায় হচ্ছে। বিপুল পর্যটকের সমাগমকে পুঁজি করে যানবাহনগুলোও ইচ্ছামতো ভাড়া হাতিয়ে নিচ্ছে।
কক্ষভাড়া ছাড় প্রসঙ্গে ফেডারেশন অব ট্যুরিজম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার বলেন, ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত অধিকাংশ হোটেল সর্বোচ্চ ৬০ শতাংশ পর্যন্ত কক্ষভাড়া ছাড় দিয়েছে। এখন পর্যটকে ঠাঁই হচ্ছে না। ছাড়ও তুলে নেয়া হয়েছে। তবে অতিরিক্ত কক্ষভাড়া যেন আদায় না হয়, এ বিষয়ে সতর্ক দৃষ্টি রাখা হচ্ছে। হোটেলমালিকেরা জানান, ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে ৯৯ শতাংশ হোটেল কক্ষ অগ্রিম বুকিং আছে। ১৯ থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কক্ষ বুকিং আছে ৯০ শতাংশ। এ কারণে অগ্রিম হোটেল কক্ষ বুকিং না দিয়ে ভ্রমণে না আসতে পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হচ্ছে। অভিযোগ পেলেই আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে জানিয়ে জেলা প্রশাসক মো: মামুনুর রশীদ সাংবাদিকদের বলেন, হোটেলে অতিরিক্ত কক্ষভাড়া এবং খাবারের বিপরীতে অতিরিক্ত টাকা আদায় যেন না হয়, তা দেখার জন্য ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ১০টির বেশি ভ্রাম্যমাণ আদালতে মাঠে রয়েছে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com