সুনামগঞ্জের ইজারাবিহীন ধোপাজান নদী কাগজে কলমে কোন ইজারা নেই। তবুও থেমে নেই সিন্ডিকেটের বালি-পাথর ব্যবসা। এলাকাবাসীর অভিযোগ,প্রশাসনের কিছু কিছু অসৎ কর্মকর্তার সাথে নিয়মিত আর্থিক লেনদেন ও যোগসাজসের মাধ্যমে চলছে বালিপাথর খেকো সিন্ডিকেটের এই রমরমা ব্যবসা। পরিবেশবাদী সাইফুর রহমান বলেন, সিন্ডিকেট চোরাকারবারী বালি পাথর ব্যবসায়ীরা,রাতের আধারে ড্রেজার বোমা মেশিন দিয়ে এলাকার প্রাণ প্রকৃতি বিনাশ করে লক্ষ লক্ষ ঘনফুট বালি পাথরের স্তুপ তৈরী করে আবার তারাই নিলামের মাধ্যমে বালি পাথর বৈধকরণের ব্যবস্থা করে। প্রতারনার এ যেন চমৎকার অভিনব কৌশল। নিলামের মাল বিক্রির সময় দেয়া হয় একমাস অথবা দুইমাস। এই সুযোগে মহাল থেকে তোলা হয় লক্ষ লক্ষ ঘনফুট বালি-পাথর। ডলুরা গ্রামের বারকী শ্রমিক রহিম উদ্দিন বলেন, ড্রেজার বোমার তান্ডবের কারনে বারকী শ্রমিকদের ঘরে ঘরে নীরব দূর্ভিক্ষ চলছে। অন্যদিকে অবৈধ ড্রেজার বোমার সিন্ডিকেট রাতারাতি কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যাচ্ছে। কিছুদিন আগেও যাদের ঘরে খাবার ছিলনা তারাই এখন চোরাইভাবে বালি পাথর উত্তোলন করে কোটি কোটি টাকার মালিক। রাতে চলে বালি-পাথর লুটতরাজ আর দিনের বেলা এই সিন্ডিকেটের লোকদের পাওয়া যায় সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানার সামনে ও ভূমি অফিসে। উদ্দেশ্য একটাই কিভাবে অসৎ কর্মকর্তা কর্মচারীদের মাধ্যমে টাকার বিনিময়ে অবৈধ ও বেআইনী বালি পাথর উত্তোলন বৈধ করা যায়। স্থানীয় লেঅকজন জানান,সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার গৌরারং ইউনিয়নের লালপুর গ্রামের ছোবহান হাজীর পুত্র মমিন(৪০), সুরমা ইউনিয়নের সৈয়দপুর গ্রামের চান মিয়ার পুত্র ফারুক(৩০), বালাকান্দা বাজারের তৈয়বুর রহমানের পুত্র মনা(৪০), হুরারকান্দা গ্রামের এন্তাজ আলীর পুত্র রমজান(৪০), শফিকুল ইসলামের পুত্র রফিকুল(৩৫), লালচান হাজীর পুত্র জাকির হোসেন(৪০) এবং বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার সলুকাবাদ ইউনিয়নের ভাদেরটেক গ্রামের তৈয়বুর ওরফে কানা তৈয়বুর প্রমুখ চোরাকারবারীরা বিভিন্ন সময় প্রশাসনের জব্দকৃত বালু পাথর নিজেরা মিলে নীলাম ক্রয় করে দুএকজন কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে বালু পাথর উত্তোলনকারী শ্রমিকদের কাছ থেকে বিভিন্ন রেটে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের টাকা। জানা যায়, গত এক সপ্তাহ আগে ২০ হাজার ঘনফুট সিঙ্গেল পাথর ভাদেরটেক এর বাবুল ও ১০ হাজার ঘনফুট বালু ফারুকগং নীলাম গ্রহন করে। নীলামের ৩ দিনের মধ্যেই তারা তাদের মালামাল বিক্রয় করে। কিন্তু কথিত নীলামের মাল সরানোর জন্য লম্বা তারিখ নিয়ে কথিত নীলাম গ্রহনকারী সিন্ডিকেট চক্র প্রতিদিন সকাল ৮ায় প্রকাশ্য দিবালোকে দেড় লক্ষ ঘনফুট বালি ও শতাধিক নৌকায় সিঙ্গেল পাথর উত্তোলন করছে। ধোপাজান নদীর পাড়ে টহলে থাকা পুলিশ ক্যাম্প এর সামনে দিয়ে প্রতিদিন অবৈধভাবে বালিপাথর নিয়ে গেলেও কারো কোন ভূমিকা পরিলক্ষিত হচ্ছেনা এ ব্যাপারে। জানা যায়,গত ১২ অক্টোবর ডলুরা ৪৮ শহীদ মিনার সংলগ্ন ধোপাজান চলতি নদীর পূর্বপাড়ে সরকারী খাস খতিয়ানের জায়গায় ৯০ হাজার ঘনফুট পাথর জব্দ করে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইমরান শাহরিয়ার,পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মোঃ আলমগীর,বিজিবির কোম্পানী কমান্ডার সুবেদার একাব্বর,সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানার এসআই দিদার উল্লাহ ও র্যাব ৯ সুনামগঞ্জ সিপিসি-৩ এর অফিসার ইনচার্জ আহাম্মদ আলীর নেতৃত্বাধীন যৌথ বাহিনী। জব্দ করার পর জব্দকৃত পাথরগুলো প্রতি ঘনফুট ৪৮ টাকা রেটে ভ্যাট ও ট্যাক্সসহ মোট ৫৬ লক্ষ টাকায় নীলামে ক্রয় করে সদর উপজেলার জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়নের পূর্ব ডলুরা নিবাসী মৃত সমরাজ আলীর ছেলে দেলোয়ার হোসেন। কাগজেপত্রে দেলোয়ারের এক সহযোগী যুবকের নামে নীলাম সম্পন্ন হলেও প্রায় ২০/২৫ জন বালিপাথর ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট নীলামের ৫৬ লক্ষ টাকা পরিশোধ করে। ২৪ নভেম্বরের মধ্যে নীলামকৃত ৯০ হাজার ঘনফুট পাথর সরিয়ে নেয়ার জন্য যৌথবাহিনীর দেয়া লিখিত ক্ষমতাপত্রে নির্দেশ দেয়া হয় তাদেরকে। কিন্তু সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়,কথিত নীলাম গ্রহনকারীরা জব্দকৃত ৯০ হাজার ঘনফুট পাথর নীলাম গ্রহনের ৩ দিনের মধ্যেই সরিয়ে নিয়ে হালুয়ারঘাটের বিভিন্ন ক্রাশার মালিকের নিকট ও ধোপাজান নদীপথে অন্যত্রে বিক্রয় করেছে। কিন্তু শুভংকরের ফাকি দিয়ে উপজেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের নজরদারী এরিয়ে জব্দকৃত স্থানে চলতি নদী হতে প্রতিদিন বেআইনীভাবে বালি পাথর উত্তোলন করত: একই জায়গায় ডাম্পিং করে যৌথ বাহিনীর ক্ষমতাপত্রকে অবৈধভাবে ব্যবহার করে দেদারছে বালি পাথর লুটতরাজ চালিয়ে গেলেও দেলোয়ারগংদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন। অবৈধ বালি পাথর উত্তোলনে পুলিশী কোন ঝামেলা যাতে না হয় সেজন্য সুনামগঞ্জ সদর থানার একজন এএসআইকে প্রতিদিন শহরের বাধনপাড়াস্থ ভাড়াটে বাসায় মোটা অংকের টাকা পৌছে দেয়া হয় সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের পক্ষ হতে। ডিবি পুলিশের নামে আরেকজন এএসআই শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় গিয়ে মোটা অংকের টাকা পকেটস্থ করেন। মাঝেমধ্যে রাতের বেলা ধোপাজান নদীর পাড়ে টহলের নামে কেউ কেউ বালি পাথর উত্তোলনের ও নৌকাযোগে নিরাপদে বের হয়ে যাওয়ার জন্য সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের সাহায্যে এগিয়ে আসেন। স্থানীয় অলির বাজারে ও পূর্ব সদরগড়ে অবৈধভাবে সিঙ্গেল পাথরের ও বালির কয়েকটি স্তপ পড়ে রয়েছে। প্রশাসনের নাকের ডগায় এসব অবৈধ বালি পাথরের স্তুপ থাকলেও রহস্যজনক নীরবতা পালন করছে সুনামগঞ্জ প্রশাসন।