ইমাম ইবনুল কায়্যিম জাওজিয়্যা (রহ.) ছিলেন অষ্টম শতকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ আলেম ও চিন্তাবিদ। তিনি ইসলামের নানা বিষয়ে কালজয়ী বহু গ্রন্থ রচনা করেছেন। নি¤েœ ইমাম ইবনুল কায়্যিম (রহ.)-এর পাঁচটি অমূল্য উপদেশ তুলে ধরা হলোÍ
মুমিনের সৌভাগ্য : নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে চাইবে এবং তাঁর সাড়া দানের প্রত্যাশা করবে। দোয়া করবে আল্লাহ যেন দুনিয়া ও আখিরাতে তাদের অভিভাবক হয়ে যান। দুনিয়া ও আখিরাতে তাঁর নিয়ামতগুলো পূর্ণতা দান করেন। তিনি তোমাদের সেসব মানুষের অন্তর্ভুক্ত করে নেন, যারা আল্লাহর নিয়ামত লাভ করলে কৃতজ্ঞতা আদায় করে, সংকটে পড়লে ধৈর্য ধারণ করে এবং পাপে লিপ্ত হলে ক্ষমাপ্রার্থনা করে। এই তিনটি বৈশিষ্ট্য মুমিনের জন্য সৌভাগ্য লাভের মাধ্যম, দুনিয়া-আখিরাতে সাফল্য লাভের নিদর্শন। আল্লাহর প্রকৃত বান্দারা এসব গুণাবলিকে উপেক্ষা করতে পারে না।
কোরআন দ্বারা উপকৃত হওয়ার শর্ত : যদি তুমি কোরআন দ্বারা উপকৃত হতে চাও তবে কোরআন তিলাওয়াত ও শ্রবণ করার সময় মনোযোগ ধরে রাখবে এবং অন্তরের কান খুলে দেবে। তুমি তোমাকে সে ব্যক্তির মতো উপস্থিত করবে যে উদ্দেশ্য করে আল্লাহ আয়াত অবতীর্ণ করেছেন। কেননা প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ তাঁর রাসুলের মাধ্যমে তোমাকেই সম্বোধন করেছেন। আল্লাহ বলেছেন, ‘এতে উপদেশ আছে তার জন্য, যার আছে অন্তঃকরণ অথবা যে শ্রবণ করে নিবিষ্টচিত্তে।’ (সুরা কাফ, আয়াত : ৩৭)
সময় নষ্ট করা : সময় নষ্ট করা মৃত্যুর চেয়েও ভয়ংকর। কেননা সময়ের অপচয় তোমাকে আল্লাহ ও পরকাল থেকে দূরে ঠেলে দেবে। মৃত্যু তোমাকে শুধু জীবন ও পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেবে।
অন্তরের পরিশুদ্ধি : অন্তরের সব রোগের মূল সংশয় ও প্রবৃত্তি পূজা। আর কোরআন এই দুই রোগ থেকে আরোগ্য দান করে। কেননা কোরআনে আছে সুস্পষ্ট ও অকাট্য দলিলগুলো। যা মিথ্যা থেকে সত্যকে পৃথক করে। আর তা জ্ঞান, চিন্তা ও বোধশক্তির মাধ্যমে সংশয়ের রোগগুলো দূর করে দেয়। অন্যদিকে কোরআনের প্রজ্ঞা, উত্তম উপদেশ মানুষকে প্রবৃত্তি পূজা থেকে ফিরিয়ে আনে। তা হয় কোরআনের তারগিব তথা পুরস্কার বিষয়ক ও তারহিব তথা ভীতিপ্রদর্শন বিষয়ক আয়াতগুলোর মাধ্যমে এবং দুনিয়াবিমুখতা বিষয়ক আয়াত এবং আখিরাতমুখী হওয়া বিষয়ক আয়াতগুলোর মাধ্যমে। আর সেসব দৃষ্টান্ত ও ঘটনাগুলোর মাধ্যমে আছে শিক্ষা ও আত্মসংযমের উপদেশ।
মানবজীবনের দুই পর্দা : বান্দার জীবনে দুটি পর্দা আছে। একটি তার ও আল্লাহর মাঝে এবং অপরটি তার ও মানুষের মাঝে। সে যখন তার ও আল্লাহর মধ্যকার পর্দাটি ছিঁড়ে ফেলে, তখন আল্লাহ তার ও মানুষের মধ্যকার পর্দা হটিয়ে দেন।
দারিদ্র্য হওয়া : যেসব দরজার মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর কাছে প্রবেশ করে দারিদ্র্য হলো তার ভেতর সবচেয়ে নিকটতর। সে নিজের জন্য কোনো অবস্থা, অবস্থান ও সম্পর্ক খুঁজে পায় না। আর এমন কোনো সম্পদ নেই, যার জন্য হিসাব দিতে হবে; বরং সে আল্লাহর কাছে প্রবেশ করবে নিঃস্ব ও অসহায় অবস্থায় এবং দারিদ্র্যের কারণে ভগ্ন হৃদয় নিয়ে। সে তার সব প্রয়োজন আল্লাহর কাছে উপস্থাপন করার সুযোগ পায়। ‘মাওয়ায়িজু ইমাম ইবনুল কায়্যিম জাওঝিয়্যা’ থেকে আলেমা মুশফিকা আফরার ভাষান্তর