উত্তর আমেরিকার দেশ মেক্সিকোর দাপ্তরিক নাম ‘ইউনাইটেড মেক্সিকান স্টেটস’। দেশটির উত্তরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ ও পশ্চিমে প্রশান্ত মহাসাগর, দক্ষিণ-পূর্বে গুয়াতেমালা, বেলিজ ও ক্যারিবিয়ান সাগর এবং পূর্ব দিকে মেক্সিকান উপসাগর অবস্থিত। দেশটির মোট আয়তন সাত লাখ ৬১ হাজার ৬১০ বর্গমাইল। আয়তনে মেক্সিকো পৃথিবীর ১৩তম বৃহত্তম রাষ্ট্র। মেক্সিকো সিটি দেশটির সর্ববৃহৎ শহর ও রাজধানী। দেশটির মোট জনসংখ্যা ১২ কোটি ৬০ লাখ ১৪ হাজার ২৪। দেশটির বেশির ভাগ মানুষ ক্যাথলিক খ্রিস্টান। ইসলাম মেক্সিকোর সবচেয়ে দ্রুত বিস্তার লাভকারী ধর্ম।
ধারণা করা হয়, মেক্সিকোতে মানবসভ্যতার বিকাশ ঘটে খ্রিস্টপূর্ব আট হাজার বছর আগে। প্রাচীন মায়া ও আজটেক সভ্যতার কেন্দ্রভূমি ছিল মেক্সিকো। প্রাচীন সভ্যতার দেশ মেক্সিকোতে ইসলামের আগমন ঘটে বেশ পরে। ধারণা করা হয়, স্পেনে মুসলিম শাসনের পতন হলে স্প্যানিশ শাসকগোষ্ঠী যে বিপুলসংখ্যক মুসলিমকে দাস হিসেবে আমেরিকা মহাদেশে পাঠিয়েছিল, তাদের মাধ্যমেই মেক্সিকোতে ইসলামের আগমন ঘটেছিল। তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল আফ্রিকান মুসলিম দাসরা। তবে তাদের মাধ্যমে ইসলামের উল্লেখযোগ্য কোনো বিস্তারের বিবরণ পাওয়া যায় না। যেমন পাসকুয়াল আল-মাজানে রচিত ‘আন হেরেজে ই উন মুসুলমান’ বইয়ে স্পেন থেকে বহিষ্কৃত ইউসুফ বিন আলবাজ নামে এক ব্যক্তির ঘটনা বর্ণনা করেছেন, যিনি ষোলো শতকে স্পেন থেকে মেক্সিকোতে আসেন এবং তাঁর বাবাকে ধর্মান্তরে বাধ্য করা হয়। তিনি মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন এবং মেক্সিকোতে ইসলাম প্রচারে আত্মনিয়োগ করেন। মরক্কোর একজন বিচারক নিজ অবস্থানে অটল থাকতে উৎসাহিত করেন।
মেক্সিকোতে ইসলামের অগ্রযাত্রা শুরু হয় মূলত দ্বিতীয় শতাব্দীতে। যখন বিপুলসংখ্যক তুর্কি, লেবানিজ ও সিরিয়ান অভিবাসী দেশটিতে পাড়ি দেয়। ১৯৯৯ সালে জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখানো হয়েছে যে এ সময়ের ১০ শতাংশ অভিবাসী মুসলিম ছিল। বর্তমানে অভিবাসীরাই মেক্সিকোর সবচেয়ে ধনীদের অন্যতম এবং তাদের জনসংখ্যা দাঁড়িয়েছে দুই লাখ। তাদের অন্যতম লাতিন আমেরিকার শ্রেষ্ঠ ধনী ইউসুফ সেলিম, যদিও অভিবাসী মুসলিমদের খুব সামান্যসংখ্যকই ব্যক্তিগত জীবনে ধর্ম চর্চা করে থাকে। আধুনিক সময় মেক্সিকোতে ইসলাম প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন ‘মুসলিম সেন্টার ডি মেক্সিকো’র প্রতিষ্ঠাতা ব্রাদার মার্ক ওয়েস্টোন। ১৯৮৮ সালে তিনি ইসলাম গ্রহণের পর ওমর ওয়েস্টোন নাম ধারণ করেন।
আশার কথা হলো, মেক্সিকোতে মুসলিমের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। পিউ রিসার্চের তথ্য মতে, ১৯৯০ সালে মেক্সিকোতে মুসলিমের সংখ্যা ৬০ হাজার, ২০১০ সালে যা বেড়ে এক লাখ ১০ হাজার হয় এবং ধারণা করা হচ্ছে, ২০৩০ সালে মুসলিমের সংখ্যা দাঁড়াবে এক লাখ ২৬ হাজার। মুসলিমের সংখ্যা বাড়লেও দেশটিতে মসজিদ ও ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা আনুপাতিক হারে বাড়ছে না, যদিও দেশটির রাজধানী মেক্সিকো সিটিতে দুটি মসজিদসহ সারা দেশে প্রায় ২০টির মতো মসজিদ ও ইসলামিক সেন্টার আছে। সরকারি অনুমোদিত মসজিদের বাইরেও বেশ কিছু প্রার্থনাকক্ষ আছে।
তথ্যসূত্র : মুসলিম পপুলেশন ডটকম,ইয়ানি সাফাক ও আলুকা