ইজারাবিহীন ধোপাজান চলতি নদী বালিপাথর মহাল থেকে বেআইনীভাবে বালি পাথর উত্তোলনের দায়ে ২০ ব্যক্তির বিরুদ্ধে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক বরাবরে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে নীলাম গ্রহনকারী সিন্ডিকেটচক্র কর্তৃক বালি পাথর লুটতরাজের দায়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এনে তাদেরকে গ্রেফতারের দাবী জানিয়ে এ অভিযোগ দায়ের করা হয়। ২৪ জানুয়ারি সোমবার সকালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অভিযোগটি দায়ের করেছেন ব্যবসায়ী মুজিবুর রহমান। অভিযোগে সিন্ডিকেটচক্র কর্তৃক অবৈধভাবে উত্তোলিত ও লুটতরাজকৃত বালি পাথর এর ন্যায্য ক্ষতিপূরন আদায় করে সরকারী কোষাঘারে জমা প্রদানেরও দাবী জানানো হয়। সুনামগঞ্জ শহরের বাধনপাড়া এলাকার বাসিন্দা বরিশাল জেলা নিবাসী সেলিম উদ্দিন(৫০),সদর উপজেলার গৌরারং ইউনিয়নের লালপুর গ্রামের হাজী আব্দুছ ছোবহানের পুত্র মমিন মিয়া(৪৮), সুরমা ইউনিয়নের হুরারকান্দা গ্রামের ইন্তাজ আলীর পুত্র রমজান(৪৪), মৃত মিথ্যা উদ্দিনের পুত্র লায়েছ মিয়া(৩২), মুসলিমপুর গ্রামের মৃত তৈয়বুর রহমানের পুত্র মনা মিয়া(৪৫), সৈয়দপুর গ্রামের চান মিয়ার পুত্র ফারুক(৩৫), জাহাঙ্গীর নগর ইউনিয়নের কাইয়ারগাঁও গ্রামের ছৈদ আলীর পুত্র মকবুল হোসেন(৪২), আবুল কাশেমের পুত্র ওমর(৩৫), নতুন গুদীগাঁও নিবাসী ১নং ওয়ার্ডের মেম্বার আব্দুল মালেক(৪৮),পূর্ব ডলুরা গ্রামের আব্দুল ছামাদের পুত্র সাদেক মিয়া(৪৮), সমরাজ আলীর পুত্র দেলোয়ার(৩৫), মৃত ইলিয়াছ মিয়ার পুত্র কাজল(৩০),মৃত হাছেন মড়লের পুত্র লাল মিয়া(৩৮), সুরুজ মিয়ার পুত্র কালা(৩৫), মৃত আব্দুল হামিদের পুত্র ভূট্টো(৪০), মৃত আব্দুল হাফিজের পুত্র খুরশিদ(৪৫), জক্কুর মিয়ার পুত্র পাভেল(২৫), একই ইউনিয়নের গুচ্ছ গ্রামের শারপিন(৫৫) এবং বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার সলুকাবাদ ইউনিয়নের ভাদেরটেক মনিপরিহাটি গ্রামের খায়ের মিয়ার পুত্র বাবুল মিয়া(৩৫), হারুন মিয়ার পুত্র শাহিনূর(৩৫) সহ মোট ২২ জনকে দায়ী করা হয়েছে। অভিযোগে প্রকাশ উক্ত সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা ধোপাজান-চলতি নদী বালি পাথর মহাল হতে বেআইনীভাবে ড্রেজার ও বোমা মেশিন দ্বারা বালি পাথর উত্তোলন করে নিজেরাই জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকে খবর দিয়ে নীলামের আয়োজন করে নিজেদের চোরাইকৃত মালামাল নিজেরাই ক্রয় করে অবৈধ মালামালকে সরকারী জব্দকৃত মালামালের মোহর মেরে বৈধ মাল হিসেবে গণ্য করত: বালু পাথর মহাল থেকে ইঞ্জিন নৌকা,বাল্কহেড,কার্গো এবং ট্রাক ট্রলি যোগে বের করে প্রশাসনের বিনা বাধায় এবং ক্ষেত্র বিশেষে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে সারাদেশে পাচার করে যাচ্ছে। প্রতিদিন প্রায় ৩ লক্ষ ফুট বালি (বাজার মূল্য ৬৫ লাখ টাকা) ও ১ লক্ষ ফুট (বাজার মূল্য ১ কোটি টাকা) পাথর প্রকাশ্যে সুরমা নদীর মাঝে নোঙ্গর করে লোড আনলোড করছে গত জুন মাস থেকে লাগাতারভাবে। গত ১৭ জানুয়ারি কথিত নীলাম ক্রয়কারীদের নীলাম ক্রয়ের নির্ধারিত সময়সীমা সমাপ্তি ঘটে। কিন্তু উক্ত নীলাম গ্রহনকারীরা নতুন করে ধোপাজান নদীর পাড়ে ইতিমধ্যে কিছু বালি পাথর রেখে দিয়েছে নতুন করে নীলাম গ্রহনের অসদুদ্দেশ্যে। ১৭ জানুয়ারির পর কখন কোথায় কিভাবে নীলাম হবে এবং কে সেই নীলাম ক্রয় করবে তা ইতিমধ্যে ঐ সিন্ডিকেটচক্র প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। সিন্ডিকেট চক্রের মূল নেতৃত্ব দিচ্ছে বরিশালের জনৈক ব্যবসায়ী গডফাদার সেলিম ও তার আশীর্বাদপুষ্ট মমিন,রমজান,বাবুল ও জাকির গং। কথিত সেলিম সাব নামের ব্যক্তিটি সুনামগঞ্জ শহরে অবস্থান করে পুলিশের একজন উর্ধতন কর্মকর্তার বন্ধু ও আত্মীয় পরিচয় দিয়ে সদর থানা পুলিশ প্রশাসন ও ধোপাজান নদীর পুলিশ ক্যাম্পে টহলরত এসআইগংদেরকে কমান্ড করে নিয়মিত বালি পাথর পাচারে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। অভিযোগে বর্ণিত সিন্ডিকেটচক্রের সকল আসামীদের মোবাইল ফোনের কললিষ্ট ট্র্যাকিং করলে একে অপরের সাথে গোপন সিন্ডিকেট ব্যবসার অনেক মূল্যবান রহস্য উদঘাটিত হবে বলেও উল্লেখ করা হয়। গত জুন ২০২১ইং থেকে সিন্ডিকেট চক্রের সদস্যরা পরস্পর সমঝোতার মাধ্যমে তাদের যেকোন একজনের নামে বালি পাথর নীলাম গ্রহন করে। নীলাম পত্রে বালি পাথরের রেইট অত্যন্ত কম ধরে তাদেরকে লাভের একটা সুযোগ দেয়া হয়। তারপরও ঐ নীলাম গ্রহনকারী সিন্ডিকেট নীলামের বালি পাথরের পাশাপাশি ধোপাজান নদীর তলদেশ ও নদীর পাড় ভেঙ্গে বেপরোয়াভাবে বালি পাথর উত্তোলন করে। এক লাখ ফুট বালি পাথর নীলাম গ্রহন করলেও ঐ সিন্ডিকেট লক্ষ লক্ষ ফুট বালি পাথর প্রতিদিন উত্তোলনক্রমে অবৈধভাবে পাচার করেছে। উত্তোলিত বালি পাথর কথিত সিন্ডিকেটগং সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়নের ডলুরা হতে সুরমা ইউনিয়নের হালুয়ারঘাট বাজার ও মইনপুর গ্রামে ট্রাক ট্রলি দ্বারা বিভিন্ন ক্রাশার মালিকদের কাছে বিক্রয়ের মাধ্যমে,সুরমা ইউনিয়নের পূর্ব সদরগড় গ্রামের সামনে অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্পের মধ্যে দিয়ে ইঞ্জিন নৌকা,কার্গো বাল্কহেড দ্বারা বহন করে এবং বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার সলুকাবাদ ইউনিয়নের মথুরকান্দি বাজার থেকে বাগবেড় বাজার হয়ে সুনামগঞ্জ রোডে ট্রাক ট্রলির মাধ্যমে সরকারের মূল্যবান অবিক্রিত খনিজ সম্পদ বালি পাথর পাচার করেছে। যা শহরের সকল ব্যবসায়ী ও এলাকার সাধারন লোকজন অবগত রয়েছেন। সিন্ডিকেটচক্রের মূল উদ্দেশ্যটি হচ্ছে জব্দকৃত মালামাল বহন করে নেয়ার জন্য প্রশাসনের কাছ থেকে নির্ধারিত দীর্ঘ সময়সীমা বেধে নেওয়া। এর মধ্যেই মূলত: ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতি হয়েছে। যা বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক,স্থানীয় দৈনিক,ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়া ও অনলাইন সংবাদ মাধ্যমে সচিত্র প্রতিবেদনসহ প্রকাশিত হয়েছে। চিহ্নিত ঐ সিন্ডিকেট চক্রটি জেলা উপজেলা প্রশাসন,পুলিশ প্রশাসন,গোয়েন্দা প্রশাসনের কোন কোন কর্তা ও কর্মচারীদেরকে আর্থিক সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে ইজারাবিহীন ধোপাজান চলতি নদী বালি পাথর মহালের সকল প্রাকৃতিক সম্পদ উজাড় করে লাভবান হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে সদাশয় সরকার ও সরকারের মূল্যবান খনিজ সম্পদ। সিন্ডিকেট চক্রের সকল সদস্যদের গত এক বছরের ব্যাংক হিসাব তল্লাসী করলে অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হবে।