রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:৩১ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
আমার কথা বলে চাঁদা-সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করলে পুলিশে দিন : আসিফ নজরুল তিস্তার পানি দ্রুত বাড়ছে আজ আদালতে আত্মসমর্পণ করবেন মাহমুদুর রহমান ঢাকার খাল দিয়ে ব্লু নেটওয়ার্ক তৈরির পরিকল্পনা করছে সরকার : পানিসম্পদ উপদেষ্টা শিক্ষাব্যবস্থায় হিন্দুত্ববাদ ও নাস্তিক্যবাদ বরদাস্ত করা হবে না : মামুনুল হক নৌকা থাকায় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের নাম পরিবর্তন হতে পারে : উপদেষ্টা আদর্শিক ভিন্নতা থাকলেও সবাই একসঙ্গে জাতি গঠনে কাজ করবে: মঞ্জুরুল ইসলাম জাতিসংঘে ভাষণে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া সমালোচনা মাহমুদ আব্বাসের মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে ভাষাসৈনিক অধ্যাপক আব্দুল গফুরের দাফন ছাত্র-জনতার অদম্য সংকল্প ও প্রত্যয় স্বৈরাচার থেকে আমাদের মুক্তি দিয়েছে

হাতিরঝিলের সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে, তদারকি করছে না রাজউক

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২৭ জানুয়ারী, ২০২২

ঢাকা শহরে বেড়ানোর অন্যতম পছন্দের জায়গা হাতিরঝিল। প্রতিদিন হাজারো মানুষ এই ঝিলে ঘুরতে যায়। কিন্তু প্রথম দিকের সেই আকর্ষণ আর জৌলুস যেন দিন দিন ফিকে হয়ে আসছে। সেখানে দেখা দিয়েছে নানা অব্যবস্থাপনা। হাঁটাচলার পথের টাইলস-কংক্রিটের ব্লক উঠে গেছে। ঝিলের পাড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে আবর্জনা। পানিতে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দা এবং দর্শনার্থীদের অভিযোগ, হাতিরঝিল ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব সেনাবাহিনীর কাছ থেকে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) কাছে যাওয়ার পরই এ অব্যবস্থাপনা দেখা দিয়েছে। এখন ঝিলটি তার সৌন্দর্য হারাতে বসেছে। কিন্তু ঝিলটি যথাযথভাবে রক্ষণাবেক্ষণের কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না রাজউক। সেনাবাহিনী যখন তত্ত্বাবধানে ছিল, তখন তেমন কোনো সমস্যা ছিল না। এখন ঝিলের সৌন্দর্য হারাতে বসেছে। এক কথায় ঝিলটি এখন অনেকটাই নোংরা হয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে রাজউককে তদারকি বাড়াতে হবে।
তবে রাজউক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নান্দনিক হাতিরঝিলটি নগরে যানজট ও জলাবদ্ধতা নিরসন এবং বৃষ্টির পানি সংরক্ষণে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। তাই তারা ঝিলটির সৌন্দর্য বা রক্ষণাবেক্ষণে সর্ব্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। অর্থ এবং জনবল সংকট থাকায় ঝিলটি ব্যবস্থাপনায় হিমশিম খেতে হচ্ছে বলে জানিয়েছে রাজউক। ২০০৭ সালের অক্টোবরে হাতিরঝিল প্রকল্প অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। তখন এ প্রকল্পে ব্যয় হয় এক হাজার ৯৭১ কোটি ৩০ লাখ টাকা। ২০১৩ সালের ২ জানুয়ারি এই প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনের পর থেকে এর ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর স্পেশাল ওয়ার্কস অর্গানাইজেশন (এসডব্লিউও)। ২০২১ সালের ৩০ জুন প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে। এরপর হাতিরঝিলের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পায় রাজউক। এরপর কেটেছে ছয় মাসেরও বেশি সময়। কিন্তু প্রকল্প এলাকায় দেখা দিয়েছে নানা দুর্গতি। বুধবার (২৬ জানুয়ারি) সরেজমিনে দেখা যায়, হাতিরঝিলের মধুবাগ, রামপুরা, বেগুনবাড়ির বিভিন্ন অংশে ফুটপাতের টাইলস, কংক্রিটের ব্লক উঠে গেছে। কয়েকটি অংশ মাটির নিচে দেবে গেছে। ঝিলের বিভিন্ন স্থানে বসানো ওয়েস্টবিনগুলো (ময়লার পাত্র) ভাঙা। ঝিলের পাড়, রাস্তা ময়লা-আবর্জনা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। ঝিলের পানির রঙ কালচে হয়ে গেছে। পানি থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এছাড়া সড়কে চক্রাকার সড়কে উল্টোপথে মোটরসাইকেল, সিএনজি চলতে দেখা গেছে। কিন্তু ঝিলটি রক্ষণাবেক্ষণে রাজউকের কাউকে তদারকি করতে দেখা যায়নি। হাতিরঝিলের বেশকিছু ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামো সংস্কারের কাজ চলছে। নিয়মিত ঝিলের রাস্তাঘাট পরিষ্কার করা হচ্ছে। কোথাও কোনো ময়লা পড়ে থাকে না।
হাতিরঝিলের পরিবেশ নিয়ে কথা হয় মধুবাগের প্রবীণ বাসিন্দা ফয়েজ উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি জানান, প্রতিদিন হাজারো মানুষ এই লেকে বেড়াতে যায়। ছুটির দিনগুলোতে লাগো মানুষের ভিড় হয় ঝিলে। সেনাবাহিনী যখন তত্ত্বাবধানে ছিল, তখন সেখানে তেমন কোনো সমস্যা ছিল না। এখন ঝিলের সৌন্দর্য হারাতে বসেছে। এক কথায় ঝিলটি এখন অনেকটাই নোংরা হয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে রাজউককে তদারকি বাড়াতে হবে। খিলগাঁওয়ের তালতলা থেকে ছেলে-মেয়েকে নিয়ে হাতিরঝিলে বেড়াতে গেছেন ইকবাল হোসেন। তিনি বলেন, আজ থেকে পাঁচ বছর আগের হাতিরঝিল আর এখনকার হাতিরঝিল মেলানো যায় না। দিন যত যাচ্ছে ঝিল এলাকা ততটাই নোংরা হচ্ছে। বিশেষ করে গত ছয় মাসে ঝিলটির পরিবেশ সবচেয়ে খারাপ হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে দেশের অন্যান্য প্রকল্পের মতো এ প্রকল্পটিও নষ্ট হয়ে যাবে। তখন ঢাকার মানুষের বেড়ানোর জায়গা থাকবে না। রাজউক সূত্র জানায়, এ প্রকল্প রক্ষণাবেক্ষণের জটিলতার কথা আগেই গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছিল। কারণ, প্রকল্প শেষ হওয়ার পর ঝিলটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ডিপিপিতে অর্থ বরাদ্দ ছিল না। অথচ এটি ব্যবস্থাপনায় বছরে প্রায় ১৮ কোটি টাকা দরকার। এখন প্রকল্প এলাকায় দোকানপাট বরাদ্দসহ অন্যান্য খাত থেকে ১০ কোটি টাকা আসে। বাকি ঘাটতি মেটাতে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রাজউককেই এ খরচ দিতে হবে। ২০২০ সালের ২ জুন রাজউক চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে বেগুনবাড়ি খালসহ হাতিরঝিল এলাকার সমন্বিত উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের রক্ষণাবেক্ষণ কার্যক্রম প্রস্তাবনা পর্যালোচনায় গঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটির সভা হয়। সভায় হাতিরঝিলের ৮ দশমিক ৮ কিলোমিটার এক্সপ্রেস রোড, ৯ দশমিক ৮ কিলোমিটার সার্ভিস রোড, চারটি সেতু, চারটি ওভারপাস, তিনটি ভায়াডাক্ট ও দুটি ইউলুপসহ অন্যান্য অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণে দীর্ঘমেয়াদি পরিবকল্পনা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে আউটসোর্সিং পদ্ধতিতে প্রকল্প রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পরিচালনার জন্য একটি প্রস্তাব তৈরি করা হয়। সে আলোকে এখন নিরাপত্তার জন্য তিন শিফটে ১৭১ জন নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ দিয়েছে রাজউক। এছাড়া পরিচ্ছন্নতা ও গাছের নিরাপত্তায় ৫৬ জন কর্মী রয়েছে। তবে হাতিরঝিল রক্ষণাবেক্ষণে আরও জনবল দরকার বলে জানিয়েছেন রাজউকের সংশ্লিষ্টরা। জানতে চাইলে রাজউক চেয়ারম্যান এবিএম আমিন উল্লাহ নুরী জাগো নিউজকে বলেন, ‘হাতিরঝিলের বেশকিছু ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামো সংস্কারের কাজ চলছে। নিয়মিত ঝিলের রাস্তাঘাট পরিষ্কার করা হচ্ছে। কোথাও কোনো ময়লা পড়ে থাকে না।’
তিনি বলেন, এখন ঝিল ব্যবস্থাপনায় সব ব্যয় রাজউকের তহবিল থেকেই দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া রাজউকের লোকজন দিয়েই তা তত্ত্বাবধান করা হচ্ছে। তবে পুরো ঝিলটি রক্ষণাবেক্ষণে আরও জনবল দরকার। বিষয়টি মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com