শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:৩৫ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
বিজয় ছিনিয়ে নিতে ষড়যন্ত্র চলছে: নজরুল ইসলাম খান পতিত আ’লীগ সরকারের কবল থেকে ভিক্ষুকরাও রেহাই পায় নাই : ডা. শফিকুর রহমান জাতির মুক্তির জন্য ঐক্যবদ্ধ থাকার বিকল্প নেই : তারেক রহমান ব্যবসায়ী ওয়াদুদ হত্যা: সাবেক ডিসি মশিউর সাত দিনের রিমান্ডে ভারতে ‘অবৈধ’ শেখ হাসিনা, এখন কী পদক্ষেপ নেবে ভারত দেশবাসী তারেক রহমানের নেতৃত্বে নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখছে ফোন নম্বর মুখস্থ থাকাই কাল হলো তোফাজ্জলের? আরও কিছু সংস্কার কমিশন করার পরিকল্পনা আছে : নাহিদ মুসল্লিদের প্রতিরোধের মুখে স্বৈরাচারী হাসিনার নিযুক্ত খতিব রুহুল আমিনের পলায়ন আইন নিজের হাতে তুলে নেয়া দেশের জন্য অশনিসংকেত: অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার

চিকিৎসা শেষ হওয়ার আগেই কেন বাসায় ফিরলেন বেগম খালেদা জিয়া

শাহজাহান সাজু :
  • আপডেট সময় বুধবার, ২ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

বাংলাদেশের বিরোধী দল বিএনপির চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দুই মাস ২১ দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর তার গুলশানের বাসায় ফিরেছেন। খালেদা জিয়ার চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, যে হাসপাতালে তিনি চিকিৎসাধীন ছিলেন, সেখানে কর্মীদের মধ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় খালেদা জিয়াকে তারা বাসায় রেখে চিকিৎসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল হলেও সুস্থ নয় বলে জানিয়েছেন তার মেডিক্যাল বোর্ড। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে মেডিক্যাল বোর্ডের প্রধান অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদার এই কথা জানান। তিনি বলেন, উনার দুইটা কন্ডিশন। এক নাম্বার, উনি ক্লিনিক্যালি স্টেবল বাট নট কিউর। বাট সি ইজ নট ফ্রি অব ডিজিস। দুই নম্বর হচ্ছে, আমাদের কোভিড পরিস্থিতি, সেকেন্ডারি ইনফেকশন এবং সি ইজ বেরি মার্চ বারগানেবল। সেজন্য আপাতত উনাকে বাসায় পাঠাচ্ছি। এরপরে যদি কোনো রকম ক্রাসিস হয় উই আর রেডি টু রেসিভিং হার এগেইন ইন হসপিটাল।
খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার প্রসঙ্গ টেনে অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদার বলেন, আমাদের বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যতগুলো পজিবল ট্রিটমেন্ট ছিলো তা আমরা দিয়েছি। আমরা হসপিটালের ডাক্তারদের সাথে, বাইরের কনসালটেন্টের সাথে, অন্যান্য হাসপাতালের বিশেষজ্ঞদের সাথে আলোচনা করেছি। আমরা বিদেশে কনসালটেন্টদের সাথে, ইউকে, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়ার কনসালটেন্টদের সাথে কথা বলেছি। সবারই একই মত যে, আপাতত আমরা কনট্রোল করেছি। বাট সী নিডস টু গো এবরোড ফর হার পারমেন্টে ট্রিটমেন্ট। খালেদা জিয়ার মেডিক্যাল বোর্ডের চিকিৎসকরা জানান, তার রোগের চিকিতসা হয়নি। তবে রোগের জটিলতা কিছু কমনো হয়েছে। যে কারণে খালেদা জিয়া আশঙ্কামুক্ত নন।
বসুন্ধরায় এভারকেয়ার হাসপাতালের ১১ তলায় মিলনায়তনে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। এতে মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্য অধ্যাপক এফ এম সিদ্দিকী, অধ্যাপক এম এস আরেফিন, অধ্যাপক একিউএম মহসেন, অধ্যাপক শেখ মুহাম্মদ আবু জাফর, অধ্যাপক নুর উদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক লুতফুল আজিজ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাইফুল ইসলাম, অধ্যাপক এজেডএস জাহিদ হোসেন, অধ্যাপক জাফর ইকবাল, মুহাম্মদ আল মামুন, ডা. রফিকুল ইসলাম, ডা. শাহরিয়ার সাইদ,ডা. আরমান রেজা চৌধুরী প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন। গত ১৩ নভেম্বর লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হয়ে খালেদা জিয়া এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন। লিভারে রক্তক্ষরণের কারণে তাকে দুই মাস সিসিইউতে রেখে চিকিতসা দেয়া হয়। কেবিনে আনা হয় ১০ জানুয়ারি। বিএনপি চেয়ারপারসনের সুচিকিতসার জন্য অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের একটি মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করে এভারকেয়ার হাসতাল কর্তৃপক্ষ। এই টিমে আরো দুইটি বেসরকারি হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিতসকদের যুক্ত করা হয়।
খালেদা জিয়া তিন দফায় এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন। এবারই প্রথম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের থেকে মেডিক্যাল বোর্ড সংবাদ সম্মেলন করে গণমাধ্যমকে বিএনপি চেয়ারপারসনের অবস্থা অবহিত করে।খালেদা জিয়া বর্তমানে সুস্থ না হলেও কেনো ছাড়পত্র মেডিকেল বোর্ড দিচ্ছে জানতে চাইলে মেডিকেল বোর্ডের সদস্য অধ্যাপক এফএম সিদ্দিকী বলেন, দুইবার মেসিভ ব্লিডিং উনার একটা জীবন সংকটাপন্ন অবস্থায় চলে গিয়েছিলো। এখন আমাদের স্পেসিফিক ম্যানুভারিংয়ের পরে আমরা মনে করছি যে, ওই ধরনের মেসিভ ব্লিডিং হওয়ার সম্ভাবনা আপাতত দৃষ্টিতে নাই। কিন্তু মেডিক্যাল প্রোফেশনে ১০০% গ্যারেন্টি কিছুতে দেয়া যাবে না।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ৮১ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর গুলশানে নিজ বাসভবন ‘ফিরোজা’য় ফিরেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। গত মঙ্গলবার (১ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যার পর ছাড়পত্র নিয়ে হাসপাতাল থেকে রওনা হয়ে রাত সাড়ে ৮টার দিকে তিনি বাসায় পৌঁছান।
এদিকে খালেদা জিয়ার বাসায় ফেরার খবরে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা হাসপাতাল প্রাঙ্গণ এবং গুলশানের বাসার সামনে বিকেল থেকেই ভিড় করেন। গত ১৩ নভেম্বর রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন খালেদা জিয়া। সেখানে তার ‘পরিপাকতন্ত্রে’ রক্তক্ষরণ এবং লিভার সিরোসিসের কথা জানান মেডিকেল বোর্ড।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্য প্রফেসর ডা. ফখরুদ্দিন মোহাম্মদ সিদ্দিকী সংবাদ সম্মেলনে জানান, করোনার বর্তমান ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ ঝুঁকি এড়াতেই বিএনপি চেয়ারপারসন হাসপাতাল থেকে বাসায় যাচ্ছেন। তবে এভারকেয়ারে গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধানেই বাসায় খালেদা জিয়ার চিকিৎসা চলবে।
তিনি বলেন, আমরা অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেছি, আপাতদৃষ্টিতে মেজর রক্তক্ষরণের চান্স সম্ভবত থামানো গেছে। তারপর সিসিইউতে রেখে আরও ছয়দিন পর্যবেক্ষণ করি। তখনও দেখেছি, উনার আর রক্তক্ষরণ হচ্ছে না। এরপর আমরা উনাকে শিফট করে কেবিনে নিয়ে আসি। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি সাজা নিয়ে কারাগারে যেতে হয় খালেদা জিয়াকে। পরে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায়ও তার সাজা হয়। করোনা মহামারি, স্বাস্থ্যগত অবস্থা ও বয়স বিবেচনায় ২০২০ সালের ২৫ মার্চ তাকে শর্তসাপেক্ষে অন্তর্র্বতীকালীন মুক্তি দেয় সরকার। এরপর কয়েক দফা এ মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়।
গত বছরের মাঝামাঝি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও দুই দফা খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে যেতে হয়। ৭৬ বছর বয়সী এ সাবেক প্রধানমন্ত্রী অনেক বছর ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস, চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন।
গত বছরের ১১ এপ্রিল খালেদা জিয়া করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন। ২৭ এপ্রিল তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ৩ মে শ্বাসকষ্ট অনুভব করলে কেবিন থেকে সিসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। বিএনপির পক্ষ থেকে তার করোনামুক্তির খবর দেওয়া হয় ৯ মে। ৩ জুন চিকিৎসকদের পরামর্শে তাকে কেবিনে ফিরিয়ে আনা হয়। এর ১৬ দিন পর, সব মিলিয়ে তখন প্রায় পৌনে দুই মাস হাসপাতালে থেকে চিকিৎসা নিয়ে ১৯ জুন বাসায় ফেরেন তিনি। এর মধ্যে করোনার দুই ডোজ টিকাও নেন।
এরপর গত বছরের ১২ অক্টোবর খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য আবারও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ২৫ অক্টোবর তার ছোট একটি অস্ত্রোপচার করা হয়। এরপর হয় বায়োপসি পরীক্ষা। সেবার প্রায় এক মাসের মতো রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থেকে গত ৭ নভেম্বর ছাড়পত্র নিয়ে গুলশানের বাসভবন ‘ফিরোজায়’ ফেরেন খালেদা জিয়া। এর পরিপ্রেক্ষিতে খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসায় বিএনপির পক্ষ থেকে তাকে বিদেশে পাঠাতে সরকারের কাছে বারবার আর্জি জানানো হলেও অন্তর্র্বতীকালীন মুক্তির শর্তের বিষয়টি উল্লেখ করে সরকার কোনোবারই সে আবেদনে সাড়া দেয়নি।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com