গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে তাসলীমা বেগম যোগদান করেন ৩ বছর ৩ মাস ১৫ দিন আগে। প্রশাসনের এ সরকারি কর্মকর্তা উপজেলায় ১ম নারী ইউএনও। দীর্ঘ কর্মময় জীবনে জনপ্রতিনিধি, বীর মুক্তিযোদ্ধাবৃন্দ, বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, শিক্ষক, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, ছোট শিশু, বৃদ্ধ নারী-পুরুষসহ সর্বস্তরের সকল শ্রেণী পেশার মানুষের কাছে হয়ে উঠে ছিলেন প্রিয় তাসলীমা। সরকারি নিয়মে তিনি উপজেলা নির্বাহী অফিসার, কিন্তু উপজেলা বাসীর কাছে তিনি ব্যাতিক্রম পরিচয়ে ছিলেন। সরকারি সকল সেবা মানুষের দোঁড় গোড়ায় পৌঁছে দিয়ে তাদের আপন করে ছিলেন। তিস্তার ভাঙনে ছুটেছেন চরে মানুষের পাশে দাড়িয়েছেন। সেবা দিতে গিয়ে দিন-রাত বুঝেন নাই। করোন কারীন সময়ে রাতে নিজে বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাদ্য সহায়তা দিয়েছেন। কম্বল দরিদ্র মানষজনকে রাতে বাড়িতে গিয়ে দিয়ে আসতেন। হোটেল শ্রমিকদের হোটেলে গিয়ে করোনা কালীন খাদ্য পৌঁছে দিয়েছেন। আগুনে পুড়ে যাওয়া বাড়ি ছুটে গেছেন দিয়েছেন সহায়তা। এছাড়া ব্যাক্তিগতভাবে অনেক মেধাবী দরিদ্র ছাত্রকে লেখাপড়ার খরচ দেওয়ার নিয়েছেন দায়িত্ব আবার কাউকে দিয়েছেন সহায়তা। তবে এসবের বিষয়ে প্রচার বিমুখ ছিলেন। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাবৃন্দ, বৃদ্ধ নারী-পুরুষ তাকে মা বলে ডাকতো। তিনিও তাদের বাবা-চাচা ও মা বলেই ডাকতেন। যে কোন পেশার সিনিয়র ব্যাক্তিকে সম্মানজনকভাবে ডাক দিতেন। শিশু ও বৃদ্ধ নারী-পুরুষকে দেখা মাত্র কোলে টেনে নিতেন। তার মহতি সেবার কারণে সরকারিভাবে ইউএনও হলেও গঙ্গাচড়া বাসীর কাছে ইউএনও ছিলেন না। কারো মা, কারো মেয়ে আবার কারো অভিভাবক কিংবা বোন হিসেবে ছিলেন। সরকারি সেবা ও নির্দেশনা পালন করেছেন কঠোরভাবে। তারপরও একজন সরকারি কর্মকর্তা সেবা ও ভালবাসার মাধ্যমে জয় করে নিয়েছেন উপজেলা বাসীর হৃদয় জায়গা। আরা তাই বদলী জনিত বিদায়ে গঙ্গাচড়া বাসীর অশ্রুজলে বিদায় নিলেন ১ম নারী ইউএনও তাসলীমা বেগম। তার বদলীর কথা উপজেলায় ছড়িয়ে পড়ে প্রায় ১ মাস আগে। খবরের সাথে মর্মাহত হয় মানুষজন। মাস জুড়ে কেউ অফিস বা বাসায় গিয়ে জানিয়েছেন শুভেচ্ছা, দিয়েছেন উপহার ফেলেছেন কেঁদে। এভাবে মাস জুড়ে চলতে থাকে ব্যাক্তি, সংগঠন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক, বীর মুক্তিযোদ্ধা, সহকর্মী, বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী, উপজেলা পরিষদ, সাংবাদিক, স্কাউটস, রিক্সাচালক, ফকির, পরিছন্নকর্মী, দিন মজুরসহ নানা পেশার মানুষের শুভেচ্ছা উপহার আর কান্না। গতকাল বৃহস্পতিবার বিদায় বেলায় নবাগত উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ এরশাদ উদ্দিনকে দায়িত্ব বুঝে দিয়ে বিদায় নেন তাসলীমা বেগম। গাড়ীতে উঠার সময় কেদে ফেললেন উপজেলা চেয়ারম্যান রুহুল আমিন, কর্মকর্তাবৃন্দ, বৃদ্ধ ফকির নারী ও পুরুষ। নিজেও কেঁদে কেঁদে বিদায় চিলে গেলেন নতুন কর্মস্থলে যোগদানের জন্য। বিদায়ে গঙ্গাচড়া বাসী দোয়া ও ভালবাসা দিয়ে জানিয়ে দিলো তাসলীমা যেখানে থাকো ভাল থাকো, সরকারি দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করে মানুষের হৃদয়ে থাকো।