সারাদেশের মতো নরসিংদীর মাধবদীতেও নানা অযুহাতে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। নিত্যপণ্যের দাম কোন ভাবেই ভোক্তাদের নাগালে আসছে না। দফায় দফায় নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি হওয়ায় মাধবদীর নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষ এখন দিশেহারা। করোনার ব্যাপক প্রভাব পড়েছে নিম্ন- মধ্যবিত্ত সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায়। কাজ হারিয়ে নিয়মিত আয়-রোজগার কমে যাওয়ায় একদিকে যেমন বিপাকে পড়েছেন আবার ভোগ্যপণ্যের দাম প্রতিনিয়ত লাগামহীনভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রয়োজনীয় খাদ্য চাহিদা মেটাতেও ব্যর্থ হচ্ছেন তারা। সম্প্রতি নরসিংদী জেলার মাধবদীর বিভিন্ন হাট-বাজারে দেখা গেছে খাদ্যপণ্যের অস্বাভাবিক দামের চিত্র। এর প্রভাব পড়েছে মধ্যবিত্ত, বেকার, চাকরিচ্যুত ও খেটে খাওয়া মানুষ জনের জীবনযাত্রায়। বর্তমান বাজারে প্রতি কেজি গরুর গোস্ত কিনতে হচ্ছে ৬’শ টাকা থেকে ৬৫০ টাকায়, ছাগলের (খাসি) গোস্ত ৮’শ থেকে ৮৫০ টাকা, মুরগি বয়লার ১৮০, সোনালী ২৫০, দেশী ৩৭০ টকা প্রতি কেজি, মোটা চাল কেজি প্রতি ৪০ টাকা, চিকন চাল ৫০-৭৫ টাকা, ইলিশ মাছ ৬০০-১৫০০ টাকা, শিংমাছ (চাষ করা) ৪০০-৬০০ টাকা, অন্যান্য মাছ সর্ব্বনিম্ন ৩০০ টাকা কেজি (গড়ে), সোয়াবিন তেল (খোলা) ১৯০ টাকা, সরিষা তেল ২৮০ টাকা, বিভিন্ন ডাল ১০০-১৪০ টাকা, চিনি ৮৫ টাকা, শাক-সবজি (প্রকার ভেদে) ৪০-৮০ টাকা, প্রতি পিস ডিম ৯-১৫ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া অন্যান্য মসলা সহ নিত্যপন্যের দামও বেড়েছে আকাশচুম্বি। এসব দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতি পরিস্থিতিতে নাভিশ্বাস মাধবদীর সাধারণ মানুষজন। বিশেষ করে এসব মানুষজন বাড়ি থেকে পরিকল্পনা করে বাজারে গেলেও সে হিসেবে পণ্য ক্রয় করতে পারছেন না। এদিকে আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারের দফায় দফায় লকডাউন আর বিভিন্ন বিধি-নিষেধ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারির কারনে কর্মহীন হয়ে পড়েছে শ্রমজীবী মানুষেরা। এর প্রভাবে মধ্যবিত্ত ও স্বল্প আয়ের পরিবারগুলো চরম আর্থিক সঙ্কটে পড়েছে। ইতোমধ্যে মধ্যে হু হু করে বেড়ে চলেছে ভোগ্য ও নিত্যপণের জিনিস পত্রের দাম। এমন দামের কারণে একেবারই বেসামাল নিম্ন ও মধ্যবিত্ত সাধারণ মানুষেরা। দিনদিন তাদের ব্যয় বাড়লেও, বাড়ছে না আয়-রোজগার। ফলে সংসার চলাতে হাঁসফাঁস উঠেছে তাদের। বিদ্যমান পরিস্থিতি সামাল দিতে ছিন্নমূল পরিবারের অনেকে বেঁছে নিয়েছে ভিক্ষাবৃত্তি ও চুরি-চামারি কার্যকলাপ। সম্প্রতি মাধবদীর মহিশাশুড়া ইউনিয়নের বালুচর গ্রামের ১৩ বছরের কিশোর অন্তর জিবিকার সন্ধানে ইজিবাইক নিয়ে রাস্তায় বের হলে ইজিবাইক চালক অন্তরকে খুন করে দুর্বৃত্তরা তার গাড়িটি নিয়ে পালিয়ে যায়। এমনকি শহরের আশপাশের গ্রামগুলো থেকে পুলিশ প্রায় সময়ই গভীর রাতে সংঘবদ্ধ ডাকাত দলকে আটক করছে। সেই সঙ্গে মানুষের এই অভাব অনটনকে পুঁজি করে ফুঁসে উঠেছে স্থানীয় দাদন ব্যবসায়ীরা। বিভিন্ন পরিবারের লোকজন তাদের দায়ভার সারতে ওইসব সুদারুদের কাছে ধর্না দিচ্ছে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে দাদন ব্যবসায়ীরা চরা সুদ গ্রহণ করছে। এমতাবস্থায় সাধারণ মানুষের জীবনযাপনে প্রচন্ড-আঘাত হানতে শুরু করেছে। অধিক দামে পণ্যসামগ্রী কেনা ভুক্তভোগীদের বোবা কান্না যেন দেখার কেউ নেই। অস্থির এই বাজার নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্টদের সঠিক তদারকি না থাকলে সাধারণ মানুষ আরও বেকায়দায় পড়তে পারে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। শফিকুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি জানান, যেভাবে ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়েছে, সে তুলনায় আয় বাড়েনি তার। এতে করে পরিবারের চাহিদা পূরণে বাড়ছে ঋণের বোঝা। তিনি আরও বলেন, আগে একাধিক খাবারের আইটেম থাকতো। এখন খাদ্যপণ্যের দাম বেশি হওয়ায় খাবারের সেই আইটেম কমানো হয়েছে। মাধবদী বাজারের বাবুর বাড়ি গেটের রহমান স্টোরের স্বত্বাধিকারী ওসমান গনি বলেন, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে চাল-ডাল, তেল-মসলা সহ সব ধরনের জিনিস পত্রের দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে। এতে করে ক্রেতা সাধারণের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। মাধবদী বাজারের কাঁচামাল ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন আনু মিয়া জানান, কাঁচা মাল সবজি তরকারী বেশি মূল্যে ক্রয় করে বিক্রি করতে হয়, এতে ক্রেতাদের সাথে প্রায় কথা কাটাকাটি হয়। মাধবদী পৌর মেয়র হাজ্বী মোশাররফ হোসেন প্রধান মানিক বলেন, যারা কৃত্রিম সংকট বা অতিরিক্ত দামে খাদ্যপণ্য বিক্রি করবে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। ভোক্তাদের অধিকার রক্ষায় বাজার মনিটরিং করা হবে। এছাড়াও টিসিবির মাধ্যমে ভোক্তাদের সহযোগিতা করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে নিত্যপণ্যের বাজারের উর্দ্ধগতিতে উৎকন্ঠিত সাধারণ মানুষ নিত্যপণ্যের বাজার স্থিতিশীল রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিয়মিত বাজার মনিটরিং এবং কৃত্রিম সংকট সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জোর দাবী জানিয়েছেন মাধবদীর ভুক্তভোগী সাধারন মানুষ।