কৃষ্ণ সাগরের সঙ্গে নৌপথে যুক্ত এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ ইউক্রেনীয় শহর খেরসন দখল করেছে রাশিয়া। চলমান অভিযানে এই প্রথম ইউক্রেনের কোনও গুরুত্বপূর্ণ শহরের নিয়ন্ত্রণ নিলো রুশ বাহিনী। ইউক্রেনের রাশিয়ার সামরিক অভিযানের সপ্তম দিন বুধবার ভোর থেকেই খেরসনের দিকে আগায় রুশ বাহিনী। ওই দিনই রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, খেরসনের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতে।
অবশ্য ইউক্রেনের সরকার রুশ দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে। খেরসনের মেয়র ইগোর কোলিখাইয়েভ ফেসবুকে লিখেছেন, আজ আমাদের সিটি কাউন্সিলের সশস্ত্র পরিদর্শনকারীরা ছিল। আমরা দেখিয়ে দিয়েছি যে শহরকে সুরক্ষায় আমরা কাজ করছি। শহরে ইউক্রেনের সেনা সদস্য নেই।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন’র প্রতিনিধি নিক প্যাটন ওয়ালশ ইউক্রেন থেকে বুধবার জানান, মনে হচ্ছে খেরসনের তাৎপর্যপূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে রুশ সেনাবাহিনীর হাতে। তারা থাকার জন্য এসেছে হয়তো। মনে হচ্ছে দখল। রুশ সেনাবাহিনী মার্শাল ল জারি করেছে। খেরসনে রুশ দখলদার বাহিনী কর্তৃক কারফিউ জারির খবর পাওয়া গেছে। এর আওতায় দলবদ্ধভাবে মানুষের চলাফেরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউজউইকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খেরসন দখল রাশিয়ার সেনাবাহিনীর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত বিজয়। কারণ, দখলদার বাহিনীর ইউক্রেনের ভূখ- নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার অভিযান চলমান রয়েছে। এই শহর গুরুত্বপূর্ণ জাহাজ নির্মাণ শিল্প রয়েছে এবং ইউক্রেনের একটি বড় অর্থনৈতিক কেন্দ্র। ইউক্রেনের দীর্ঘতম নৌপথ ডিনিপার নদীর পাশে এই শহরের অবস্থান। এই নৌপথ ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ অংশে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়। রাশিয়ার দখল নেওয়া ক্রিমিয়ার ভূখ-ে যাতায়াতেরও সুযোগ দেবে খেরসন। এছাড়া এখান থেকে গুরুত্বপূর্ণ বন্দর শহর ওডেসাতেও যাওয়া যাবে।তবে রাশিয়ার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো খেরসনের অবস্থান কৃষ্ণ সাগর সংশ্লিষ্ট হওয়ার কারণে। এর ফলে কৌশলগত অবস্থানে সেনা মোতায়েন করতে পারবে তারা। এখানকার জলসীমা পূর্ব ইউরোপের অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিবেশী রোমানিয়া, বুলগেরিয়া ও মলডোবাতে পৌঁছানো যাবে এখান থেকে। ইতোমধ্যে গুজব ছড়িয়েছে, মলডোবা দখলের প্রস্তুতি নিচ্ছে রাশিয়া।
গ্লোব অ্যান্ড মেইলকে আইনজীবী সের্গি দিমিত্রুক বলেন, ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ শহর খেরসন। রাশিয়ার সেনাবাহিনী ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভের দখল নিতে যখন আক্রমণ জোরদার করেছে তখন খেরসনের পতন হলো। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, রুশ প্যারাট্রুপাররা খারকিভে নেমেছে। একই সঙ্গে বুধবারজুড়ে শহরের গুরুত্বপূর্ণ অংশে বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে। আক্রমণের তীব্রতা বাড়ার কারণে রুশ বাহিনীর হাতে দ্বিতীয় বড় হিসেবে খারকিভের পতন হতে পারে। খারকিভ মেয়র ইহোর টেরেখব এক ভিডিও বার্তা বলেন, আমরা এমনটি ঘটবে বলে কখনও ধারণা করিনি। সর্বাত্মক ধ্বংসযজ্ঞ, বিনাশ, ইউক্রেনের জনগণের ওপর গণহত্যা– এটি ক্ষমার অযোগ্য। ইউক্রেনীয় যোদ্ধাদের দৃঢ় প্রতিরোধের পরও কৌশলগত পয়েন্ট দিয়ে রুশদের এগিয়ে যাওয়া অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে, ইউক্রেনের পারমাণবিক স্থাপনাসহ পরিবেশের জন্য সম্ভাব্য ক্ষতিকর স্থানগুলোতে সেনাবাহিনীর অবস্থানে উদ্বেগ বাড়ছে। এমন স্থানের মধ্যে রয়েছে জাপোরিজ্জিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। এটি ইউরোপের বৃহত্তম এবং বিশ্বের বৃহত্তম দশটির একটি। রুশ সেনাবাহিনী এটি ঘিরে রেখেছে।
আরেকটি কুখ্যাত স্পট হলো চেরনোবিল পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। এটি একটি পরিত্যক্ত পারমাণবিক কেন্দ্র। ১৯৮৬ সালে ভয়াবহ পারমাণবিক বিপর্যয় এখানেই ঘটেছিল। এটিও এখন রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে।যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র নিউজউইককে বলেন, স্থানীয় কর্তৃপক্ষের প্রকাশ্য বক্তব্যগুলো আমরা দেখেছি। কিন্তু এসবের ভিত্তিতে কথা বলার মতো অবস্থানে আমরা নেই।