গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার বুক চিরে বয়ে গেছে ঘাঘট নদ। ইতোমধ্যে এই নদটি রয়েছে বালুদস্যুদের দখলে। তারা বিভিন্ন স্থানে বসিয়েছে ড্রেজার মেশিন। পাইপ টেনে অবৈধভাবে তোলা হচ্ছে বালু। এর ফলে নদী ভাঙনে বিলীন হচ্ছে আবাদী জমি ও বসতবাড়ি। বালুখেকোদের খপ্পরে মানুষেরা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও প্রশাসন নিরব ভূমিকা পালন করছে বলে ভুক্তভোগিদের অভিযোগ। সম্প্রতি সাদুল্লাপুর উপজেলার ঘাঘট নদের বিভিন্ন স্থানে দেখা গেছে, অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসব। এসব বালু তুলে অনেকের খাল-পুকুর ভরাটসহ ট্রাক্টর ভর্তি চুক্তিতে বিক্রি করা হচ্ছে অন্যত্র। জানা যায়, উপজেলার বনগ্রামের টুনিরচর থেকে নলডাঙ্গার শ্রীরামপুর পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটার বয়ে গেছে ঘাঘট নদ। এই নদটির প্রায় ১০-১২ টি পয়েন্টে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করছে কতিপয় স্বার্থনেশি মহল। তাদের কিছুতেই থামছে না বালু উত্তোলনের অপকর্ম। এই মহলে দাপট দেখে মনে হয় ঘাঘট নদটি যেনো তাদের পৈত্রিক কিংবা ক্রয় সম্পত্তি। বিশেষ করে নদীর তীরবর্তী ও আশপাশের এলাকার বালু ব্যবসায়ী রাজু মিয়া, হায়দার আলী, আনোয়ারুল ইসলাম, ময়নুল ইসলাম, ফুলমিয়া, শহিদ মিয়াসহ আরও অনেকে নির্বিঘেœ বালু উত্তোলন করছে। তারা নদীতে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে ফসলি জমি ও বাড়ির উঠান-রাস্তার পাশ দিয়ে হাজার হাজার ফুট পাইপ টেনে অবাধে বালু তুলেছেন। লাখ লাখ টাকা মূল্যের এইসব বালু বিক্রি করে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনেছেন বালুদস্যুরা। এরপ্রভাবে নদী ভাঙনে মানুষ হারাচ্ছে বাপ-দাদার বসতভিটা ও ফসলি জমি। কেউ কেউ ভূমিহীন সেজে আশ্রয় নিচ্ছে অন্যত্র। এই বালু উত্তোলন বন্ধের জন্য প্রশাসনকে জানালেও কোনরূপ কর্ণপাত করা হয়নি মর্মে ভুক্তভোগি মানুষের অভিযোগ। তবে জোর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মাঝে মধ্যে লোক দেখানো অভিযান চালিয়েছে প্রশাসন। এমন অভিযানে কয়েকদিন বালু উত্তোলন বন্ধ থাকার পর আবারও চালু করা হয় ড্রেজার মেশিন। এসব তথ্য নিশ্চিত করে স্থানীয়রা জানান, ড্রেজার মেশিনের বিকট শব্দে অতিষ্ট হয়ে উঠেছেন। শুধু ঘাঘট নদ থেকে নয়, কৃষি জমি থেকেও বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। গ্রামীন রাস্তা পাশ দিয়ে পাইপ টানার কারণে জলাবদ্ধসহ চলাচলের বিঘœ সৃষ্টি হচ্ছে। সেই সঙ্গে বালু বহনে ব্যবহার করা হচ্ছে অবৈধ ট্র্যাক্টর। এসব গাড়ি বেপরোয়া গতিতে ঘন ঘন যাতায়াতের ফলে নষ্ট হচ্ছে রাস্তাঘাট। ধুলাবালিতে দুষিত হচ্ছে পরিবেশ। ঘটছে সড়ক দূর্ঘটনাও। একাধিক বালু ব্যবসায়ী জানান, ইউনিয়ন ভিত্তিক দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-পুলিশ পরিদর্শকের সঙ্গে যোগাযোগা করে নদী থেকে বালু তোলা হচ্ছে। সাদুল্লাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার রায় বলেন, কোথায় বালু তোলা হচ্ছে সেটি জানা নেই। খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সাদুল্লাপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাইফুর রহমান জানান, ইতোমধ্যে বেশ কিছু স্থানে অভিযান চালিয়ে বালু উত্তোলন বন্ধ করা হয়েছে। এ অভিযান চলমান থাকবে।