সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৩৭ পূর্বাহ্ন

সাওম, সাহরি ও ইফতার

মুহাম্মদ ইমদাদুল হক ফয়েজী:
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ৮ এপ্রিল, ২০২২

মহিমান্বিত রমজানের প্রধান ইবাদত ‘সাওম’ বা ‘ রোজা’। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘ হে মুমিনগণ, তোমাদের জন্য বিধিবদ্ধ করা হয়েছে রোজা, যেমন বিধিবদ্ধ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর, যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।’ (সূরা বাকারাহ : ১৮৩)। সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার ও স্ত্রী সম্ভোগ থেকে বিরত থাকাকে ‘সাওম’ বা ‘সিয়াম’ বলা হয়। শব্দ দু’টি সমার্থক। ‘সিয়াম’ বহুবচন, ‘সাওম’ একবচন। কোরআন কারিমে উভয় শব্দের ব্যবহার রয়েছে। এ আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ‘সিয়াম’ শব্দ (বহুবচন) চয়ন করেছেন
রাসূল সা: ইরশাদ করেছেন- ‘যে ব্যক্তি মিথ্যা বলা ও সে অনুযায়ী কাজ করা বর্জন করেনি, তার এ পানাহার পরিত্যাগ করায় আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই।’ (বুখারি) চিন্তা করুন, রোজাদার অবস্থায় যে মিথ্যা বলে ও মন্দ কাজ করে, তাকে কত কঠোর ভাষায় সতর্ক করা হয়েছে। রাসূল সা: আরো বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘সাওম ব্যতীত আদম সন্তানের প্রতিটি কাজই তার নিজের জন্য, কিন্তু সাওম আমার জন্য; আমি নিজে এর প্রতিদান দেবো। সাওম ঢালস্বরূপ, তোমাদের কেউ যেন সাওম পালনকালে অশ্লীলতায় লিপ্ত না হয় এবং ঝগড়া-বিবাদ না করে, যদি কেউ তাকে গালি দেয় অথবা তার সঙ্গে ঝগড়া করে, তাহলে সে যেন বলে, আমি সায়িম (রোজাদার)।’ (বুখারি)
দেখুন, হাদিসে রোজাকে ঢাল হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। ঢাল বলা হয়, যোদ্ধা নিজের সুরক্ষার জন্য যা ব্যবহার করে। হাদিস থেকে এ কথা সুস্পষ্ট যে, রোজাদারের জন্য রোজা হতে হবে ঢালস্বরূপ, তথা সুরক্ষাকারী; যা তাকে সব কদার্যতা ও গোনাহর কাজ থেকে সুরক্ষা দেবে। পরবর্তী অংশে শুধু ঝগড়া-বিবাদ থেকে বিরত থাকার কথা বলা হয়নি বরং আরো অগ্রসর হয়ে বলা হয়েছে, কেউ গালি দিলে বা ঝগড়া করতে উদ্যত হলে, রোজাদার নিজেকে সংযত রাখবে এবং বলবে, আমি রোজাদার। আয়াত এবং হাদিস থেকে প্রতীয়মান হয়, শুধু উপবাস নয় বরং অন্তর ও দেহের সব ক্লেদ-কলুষতা এবং পাপাচারমুক্ত সিয়াম সাধনাই রোজাদার ব্যক্তিকে তাকওয়া অর্জনের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে।
বস্তুত, মহান আল্লাহ আমাদের জন্য সিয়াম সাধনায় দু’টি বৈধ বিষয়কে সাময়িকভাবে অবৈধ করে কাজ দু’টি থেকে বিরত রাখার পাশাপাশি, তাঁর সব বিধিনিষেধ মেনে চলার তথা তাকওয়া অর্জনের প্রশিক্ষণ প্রদান করেন। যাতে করে এ আলোকে আমরা আমাদের সামগ্রিক জীবন পরিচালনা করি এবং নিজেকে একজন সফল মোমিন হিসেবে গড়ে তুলি।
রমজানুল মোবারকের আনন্দঘন দু’টি ইবাদত ইফতার ও সাহরি। এ আমল দু’টি আমাদের পানাহারের প্রয়োজনীয়তা পূরণ করার পাশাপাশি অবারিত বরকত ও পুণ্য বয়ে আনে। সূর্যাস্তের সাথে সাথে ইফতার করা এবং সুবহে সাদিক এর পূর্বক্ষণে সাহরির পানাহার বন্ধের মাধ্যমে মহান আল্লাহর ফরমানের অনুপম আনুগত্য প্রকাশ পায়। পূর্ণ রাত পানাহারের সুযোগ দেওয়ার পর সুবহে সাদিক উদয় মুহূর্তে মহান প্রভুর নির্দেশ জারি হয়, এবার থাম, আর অনুমতি নেই, মোমিনগণ তাই করেন। দিনব্যাপী উপবাস করে করে রোজাদারগণ আবার পানাহার শুরু করতে মহান প্রভুর ফরমানের অপেক্ষায় থাকেন। সূর্যাস্তের সাথে সাথে নির্দেশ করা হয়, এবার শুরু কর, রোজাদারগণ মুহূর্তকাল বিলম্ব না করে, আনন্দ-খুশির সাথে পানাহার শুরু করেন। তখন সবার মাঝে অনেকটা আনন্দ-খুশি কাজ করে। রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘রোজাদারের জন্য রয়েছে দু’টি খুশি। যা তাকে আনন্দিত করে। রোজাদার ইফতারের সময় খুশি হয় এবং যখন সে তার রবের সাথে সাক্ষাৎ করবে, তখন সে রোজার বিনিময়ে আনন্দিত হবে।’ (বুখারি)।
রাসূলুল্লাহ সা: সূর্যাস্তের সাথে সাথে ইফতার করতেন। তাই ইফতারের সময় হওয়া মাত্রই ইফতার করা সুন্নাহ। রাসূল সা: ইরশাদ করেছেন, ‘মানুষ যত দিন পর্যন্ত সময় হওয়া মাত্র ইফতার করবে, তত দিন কল্যাণের সাথে থাকবে।’ (বুখারি)। সুন্নত হলো, খেজুর বা পানি দিয়ে ইফতার করা। রাসূল সা: নামাজের পূর্বে তাজা খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। তাজা খেজুর না পেলে শুকনো খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। যদি শুকনো খেজুর না পেতেন, তাহলে কয়েক ঢোঁক পানি দিয়ে ইফতার করতেন।’ (আহমাদ)
ইফতারের সময় মহান আল্লাহ রোজাদার বান্দাদের বিশেষ অনুগ্রহ ও ক্ষমা করেন, দোয়া কবুল করেন। রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘ইফতারের সময় আল্লাহ তায়ালা অসংখ্য লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন। আর এটা রমজানের প্রতি রাতে হয়ে থাকে।’ (বুখারি ও মুসলিম) অন্য হাদিসে রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘তিন প্রকার লোকের দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না- ইফতারের সময় রোজাদারের দোয়া, ন্যায়বিচারক শাসকের দোয়া এবং মজলুমের দোয়া। (আহমদ)
রোজাদার ব্যক্তিকে ইফতার করানোর মধ্যে রয়েছে অবারিত পুণ্য ও ফজিলত। এতে ধনী-দরিদ্র, আত্মীয়-অনাত্মীয়, পরিচিত-অপরিচিত ইত্যাদির কোনো পার্থক্য নেই। এ প্রসঙ্গে রাসূল সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে, তাকে ওই রোজাদারের সমপরিমাণ পুণ্য দেওয়া হবে, কিন্তু ওই রোজাদার ব্যক্তির পুণ্য থেকে বিন্দুমাত্র হ্রাস করা হবে না।’ (তিরমিজি)
সাহরি রোজার অন্যতম আনুষঙ্গিক আমল। সাওম পালনের নিয়তে রাতের শেষভাগে যা কিছু খাওয়া হয় তাই সাহরি। রাসূল সা: সর্বদা শেষ সময়ে সাহরি খেতেন। তাই একটু দেরি করে সাহরি খাওয়া সুন্নত। রাসূল সা: বলেছেন, ‘তোমরা সাহরি খাও, কারণ সাহরিতে বরকত রয়েছে।’ (বুখারি) অন্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘সাহরি খাওয়া বরকতপূর্ণ কাজ। সুতরাং তোমরা তা পরিত্যাগ করো না। এক ঢোঁক পানি দিয়ে হলেও সাহরি আদায় করো। কারণ যারা সাহরি খায় মহান আল্লাহ তাদের ওপর রহমত বর্ষণ করেন এবং ফেরেশতারা তাদের জন্য রহমতের দোয়া করেন।’ (ইবনে হিব্বান) রাসূল সা: আরো বলেছেন, ‘আমাদের ও ইহুদি, খ্রিষ্টানদের রোজার মাঝে পার্থক্য হলো সাহরি খাওয়া।’ (মুসলিম)




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com