রমজানুল মোবারক রহমত-বরকতের মওসুম। এ মওসুমে আল্লাহ তায়ালার রহমত পরিপূর্ণরূপে বর্ষণ হয়। তাই এ মাসে সবাই আল্লাহ তায়ালার কাছে বেশি বেশি রহমত বরকতের প্রত্যাশা করা চাই। রমজান মাসে বিশেষ কিছু ইবাদত করার সুবর্ণ সুযোগ মিলে। তাই এটি ইবাদতেরও মাস। কেউ যদি এ মাসের ইবাদতগুলো আদায়ে গাফিলতি না করে বরং ধারাবাহিকতা রক্ষা করে, তাহলে আগামী ভবিষ্যতের জন্য সব ইবাদত-বন্দেগি তার অভ্যাসে পরিণত হবে। এ জন্য এ মাসের আমলগুলো খুব গুরুত্বসহকারে পালন করা চাই। আমরা যতটা আন্তরিকতার সাথে প্রভুকে ডাকব, প্রভুও ততটুকুই এগিয়ে এসে সাড়া দেবেন।
রমজান মাসের ইবাদত-বন্দেগির জন্য মহান প্রভু বান্দাদের জন্য বিশেষ অফার করেছেন। এই অফার গ্রহণ করে যারা তাদের দৈনন্দিন আমল পালন করে চলছে, মহান প্রভু তাদের পুরষ্কৃত করবেন। পক্ষান্তরে যারা এ মাস পেয়েও এর যথাযথ কদর করেনি, তাদের জন্য রয়েছে অভিশাপ। হাদিস শরীফে এমনটিই বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তি রমজান মাসকে গুরুত্বসহকারে নেয়নি, বরং অবহেলা করে এর সময়গুলো নষ্ট করেছে, তার প্রতি মালিক অসন্তুষ্ট।
হজরত কা’ব বিন আজরাহ রা: বলেন, একদিন রাসূল সা: উপস্থিত সাহাবিদের উদ্দেশে বললেন, ‘তোমরা মিম্বরের কাছাকাছি এসে বসো’। সাহাবায়ে কেরাম সবাই কাছাকাছি হয়ে বসলে নবী সা: মিম্বরের প্রথম সিঁড়িতে পা রাখেন এবং বলেন, ‘আমিন’। এরপর দ্বিতীয় সিঁড়িতে পা রাখেন এবং বলেন, ‘আমিন’। অনুরূপ তৃতীয় সিঁড়িতে পা রেখেও তিনি বলেন, ‘আমিন’। বয়ান শেষে মিম্বর থেকে নবী সা: নেমে এলে কৌতূহলী হয়ে সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করেন, আপনাকে তো আগে কখনো এমন করতে দেখিনি। তখন নবী সা: বললেন, আমি যখন প্রথম সিঁড়িতে পা রাখি, তখন হজরত জিবরাইল আলাইহিস সালাম উপস্থিত হয়ে বললেন, যে ব্যক্তি রমজান মাস পেয়েছে কিন্তু নিজের গুনাহ মাফ করাতে পারেনি সে ধ্বংস হোক। তখন আমি বললাম, ‘আমিন’। এরপর যখন দ্বিতীয় সিঁড়িতে পা রাখি, তখন জিবরাইল আলাইহিস সালাম বললেন, যার কাছে আপনার নাম পেশ করা হয়েছে কিন্তু সে আপনার প্রতি দরুদ পড়েনি, সে ধ্বংস হোক। তখনো আমি বললাম ‘আমিন’। সর্বশেষ যখন তৃতীয় সিঁড়িতে পা রাখি, তখন জিবরাইল আলাইহিস সালাম বললেন, যে ব্যক্তি তার মা-বাবার কাউকে তাদের বৃদ্ধাবস্থায় পেয়েছে, কিন্তু তাদের খেদমত, সেবা-যত্ন করে জান্নাতের মালিক হতে পারেনি, সেও ধ্বংস হোক। তখনো আমি বললাম, ‘আমিন’। (বায়হাকি-১৫৭২)
অনেকই হয়তো ভাবছেন, রমজানুল মোবারক মাত্র শুরু হলো। আর কিছু দিন না হয় যাক। পরে কোমর বেঁধে ইবাদতে নেমে যাবো। তখন তাহাজ্জুদের জায়নামাজে দাঁড়িয়ে কেঁদে কেঁদে সব গুনাহ মাফ করিয়ে নেবো। সন্তুষ্ট করে নেবো প্রভুকে। এ রকম ধারণা আর স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে।
কেননা, এটি ঈমানদারের চিরশত্রু শয়তানের ধোঁকা। আমাদের ঈমান-আমল ধ্বংসের জন্য শয়তানের এই অশুভ পরিকল্পনাকে প্রশ্রয় দেয়া যাবে না। বরং রমজানের আগে থেকেই আমরা যে পরিকল্পনা লালন করে আসছি, সে পথ ধরেই চলতে হবে। পৌঁছে যেতে হবে গন্তব্যে। আল্লাহ তায়ালা সবাইকে পবিত্র রমজানের হক পরিপূর্ণরূপে আদায় করার তাওফিক দান করুন এবং নবী সা:-এর অভিসম্পাত থেকে রক্ষা করুন। আমিন। লেখক : দাওরায়ে হাদিস, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বাংলাদেশ, বসুন্ধরা, ঢাকা