দেশের প্রধান বিমানবন্দর ঢাকায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। এই বিমানবন্দরে পানি খাওয়ার জন্য সেই পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। বিমানবন্দরে খাবারের দোকানগুলোতে বোতলজাত পানি পাওয়া গেলেও দাম রাখা হয় বেশি। বহির্গমন টার্মিনালের মাঝামাঝি একটি স্থানে উন্মুক্ত পানি খাওয়ার ব্যবস্থা দেখা গেলেও আর কোথাও নেই। তবে সেখানে রয়েছে পানি খাওয়ার জন্য স্টিলের গ্লাস, যা শেকলে আটকানো। যাত্রীরা গ্লাস চুরি করে নেয়। সে কারণেই বাঁধা হয়েছে শেকলে। করোনা মহামারির এ সময়ে ডিসপোজেবল গ্লাস না রেখে একটি গ্লাস রাখায় বিস্মিত যাত্রীরা। দুবাইগামী যাত্রী আবুল কালাম আজাদ বলেন, সবাইকে সামাজিক দূরত্বে থাকতে বলা হয়, অথচ একই গ্লাসে পানি খাওয়ার ব্যবস্থা রেখেছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। এটা কোনওভাবেই স্বাস্থ্যসম্মত না।
এই বিমানবন্দর নিয়ে অভিযোগের অন্ত নেই। বিমানবন্দর ব্যবহারকারীদের একটি বড় অংশ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা এক কোটিরও বেশি প্রবাসী কর্মী। পানি খাওয়ার ব্যবস্থা দেখে অনেকেই এগিয়ে আসেন, তবে কল ছাড়লে দেখা যাচ্ছে পানি নেই। বিমানবন্দরের কর্মীও জানালেন অনেকই সময় কলে পানি থাকে না।
৭২ হাজার ৭৮৫ টাকা দিয়ে ঢাকা থেকে জেদ্দার টিকিট কেটেছেন জমিরুদ্দিন উদ্দিন। তবে টিকিটের টাকার মধ্যে ৭ হাজার ৫৩৭ টাকা কেটে নিচ্ছে সরকার নানারকম চার্জ বাবদ। এরমধ্যে ট্রাভেল ট্যাক্স ও বিমানবন্দর উন্নয়ন ফি বাবদ ৩ হাজার ৮৫৩ টাকা কেটে নেওয়া হয়। জমিরুদ্দিন উদ্দিন বলেন, বিমানবন্দর তো আমরা বিনামূল্যে ব্যবহার করি না। আমাদের টিকিটের টাকা থেকে অনেক ধরনের চার্জ কেটে নেয় সরকার। অথচ বিমানবন্দরে এসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা থাকতে হয়, এক গ্লাস পানি খাওয়ার মতো আন্তরিকতা কী সরকারের নেই?
পানির গ্লাসে শেকল দেখে ক্ষুব্ধ কোনও কোনও প্রবাসী। বাহরাইন প্রবাসী রফিকুল ইসলাম বলেন, গ্লাস শেকল দিয়ে বাঁধতে হলো কেন, নিশ্চয়ই চুরির ভয়ে। তাহলে আমরা প্রবাসীরা বিমানবন্দর থেকে গ্লাস চুরি করি নিয়ে যাবো ? কাতার প্রবাসী আব্দুল কাদের বলেন, আমরা তো আসলে বিদেশ দীর্ঘ সময়ের জন্য যাই। ফলে পকেটে বাংলাদেশি টাকা সঙ্গে নেওয়া প্রয়োজন হয় না। বিমানবন্দরে আসার আগে খুচরা টাকা খরচ করে আসি। ফলে বিমানবন্দরে ভেতরে ঢুকে কোনও খরচ করতে পারি না। বিমানবন্দরের দোকানগুলোতে বাড়িতে দাম রাখে। লম্বা সময় বসে থেকে পানি খেতে গিয়ে বিপদে পড়তে হচ্ছে।
এদিকে ৯ মে বিমানবন্দর শাহজালাল বিমানবন্দরে অকস্মাৎ পরিদর্শন করেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান (সালমান এফ রহমান)। বিমানবন্দর নিয়ে নানা অভিযোগের ভিত্তিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তিনি পরিদর্শন করেন। তবে বিমানবন্দরের যাত্রীসেবার মান নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি। সেদিন সালমান এফ রহমান বলেন, আমি যা দেখেছি এখানে পরিস্থিতি উন্নতি করার অনেক সুযোগ। সেসব সুযোগের কথা আমি সংশ্লিষ্টদের বলে দিয়েছি। সরকার খুব সিরিয়াসলি এ বিষয়টি নিয়েছে। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম বলেন, বিমানবন্দরে পানি খাওয়ার ব্যবস্থা আছে। আমরা আরও জায়গায় পানির ব্যবস্থা রাখবো। কোথাও সমস্যা থাকলে সেটিও দ্রুত সমাধান করবো।-বাংলাট্রিবিউন