ঘুর্ণিঝড় অশনির প্রভাবে টানা বৃষ্টিতে পাকা বোরো ধান ক্ষেত পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় এবং শ্রমিক সংকটের কারণে ধান কেটে ঘরে তুলতে পারছেন না বরিশাল জেলার অধিকাংশ উপজেলার কৃষকরা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেশ কয়েকটি উপজেলার ক্ষেতের ধান ইতোমধ্যে বিনষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়া ক্ষেতে বসেই ধানে সবুজ গেঁজ বের হয়েছে। ফলে হাজারো কৃষক বিপর্যস্ত হয়ে এখন দিশেহারা হয়ে পরেছেন। চাষীরা জানিয়েছেন, দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল দিয়ে যেসব শ্রমিকদের আনা হয়েছিলো, তারা ধানের ক্ষেতে পানি দেখে ইতোমধ্যে পালিয়ে গেছে। ফলে সর্বত্র শ্রমিক সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। উপায়অন্তুর না পেয়ে কৃষক পরিবারের নারী-পুরুষরা এখন পানি থেকে বোরো ধান ঘরে তুলতে প্রানপণ চেষ্টা করছেন। জেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে জেলার দশ উপজেলায় ৫৯ হাজার ৩৩ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। যা গত বছরের চেয়ে তিন হাজার দুইশ’ হেক্টর বেশি। এবার সর্বত্রই বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে ঘূর্ণিঝড় অশনি’র প্রভাবে প্রবল বর্ষনে এসব উপজেলার অধিকাংশ বোরো ব্লকে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সূত্রে আরও জানা গেছে, জেলার কয়েক হাজার কৃষক পরিবারের মধ্যে বোরো মৌসুমে অর্ধেকেরও বেশি বর্গা চাষী রয়েছেন। যাদের জমির ধান আগাম পেকেছে তারা রমজান মাসের মধ্যেই তা কেটে ঘরে তুলেছেন। তবে এর সংখ্যা শতকরা ৫০ ভাগ। বাকি অর্ধেক চাষীর ধান বিলম্বে পাকার কারণে অশনি’র কবলে পরেছে। ওইসব চাষীরাই এখন শ্রমিক সংকটের কারনে বোরো ধান কেটে ঘরে তুলতে না পারায় ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। অসংখ্য চাষীরা বলেন, চলতি মৌসুমে তাদের ক্ষেতে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। এরইমধ্যে ক্ষেতে হঠাৎ করে ক্ষতিকারক কারেন্ট পোকার আক্রমণ, অশনি’র প্রভাবে প্রবলবৃষ্টি ও সবশেষে শ্রমিক সংকটের কারণে এখন ক্ষেতেই ফসল বিনষ্টের মুখে পরেছে। চাষীরা আরও বলেন, ফসল আবাদে আমাদের যে খরচ হয়েছে, এখন তা উঠছে না। এ অবস্থায় সরকারী সহায়তা না পেলে আমাদের আর কোন উপায় থাকবেনা। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বৈরী আবহাওয়া ও ভ্যাপসা গরমের কারণে ধান ক্ষেতে পোকার আক্রমন বেড়ে যায়। তবে ধান দাঁড়ানো অবস্থায় থাকলে কীটনাশক প্রয়োগের মাধ্যমে পোকা র্নিমূল করা সম্ভব। কিন্তু ধান নুয়ে পরলে তা সম্ভব হয়না। ওই কর্মকর্তার আরও বলেন, অশনি’র প্রভাবে প্রবল বর্ষনে বোরো ক্ষেতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। অধিকাংশ উপজেলার ধান পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় এবং শ্রমিক সংকটের কারনে চাষীরা এখন ধান কেটে ঘরে তুলতে পারছেন না। এ অবস্থায় চাষীদের ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে সরকারী সহায়তা প্রয়োজন।