কিশোরগঞ্জ জেলার হোসেনপুরে গবাদিপশুর মধ্যে নতুন একধরনের ভাইরাসজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এক মাস ধরে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে এই ভাইরাসে আক্রান্ত গরুর সংখ্যা ক্রমে বেড়ে চলেছে। এর চিকিৎসা নিয়ে এখন চিন্তিত হয়ে পড়েছেন কৃষকেরা। অন্তত পাঁচজন পল্লি পশু চিকিৎসক জানিয়েছেন, তাঁরা গ্রামের প্রবীণদের কাছে শুনেছেন, গ্রামে আগে কখনো এমন রোগ দেখা যায়নিা পুমদী ইউনিয়নের দ,পুমদী গ্রামের খামারী মোহাম্মদ আলী জানান, এই রোগে আক্রান্ত হলে প্রথমে গরুর শরীরের বিভিন্ন স্থান ফুলে গুটি হয়ে ওঠে। এর সঙ্গে গরুর শরীরের তাপমাত্রা (জ্বর) বেড়ে যায়। এতে আক্রান্ত গরুগুলো নিস্তেজ হয়ে পড়ে। দু-তিন দিনের মধ্যে গুটিগুলো ফেটে কষ (রস) ঝরে। একপর্যায়ে ক্ষতগুলো পচে গরুর শরীর থেকে মাংস খসে পড়ে। এ সময় দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে আশপাশে।উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের তথ্যমতে, দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশেই গরুর শরীরে এই ভাইরাস দেখা দিয়েছে। এ কারণে বাংলাদেশেও এই ভাইরাস ঢুকেছে। এই ভাইরাসটি লাম্পি স্কিন ডিজিজ (এলএসডি) নামে পরিচিত। গত এক মাসে উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর থেকে এই রোগের চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে অন্তত ২৫০টি গরুকে। এই দপ্তরের ভেটেরিনারি সার্জন ডাঃ লুৎফর রহমান বলেন, কিশোরগঞ্জ জেলার হোসেনপুরে গরুর শরীরে এই ভাইরাসটি দেখা দিয়েছে। অথচ এখনো এর কোনো প্রতিষেধক বের হয়নি। মশা ও মাছির মাধ্যমে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। তবে উপজেলায় কোনো গরু মারা যাওয়ার সংবাদ তাঁরা এখনো পাননি। গত সোমবার সরেজমিনে উপজেলার সিদলা ইউনিয়নের মেছেরা গ্রামের সাইফুল ইসলাম ও রফিকুল ইসলাম সহ উপজেলার ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে অন্তত ৩০ জন কৃষকের সঙ্গে কথা হয় এই রোগের প্রাদুর্ভাব নিয়ে। তাঁরা বলেন, এ পর্যন্ত ৬ টি ইউনিয়নে অন্তত এক হাজার গরু এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এ সময় গরুর খাওয়া নিয়মিত ও স্বাভাবিক থাকে না বলে কৃষকদের পড়তে হচ্ছে বিপাকে। সাহেদল ইউনিয়নের টান সাহেদল গ্রামের কৃষক মোঃ আক্কাছ মিয়ার বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, আঙিনায় দেড় বছরের একটি এঁড়ে গরুর সামনের বাঁ পায়ের কিছু অংশজুড়ে ক্ষত হয়ে মাংস খসে পড়েছে। সেখান থেকে ঝরে পড়ছে কষ। এই ক্ষতস্থান থেকে দুর্গন্ধও ছড়াচ্ছে। গৃহকর্তা মোঃ ডালিম মিয়া বলেন, তাঁর ৫টি গরুর মধ্যে ৩ টি গরু এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে। এ পর্যন্ত গরুগুলোর চিকিৎসায় তাঁর ব্যয় হয়েছে ৪ হাজার টাকা। পুমদী ইউনিয়নের এলএসপি কর্মকর্তা সীমা সরকার বলেন, গরুগুলোর শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, ক্ষতস্থান শুকানো, গরুর শরীরের চামড়া চর্মরোগ থেকে রক্ষায় পশু হাসপাতালে ডাক্তার ও পল্লী ডাক্তার। অ্যান্টিবায়োটিক ও অ্যান্টিহিস্টামিন –জাতীয় ইনজেকশন দিচ্ছেন। এতে গরুর ক্ষতস্থান সেরে উঠছে। এ বিষয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের কর্মকর্তা চিকিৎসক ডাঃ আবদুল মান্নান বলেন, এই ভাইরাস নিয়ে কৃষকের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। হোসেনপুর পশু হাসপাতালে গরু নিয়ে আসলে চিকিৎসা ও ঔষধ দিচ্ছি এবং স্থানীয় পল্লি পশু চিকিৎসকদের চিকিৎসায় অনেক গরুই সুস্থ হয়ে উঠছে। কৃষকদের গোয়ালঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার উপদেশ দিয়েছেন এবং মশারী দিয়ে ডেকে রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন তিনি আরো বলেন-এ পর্যন্ত ৭হাজার ১শত গরুকে টিকার ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে এবং বিভিন্ন ইউনিয়নে গিয়ে হাসপাতালের ডাক্তার ও এলএসপি কর্মকর্তারা কৃষকদের কে উঠান বৈঠক এর মাধ্যমে এ রোগের সচেতনতা মূলক পরামর্শ দিচ্ছেন কৃষক ও খামারীদের।