পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর রাজধানীতে গাড়ি বাড়াবে
নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আগামী ২৫ জুন চালু হচ্ছে পদ্মা সেতু। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর সেতু দিয়ে যান চলাচল শুরু হবে। এতে ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলসহ ৪১ জেলার যোগাযোগ সহজ হবে। কম সময়ে রাজধানীতে আসতে পারবে মানুষ। সেইসঙ্গে বিভিন্ন গন্তব্য থেকে ছেড়ে আসা বাসের সংখ্যাও বাড়বে। এসব বিষয় মাথায় রেখে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ এরই মধ্যে রাজধানীতে ঢোকার রাস্তাগুলো নিয়ে কর্মপরিকল্পনা করছে। রাজধানীতে তুলনামূলক গাড়ির সংখ্যা বাড়বে। এর ফলে কোন রাস্তায় কী ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হতে পারে, সেগুলো চিহ্নিত করে অগ্রিম ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করেছে ট্রাফিক বিভাগ। ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ বলছে, রাজধানীতে ঢোকার প্রতিটি রাস্তায় যানজট রয়েছে। পদ্মা সেতু চালু হলে বিশেষ করে ওয়ারী, মতিঝিল ও লালবাগ দিয়ে গাড়িগুলো রাজধানীতে প্রবেশ করবে। এতে করে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে যাতায়াত ও গাড়ির গতি ঠিক রাখতে রাস্তায় সব ধরনের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হচ্ছে। মাওয়া পার হওয়ার পর যানবাহনগুলো যাতে স্বল্প সময়ে রাজধানীতে ঢুকতে পারে, টার্মিনালে পৌঁছাতে পারে, যেন দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি না হয়, সে বিষয়ে কাজ করা হচ্ছে। টার্মিনালগুলোতে ধারণক্ষমতা পর্যালোচনা করে গাড়ির সংখ্যা পর্যালোচনার পাশাপাশি কী ধরনের বাড়তি গাড়ির চাপ হতে পারে, সে বিষয়েও কাজ করা হচ্ছে। সব বিষয় মাথায় রেখেই গাড়ির চাপ সামলে কীভাবে যানজট নিয়ন্ত্রণ করা যায়, গাড়িগুলোর আসা-যাওয়া নিশ্চিত করা সম্ভব হয়, সে বিষয়ে পরিকল্পনা এবং কাজ চলমান রয়েছে।এরইমধ্যে দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা ট্রাফিক বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে বেশ কিছু পরিকল্পনা উপস্থাপন করেছেন। পদ্মা সেতু হয়ে মাওয়া রোড দিয়ে রাজধানীতে ঢোকার জন্য মূলত দুটি রাস্তা রয়েছে, যার একটি বাবুবাজার ব্রিজ হয়ে এবং অন্যটি শ্যামপুর জুরাইন হয়ে। বর্তমানে সে সব রাস্তা দিয়ে কোন ধরনের যানবাহন চলাচল করছে, সে বিষয়ে সার্ভে করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে কী পরিমাণ যানবাহন এবং কী ধরনের যানবাহন এই দুই সড়ক দিয়ে ঢাকায় ঢুকবে, তাও পর্যালোচনা করা হচ্ছে। অতিরিক্ত ট্রাফিক পুলিশ সদস্য মোতায়েনসহ বিভিন্ন পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে।
ট্রাফিক পুলিশ ধারণা করছে, পদ্মা সেতু চালু হলে বিভিন্ন যানবাহন গাবতলী দিয়ে মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ রাস্তাটি ব্যবহার করে মাওয়া রোডে গিয়ে ওঠবে। এ কারণে মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধের রাস্তাটিতে যানবাহনের সংখ্যা বাড়বে। সেই সঙ্গে যানজট বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে কীভাবে বাড়তি যানবাহনের চাপ সামলে চলাচল স্বাভাবিক রাখা যায়, সে বিষয়েও কর্ম পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। কোন কোন জায়গায় ট্রাফিক পুলিশ ছাড়াও অন্যরা নিয়োজিত থাকবে, সে বিষয়ে বিচার-বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।
ট্রাফিক বিভাগ আরও বলছে, পদ্মা সেতু চালু হলে ফেরি পারাপারের কোনও ঝামেলা থাকবে না। গাড়িগুলো মাওয়া হয়ে রাজধানীতে চলে আসতে পারবে। যেসব রুট দিয়ে গাড়ি রাজধানীতে প্রবেশ করবে কিংবা রাজধানী থেকে বের হবে, সেসব রুটে যেন কোনও ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না হয়, সে বিষয়েও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। যত্রতত্র গাড়ি থামিয়ে যাত্রী ওঠা-নামার কারণে যেন যানজট সৃষ্টি না হয়, সে বিষয়েও লক্ষ রাখা হচ্ছে। যে সব রোড দিয়ে গাড়ি চলাচল বেশি হয়, সে সব রোডের দিকে বেশি নজর দেওয়া হচ্ছে। রাস্তাগুলোর পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিক পর্যালোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পদ্মা সেতু পার হয়ে আসা গাড়িগুলোর রাতে ঢাকায় ঢোকার এন্ট্রি পয়েন্ট ফ্রি রাখা গেলে যানজট অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। এন্ট্রি পয়েন্টগুলো সচল রাখার ক্ষেত্রে কোনও ধরনের প্রতিবন্ধকতা যেন সৃষ্টি না হয়, সে বিষয়ে কাজ করা হচ্ছে। কোনও গাড়ি যেন ঢাকায় ঢোকার ক্ষেত্রে কোনও ধরনের ধীর গতির এবং যাত্রী ওঠাতে ও নামাতে না পারে সে বিষয়গুলো নজরে রেখেই ট্রাফিক বিভাগ নতুনভাবে কর্মপরিকল্পনা করছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ-ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মুনিবুর রহমান বলেন, ‘যেসব গাড়ি পদ্মা সেতু হয়ে রাজধানীতে ঢুকবে, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার ঠিক রেখে সেসব গাড়ি রাজধানী ছেড়ে যাওয়ার বিষয়ে সর্বাত্মক দায়িত্ব পালন করবে দায়িত্বরত ট্রাফিক সার্জেন্ট। গাড়িগুলো তাড়াতাড়ি রাজধানীর নির্ধারিত জায়গায় আসতে পারার বিষয়টি ঠিক রাখা গেলে কোনও ধরনের যানজটের সৃষ্টি হবে না। রাস্তাগুলো ফ্রি থাকলে যানজট নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে।’ রাজধানীর টার্মিনালগুলোতে অতিরিক্ত বাসের কারণে চাপ এবং টার্মিনালকেন্দ্রিক যানজট বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ট্রাফিকের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা অনেক সময় লক্ষ করি, টার্মিনালগুলোতে ধারণক্ষমতা পূরণ হওয়ার পর অনেক বাস টার্মিনালের সামনের রাস্তায় রাখা হয়। এটা অনেকটাই যানজটের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। রাজধানীর সায়েদাবাদ ও মহাখালী বাস টার্মিনাল দুটি অনেক পুরনো। সে সময়ের যানবাহনের ওপর ভিত্তি করে টার্মিনালগুলো গড়ে উঠেছিল। বর্তমানে গাড়ির সংখ্যা বাড়লেও টার্মিনালের পরিসর বাড়েনি। যে কারণে একের পর এক বাস আসতে থাকলে অনেক ক্ষেত্রেই টার্মিনালের ভেতর জায়গা না হওয়ায় রাস্তায় রাখা হয়। রাস্তায় কেউ যেন এলোপাতাড়িভাবে যানবাহন রাখতে না পারে, সে বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছি।’ সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন