কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার মোগলবাসা ইউনিয়নের মোগলবাসা দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকসহ একটি চক্রের কারণে ধ্বংসের পথে ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি। চরম অনিয়ম, দুর্নীতি, অর্থ লুটপাট, ক্ষমতাবৃদ্ধি ও অব্যবস্থাপনার মধ্যে কোনরকমে চলছে পাঠদান। তেমনি বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির একটি চিত্র ফুটে উঠেছে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির জামাতাকে অফিস সহায়ক পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া করার কারণে। এ নিয়ে ওই এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। প্রধান শিক্ষক-ম্যানেজিং কমিটির চক্রটি নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য গত ২১ জুন ২০২২ তারিখে একটি জাতীয় দৈনিক ও একটি স্থানীয় দৈনিক পত্রিকায় একজন অফিস সহায়ক ও একজন আয়া পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। রহস্যজনক কারণে সে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি সাধারণের নজরে আসে না। সে সুযোগে চক্রটি নিজেদের পছন্দের প্রার্থী নিয়োগের জন্য তাদের অনুগত নিজস্ব কিছু লোক এবং নিজেদের আতœীয় স্বজনকে দিয়ে পদ দুটিতে দরখাস্ত জমা করে। আয়া পদে ৭টি ও অফিস সহায়ক পদে ১০টি আবেদন জমা পড়ে। মূলতঃ সভাপতির আপন জামাতা মো: মিজানুর রহমান মিজুকে অফিস সহায়ক পদে এবং তাদের পছন্দের অপর একজনকে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে আয়া পদে নিয়োগ দেয়ার জন্য তোড়জোর শুরু করে তারা। এরই মধ্যে চক্রটি ম্যানেজিং কমিটির অন্য সদস্যদের বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করে নিজেদের পক্ষে মতামত গড়ে তোলার চেষ্টা চালায়। তাদের নিয়োগ প্রক্রিয়ার পরীক্ষার প্রস্তুতিকালে বাধ সাধেন একজন সদস্য আশরাফুল আলম। তার স্বাক্ষর জাল করে জনবল নিয়োগ দেয়ার প্রস্ততি স্থগিতের জন্য তিনি বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দাখিল করেছেন। অন্যদিকে এই জনবল নিয়োগে যারা প্রার্থী হিসেবে দরখাস্ত করতে পারেন নি তারাও জেলা শিক্ষা অফিসার, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারসহ সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেছেন। এসবের ভিত্তিতে প্রধান শিক্ষক আব্দুল হাই ও সভাপতি আবুল কালাম আজাদের সাথে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তারা পাশ কাটানোর চেষ্টা করেন। পরবর্তীতে মোবাইলে তিনি জানান নিয়োগ প্রক্রিয়া আপাতত: জেলা শিক্ষা অফিসার স্থগিত রেখেছেন। ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি বারবার একই ব্যক্তি হতে পারবে কিনা এবং কমিটি গঠনের কাগজপত্র দেখতে চাইলে তিনি জানান, সভাপতিকে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার নিয়োগ দিয়েছেন তিনি কী কী কাগজের ভিত্তিতে নিয়োগ দিয়েছেন তিনি জানেন। সভাপতিসহ কমিটির কাগজপত্র মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের কাছে জমা আছে। অভিযোগকারী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ উলিপুর উপজেলা হিসাব রক্ষণ অফিসে অডিটর পদে কর্মরত রয়েছেন। তিনি দীর্ঘ ১০ বছর ধরে বিভিন্ন কৌশলে পদটি দখলে রেখেছেন। কখনও অভিভাবক সদস্য, কখনও নির্বাচিত সদস্য, এডহক কমিটির সদস্য, কখনওবা দাতা সদস্য হিসেবে আজীবন সদস্য ইত্যাদি পদগুলো ব্যবহার করে হয়েছেন মূলত: বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি প্রধান, একচ্ছত্র ক্ষমতাবান। বর্তমানে বিদ্যালয়ে নিয়োগ নিয়ে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। এ বিষযে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বলেন, নিয়মতান্ত্রিকভাবে আমি নির্বাচিত হয়েছি। দীর্ঘদিন ধরে এই বিদ্যালয়ের সদস্য ও পরে সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছি। অফিস সহায়ক ও আয়া পদের নিয়োগ প্রক্রিয়া যথাযথ হয়েছে। এতে যারা সুবিধা নিতে পারে নি তারাই এর বিপক্ষে কথা বলছেন। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো: জহুরুল হক জানান, আমি এসব বিষয় নিয়োগের বিষয়ে ডিজির প্রতিনিধি নিয়োগের পর জানতে পারবো। আবুল কালাম আজাদ ওই বিদ্যালয়ের সভাপতি হিসেবে বারবার নির্বাচিত হতে পারবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আদালতের রায় থাকলেও আমাদের মন্ত্রণালয়ের কোনো নির্দেশনা না থাকায় তা বাস্তবায়ন করা হয় না। আর কমিটি নির্বাচনের পর সকল কাগজপত্র প্রধান শিক্ষকের কাছে ফেরত দেয়া হয়েছে। জেলা শিক্ষা অফিসার মো: শামসুল আলম বলেন, ওই বিদ্যালয়ের নিয়োগ নিয়ে অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।