বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৪২ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংকের পরিচালক পর্ষদের ৩৮৭তম সভা অনুষ্ঠিত অন্তর্র্বতীকালীন সরকারকে দ্রুত জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত করতে হবে -আমান শ্রীমঙ্গলে নারী চা শ্রমিক-কর্মজীবী নারীর প্রতি সহিংসতা ও বৈষম্য নিয়ে সংলাপ কালীগঞ্জে সরকারি মাহতাব উদ্দিন কলেজে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম : আতঙ্কে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বগুড়ার শেরপুরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহত-নিহতদের স্মরণসভা দেশবিরোধী চক্রান্তকারীদের দাঁত ভাঙা জবাব দেওয়া হবে-রেজাউল করিম বাদশা দুর্গাপুরে আইনজীবীদের মানববন্ধন কয়রায় বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের স্মরণ সভা ও সাংস্কৃতিক ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে মুন্সীগঞ্জে বিক্ষোভ মিছিল সন্ত্রাসী সংগঠন ইসকন নিষিদ্ধের প্রতিবাদে জলঢাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ দুর্গাপুরে শেষ হলো দুইদিন ব্যাপি কৃষিবিষয়ক প্রশিক্ষণ

রেলস্টেশনগুলোর সবচেয়ে বেশি ধূমপান হয় প্লাটফর্মে

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২ আগস্ট, ২০২২

বাংলাদেশ রেলওয়ে ও আর্ক ফাউন্ডেশনের সমীক্ষা

রেলস্টেশনগুলোর সবচেয়ে বেশি ধূমপান হয় প্লাটফর্মে। মোট ধূমপানের ৬৫ শতাংশই প্লাটফর্মে হয়, এরপর পার্কিং এলাকায় ২৬.৩ শতাংশ, এছাড়াও রেলস্টেশন এলাকার টি-স্টল বা টং দোকানে এবং টিকিট কাউন্টার এলাকাতেও ধূমপান করতে দেখা গেছে। তবে রেলস্টেশনগুলোর অফিসে কোনও ধূমপান করতে দেখেননি সমীক্ষা চালানো সদস্যরা। ধূমপান করতে কেউ বাধা দেয় না রেলস্টেশনে: ধূমপান করতে রেলস্টেশনগুলোতে কেউ বাধা দেয়নি বলেও সমীক্ষায় উঠে এসেছে। রেলওয়ে পুলিশ বা নিরাপত্তারক্ষীদের কেউ ধূমপানকারীদের বাধা দেয়নি। ধূমপান না করার জন্য কোনও বিশেষ বার্তা সংবলিত কোনও সাইন বা চিহ্নও দেখতে পায়নি পর্যবেক্ষক দল। রেলস্টেশনের মাইকে ধূমপান না করার জন্য এসব স্টেশনে মাত্র দু’বার ঘোষণা শুনতে পেয়েছিল তারা। যা প্রয়োজনের তুলনা খুবই কম। খুলনা ও রাজশাহী রেলস্টেশনে ‘ধূমপান মুক্ত এলাকা’ লেখা সংবলিত নির্দেশনা বেশি রয়েছে। অন্যগুলোতে খুবই কম। ঈশ্বরদী রেলস্টেশনে এমন কোনও চিহ্নই পায়নি সমীক্ষক দল। গত এপ্রিলে পরিচালনা করা এই সমীক্ষাটি নিয়ে গত সপ্তাহে রেল মন্ত্রণালয়ে আলোচনা হয়। আলোচনায় রেলস্টেশনে ধূমপান বন্ধে কিছু করণীয় ঠিক করা হয়।
দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ধূমপান করা হয়ে থাকে রংপুর রেলস্টেশনে এবং কম খুলনায়। বাংলাদেশ রেলওয়ে ও আর্ক ফাউন্ডেশন নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের যৌথ সমীক্ষায় এ তথ্য উঠে এসেছে। সমীক্ষায় দেখা গেছে, দেশের বড় ও মাঝারি সব রেলস্টেশনেই ধূমপান হয়। এসব এলাকা যে ধূমপানমুক্ত এমন কোনও চিহ্নও দেখা যায়নি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও ধূমপানকারীদের বাধা দেননি। ২০৪০ সালের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে ধূমপানমুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছেন। এরই ধারাবাহিকতায় দেশের ট্রেন ও ট্রেনস্টেশনকে ধূমপানমুক্ত এলাকা ঘোষণা করা হয়।
ট্রেন ও ট্রেনস্টেশনে বর্তমান ধূমপান চিত্র কেমন তা জানার জন্যই যৌথভাবে বাংলাদেশ রেলওয়ে ও আর্ক ফাউন্ডেশন এই সমীক্ষা পরিচালনা করে। আর্ক ফাউন্ডেশন মাঠ পর্যায়ে সমীক্ষার জন্য দেশের ১০টি ট্রেন স্টেশনকে মডেল হিসেবে নেওয়া হয়। বাংলাদেশ রেলওয়ে এসব রেলস্টেশনের সুপারিশ করেছে। সেগুলো হলোÍ খুলনা, রাজশাহী, ঢাকা, ঢাকা বিমানবন্দর, ঈশ্বরদী, সিলেট, ময়মনসিংহ, রংপুর, চট্টগ্রাম ও সৈয়দপুর রেলস্টেশন।
সমীক্ষার উদ্দেশ্যই ছিল তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন কতটা রেল ও রেলস্টেশনে মানা হয় এবং ধূমপানমুক্ত ঘোষণার পর সেখানকার বর্তমান চিত্র কী তা দেখা।
সমীক্ষায় দেখা যায়, ধূমপানমুক্ত ঘোষণার পর সবকটি রেলস্টেশনেই ধূমপান হয়। সবচেয়ে কম ধূমপান খুলনা রেলস্টেশনে এবং একই সময়ে সবচেয়ে বেশি ধূমপানের ঘটনা ঘটেছে রংপুর রেলস্টেশনে। ক্রমানুসারে, সবচেয়ে বেশি ধূমপান রংপুর রেলস্টশনে, এরপর ঢাকা কমলাপুল রেলস্টেশন, ঢাকা বিমানবন্দর, ময়মনসিংহ, সিলেট, চট্টগ্রাম, সৈয়দপুর, রাজশাহী, ঈশ্বর্দী ও খুলনা রেলস্টেশন।
রেলস্টেশনের যত্রতত্র পড়ে থাকে সিগারেটের অবশিষ্ট অংশ: রেলস্টেশনগুলোর বিভিন্ন এলাকায় সিগারেটের বর্জ্য পড়ে থাকতে দেখেছে সমীক্ষক দলটি। স্টেশনের প্লাটফর্ম, পার্কিং এলাকা, টিকিট কাউন্টার ও অফিস কক্ষের সামনে।
সিগারেট বিক্রির স্টল বেশি ঢাকা বিমানবন্দর, নেই চট্টগ্রামে: দেশের ১০টি রেলস্টেশনের মধ্যে ৯টির ভেতরেই সিগারেট বিক্রির স্টল বা পয়েন্ট রয়েছে। তবে চট্টগ্রামে কোনও স্টল পাওয়া যায়নি। সবচেয়ে বেশি সিগারেট বিক্রির পয়েন্ট পাওয়া গেছে ঢাকার বিমানবন্দর স্টেশনে। এখানে ১৯টি পয়েন্টে সিগারেট বিক্রি হয়। এরপর ময়মনসিংহ ও রংপুর। রেলস্টেশনে সিগারেট বিক্রির ৩৮.২ শতাংশ হকার এবং অন্যান্য পণ্য বিক্রিকারী স্টলগুলোতে ৩৭ শতাংশ সিগারেট বিক্রি হয়। ১০টি প্লাটফর্মে ১৭টি চায়ের দোকান দেখা গেছে যারা সিগারেট বিক্রি করে।
রেলস্টেশনে তামাকজাত পণ্যের বিজ্ঞাপন: রেলস্টেশনগুলোতে তামাকজাত পণ্যের বিজ্ঞাপনে কৌশলী হয়েছে কোম্পানিগুলো। সিগারেটের প্যাকেট দিয়ে তারা দেশের রেলস্টেশনগুলোতে প্রচারণা চালায়। তবে রেলস্টেশনে বড় বিলবোর্ড বা সাইনবোর্ড দেখা যায়নি। ছোটছোট টি-স্টলে সিগারেটের প্যাকেট দিয়ে তারা পণ্যের বিজ্ঞাপন করে থাকে।
সুপারিশ: রেলস্টেশনে ধূমপান বন্ধে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন কঠোরভাবে বাস্তবায়নের সুপারিশ করা হয়েছে। স্টেশনগুলো সবসময় মনিটরিংয়ের মধ্যে রেখে আইনের বাস্তবায়ন করা গেলে ধূমপানমুক্ত করা সম্ভব। স্টেশনগুলো যে ধূমপানমুক্ত এমন নির্দেশনা গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় স্থাপন করা জরুরি।
বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য: ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাস্টের হেড অব প্রোগ্রাম সৈয়দা অনন্যা রহমান বলেন, ‘রেলস্টেশনকে ধূমপানমুক্ত ঘোষণা করা হলেও, এর বাস্তবায়নে একটা গাছাড়া ভাব দেখা গেছে। বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এবার বিষয়টি গুরত্বের সঙ্গে নিয়েছে। তারা এটা নিয়ে নতুন করে একটি পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হবে।’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও আর্ক ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ড. রুমানা হক বলেন, ‘রেলস্টেশনগুলোকে ধূমপানমুক্ত এলাকা ঘোষণা করা হয়েছে। তার বর্তমান চিত্র দেখার জন্য আমরা এই কাজটি করেছি। বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষও চায় স্টেশনগুলো ধূমপানমুক্ত হোক, এখন তারা একটি ধারণা পেয়েছে। তাদের সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হবে।’ ২০১৭ সালের অ্যাডাল্ট টোবাকো সার্ভের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে বাংলাদেশ অন্যতম তামাকজাত পণ্য ব্যবহারকারী দেশ। দেশের মোট জনসংখ্যার ৩৫.৩ শতাংশ মানুষ ধূমপান করে। ধূমপান ও তামাকজাত পণ্য ব্যবহারকারীদের মধ্যে পুরুষ ৪৬ শতাংশ এবং নারী ২৫ শতাংশ। ধূমপান নিজে না করেও মোট জনসংখ্যার ৩৯ শতাংশ পরোক্ষভাবে ধূমপান করে। দেশের রেলস্টেশনগুলোকে ধূমপানমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। প্রতিবছর ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষ ধূমপান ও তামাকজাত পণ্য ব্যবহারের কারণে মারা যায় এবং ৭০ লাখ মানুষ ৩০ ধরনের অসুস্থতায় ভোগে। বিশ্বে প্রথম দেশ হিসেবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) টোবাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি) কনভেনশনে প্রথম স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ। ২০০৫ সালে তামাকজাত দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন করা হয়। ২০১৩ সালে এটি আরও সংশোধন করে একটি যুগোপযোগী আইনে রূপান্তরিত হয়।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com