সামাজিক বিচ্ছিন্নতা ও একাকীত্ব মানুষকে ৩০ শতাংশ বেশি হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক বা মৃত্যুর ঝুঁকিতে রাখে। এমনটিই বলছে আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন (এএইচএ) এর একটি নতুন বৈজ্ঞানিক বিবৃতি। আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের জার্নালে ৪ আগস্ট প্রকাশিত হয় এই বিবৃতিপত্র। ‘চার দশকেরও বেশি গবেষণা স্পষ্টভাবে প্রমাণ করেছে যে সামাজিক বিচ্ছিন্নতা ও একাকীত্ব উভয়ই স্বাস্থ্যের প্রতিকূল ফলাফলের সাথে জড়িত’, বলেন ক্রিস্টাল উইলি সেনে। তিনিই গবেষক দলের প্রধান। এএইচএ’র তথ্য অনুসারে, ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সী মার্কিন প্রাপ্তবয়স্কদের প্রায় এক চতুর্থাংশ সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন ও ৪৭ শতাংশ নিঃসঙ্গ। অবসর গ্রহণ ও বিধবা হওয়ার কারণে বেশিরভাগ মানুষ একাকী হয়ে পড়েন।
তবে হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির সমীক্ষা বলছে, ১৮-২২ বছর বয়সী তরুণরাই নাকি সবচেয়ে বিচ্ছিন্ন সমাজ থেকে। এর একটি সম্ভাব্য কারণ হলো তারা সোশ্যাল মিডিয়াতে বেশি সময় ব্যয় করে ও অর্থপূর্ণ ব্যক্তিগত ক্রিয়াকলাপে কম সময় ব্যয় করে। গবেষকরা ২০২১ সাল পর্যন্ত সামাজিক বিচ্ছিনতা সম্পর্কিত বিভিন্ন সমীক্ষা গবেষণার তথ্য যাচাই করে পর্যালোচনা করেন, সামাজিক বিচ্ছিন্নতা হৃৎপিণ্ড, রক্তনালি ও মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের উপর খারাপ প্রভাব ফেলে। এমনকি সামাজিক সংযোগের অভাবে পুরুষদের মধ্যে অকাল মৃত্যুর উচ্চ ঝুঁকিও বাড়ে। বিভিন্ন গবেষণা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, যারা সামাজিকভাবে কম সংযুক্ত তাদের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপের ফলে শারীরিক বিভিন্ন লক্ষণ ছিল। বিচ্ছিন্নতা ও একাকীত্ব বিভিন্ন প্রদাহের সঙ্গেও যুক্ত। শৈশবে সামাজিক বিচ্ছিন্নতা স্থূলতা, উচ্চ রক্তচাপ ও রক্তে শর্করার উচ্চ মাত্রাসহ হার্টের স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণগুলোর সঙ্গে যুক্ত। এই গবেষণা দলের প্রধান উইলি সেনে জানান, সামাজিক বিচ্ছিন্নতা ও একাকীত্ব হার্ট ও মস্তিষ্কের বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বাড়ায় যেমন- হার্ট ফেইলিউর, ডিমেনশিয়া ও স্মৃতিশক্তি দুর্বলতা ইত্যাদি। ‘সামাজিক বিচ্ছিন্নতা ও একাকীত্ব ভোগ করা ব্যক্তিদের মধ্যে হৃদরোগ ও স্ট্রোকে মৃত্যুর ৩২ শতাংশ বেশি ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি ২৯ শতাংশ বেশি’, সেনে বলেন। হার্ট ও মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে এমন কারণগুলোর মধ্যে বিচ্ছিন্নতা ও একাকীত্বের পাশাপাশি শরীরচর্চার অভাব, ফল-শাকসবজি কম খাওয়া ও ধূমপানও দায়ী। সেনে বলেন, ‘বিচ্ছিন্নতা কীভাবে শিশু, তরুণ ও প্রাপ্তবয়স্কদের হৃদয় ও মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে তা বোঝার জন্য আরও গবেষণা প্রয়োজন’। সূত্র: ওয়েব এমডি