বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৩৫ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভা অনুষ্ঠিত মাইলস্টোন কলেজে দ্বাদশ শ্রেণির বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা বনফুল আদিবাসী গ্রীনহার্ট কলেজে মনমাতানো ক্লাস পার্টি অনুষ্ঠিত ব্যবসায়ীদের সরকারের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান অধ্যাপক ইউনূসের রাষ্ট্রপতির কাছে সুপ্রিম কোর্টের বার্ষিক প্রতিবেদন পেশ প্রধান বিচারপতির দেশমাতৃকার বিরুদ্ধে দেশী-বিদেশী চক্রান্ত থেমে নেই: তারেক রহমান তুর্কি রাষ্ট্রদূতের সাথে জামায়াতের সৌজন্য সাক্ষাৎ চিন্ময় সমর্থক জঙ্গীদের হামলায় আইনজীবী সাইফুল ইসলাম নিহত অভ্যন্তরীণ বিষয় হস্তক্ষেপ: চিন্ময় ইস্যুতে ভারতের উদ্যোগ শাপলা চত্বরে গণহত্যায় হাসিনাসহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ

অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতায় মহানবী সা:

মুফতি শাব্বীর আহমদ
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২৫ আগস্ট, ২০২২

মানব জীবনে অর্থ ব্যবস্থার গুরুত্ব অপরিসীম। মহানবী সা: প্রচারিত দ্বীন ইসলাম একটি জীবনমুখী ধর্ম। আর এ ধর্ম মানুষের বাস্তব জীবনমুখী প্রার্থিব সব ক্ষেত্রেই দিকনির্দেশনা দেয়। অর্থব্যবস্থার মাধ্যমে মানবজাতি যেমন পার্থিব জীবনের ব্যক্তিগত ও সামাজিক কল্যাণ লাভ করতে পারে তেমনি পরকালীন জীবনেও কল্যাণ নিশ্চিত করতে পারে।
ইসলাম পূর্ব আরবের অর্থনীতি ছিল খুবই মন্দা। অভাব-অনটন, ক্ষুধা-যন্ত্রণা ছিল তাদের নিত্যসঙ্গী। যৎসামান্য কিছু শিল্পকর্ম ছাড়া শিল্পের তেমন কোনো প্রসার ছিল না। ছিল না পরিকল্পিত কোনো অর্থব্যবস্থা। ব্যবসায়ই ছিল আরবদের আয়-উপার্জনের মূল মাধ্যম। চড়া সুদ একটি স্বতন্ত্র ব্যবসায় হিসেবে তাদের জীবন প্রবাহের অংশে পরিণত হয়েছিল। রাসূল সা: মাদানি জীবনের শুরুতেই একটি সুদৃঢ় ইসলামী রাষ্ট্র গঠন করার প্রয়াস চালান। আর অর্থনৈতিক কর্মকা- যেহেতু একটি রাষ্ট্রের স্থায়িত্ব ও সমৃদ্ধির বুনিয়াদ, তাই এ ক্ষেত্রেও তিনি অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতার একটি পরিকল্পিত ছক ঘোষণা করেন। ফলে মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে মহানবী সা: আরব ভূমিতে আর্থিক সমৃদ্ধির মডেল মদিনা রাষ্ট্র উপহার দিয়েছেন এবং দারিদ্র্যপীড়িত মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে সক্ষম হয়েছিলেন।
মহানবী সা: ধন-বৈষম্য দূর করে স য় ও বণ্টনের সামঞ্জস্য বিধান করেন। তৎকালীন যুগে কোনো সরকারি কোষাগার ছিল না। একটি দেশের সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি নির্ভর করে অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ওপর। তিনি আরবের যাবতীয় অফিস আদালত সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য বায়তুল মাল বা সরকারি অর্থ তহবিল গঠন করেন। তখন যেকোনো অসহায় ব্যক্তির প্রয়োজনে এ তহবিল থেকে অর্থের জোগান দেয়া হতো। বাইতুল মাল বা রাষ্ট্রীয় কোষাগারের প্রয়োজনে নিয়মিত রাজস্বের প্রবর্তন করেন। যেমন-
জাকাতভিত্তিক অর্থব্যবস্থা : ইসলামের মৌলিক ইবাদতগুলোর অন্যতম হলো জাকাত। ইসলামী রাষ্ট্রের বায়তুল মালের আয়ের অন্যতম উৎস জাকাত। অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধানে সমাজে জাকাতের ভূমিকা অনস্বীকার্য। জাকাতের অন্যতম মুখ্য উদ্দেশ্য হলো অসচ্ছল-গরিবদের অবস্থার পরিবর্তন করা, যাতে তারা আর্থিকভাবে সচ্ছলতা লাভ করতে পারে, অভাব থেকে মুক্তি পায়।
খারাজ : খারাজ অর্থ ভূমিকর। খারাজ বলা হয়, শাসক কর্তৃক ধার্যকৃত ভূমি রাজস্বকে।
উশর : আল্লাহর দেয়া প্রাকৃতিক পানি দিয়ে জমি আবাদ করে, তাহলে এক দশমাংশ, আর যদি নিজস্ব পানি দিয়ে আবাদ এক বিশমাংশ গ্রহণ করাকে উশর বলে।
জিজিয়া : জিজিয়া অর্থ বিনিময়। ইসলামী রাষ্ট্রে ইসলামী আইনের অনুকূলে স্থায়ীভাবে বসবাসরত প্রাপ্তবয়স্ক, স্বাধীন, কর্মক্ষম অমুসলিম পুরুষদের থেকে জনপ্রতি বার্ষিক ধার্যকৃত কর।
গণিমত ও ফাই : ইসলামী রাষ্ট্রের দু’টি অন্যতম আয়ের উৎস হচ্ছে গণিতম ও ফাই। কাফিরদের সাথে যুদ্ধে জয়ী হলে তাদের পরিত্যক্ত যাবতীয় ধন-সম্পদ বিজয়ী ইসলামী রাষ্ট্রের এক বৈধ আয়-বিশেষ। এগুলো নিয়মানুযায়ী মুজাহিদদের মধ্যে বণ্টন ও একটি অংশ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেয়া হতো।
মহানবী সা: আরো কিছু অর্থনৈতিক সংস্থার করেন। যথা-
সুদ প্রথার বিলুপ্তি : ইসলামী অর্থব্যবস্থা সুদের লেনদেন সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। সুদকে বলা হয় শোষণের অন্যতম হাতিয়ার। বর্তমান পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থার ভিত্তি সুদের ওপর হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে সামাজিক জীবনে শোষণের বিস্তৃতি ঘটেছে। বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। দেখা দিয়েছে মুদ্রাস্ফীতি। ইসলাম সুদকে সম্পূর্ণভাবে হারাম ঘোষণা করেছে।
অপব্যয় নিষিদ্ধকরণ : সম্পদ ব্যয় করার ক্ষেত্রে ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য ইসলাম নির্দেশ দেয়। বিলাসিতায়, অহেতুক কাজে সম্পদ ব্যয় মহানবী নিষিদ্ধ করেছেন আল-কুরআনে বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই অপব্যয়কারী শয়তানের ভাই।’
সম্পদের সুষম বণ্টন : ইসলামী অর্থনীতিতে সম্পদের ন্যায্য বণ্টনের ব্যবস্থা রয়েছে। রাষ্ট্রীয় সম্পদ ব্যয়ে ইসলামী অর্থনীতির অন্যতম মূলনীতি সুষম বণ্টন নিশ্চিত করা। যেন রাষ্ট্রের কিছু মানুষের হাতে সম্পদ কুক্ষিগত না হয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আল্লাহ জনপদবাসীর কাছ থেকে তাঁর রাসূলকে যা কিছু দিয়েছেন তা আল্লাহর, আল্লাহর রাসূলের, রাসূলের স্বজনদের, এতিমদের, অভাবগ্রস্ত ও পথচারীদের। যেন সম্পদ তোমাদের মধ্যে যারা বিত্তবান তাদের মধ্যে আবর্তন না করে’ (সূরা হাশর, আয়াত-৭)
দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স : রাষ্ট্রীয় সম্পদের সুফল লাভের পথে অন্যতম প্রধান অন্তরায় আর্থিক দুর্নীতি। মহানবী সা: স্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন- কোনো ব্যক্তি রাষ্ট্রীয় সম্পদ ব্যক্তি বা গোষ্ঠীস্বার্থে ব্যবহার করতে পারবে না। মহানবী সা: বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর দেয়া সম্পদ অন্যায়ভাবে ব্যয় করে, কিয়ামতের দিন তাদের জন্য জাহান্নাম নির্ধারিত’ (সহিহ বুখারি : ৩১১৮)।
ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, মাত্র ১০ বছরের মহানবী রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক যে বিকাশ ও উন্নয়ন ঘটতে শুরু করেছিল তা ছিল সমকালীন বিশ্বের বিস্ময়। এরপর দীর্ঘ ৯০০ বছর ধরে সেই রাষ্ট্রব্যবস্থা দাপটের সাথে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত ছিল। তাঁর অনুসৃত কর্মসূচির বদৌলতেই সুদূর স্পেন থেকে ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত বিশাল মুসলিম বিশ্বে শোষণমুক্ত ও কল্যাণধর্মী নতুন এক অর্থনীতি গড়ে উঠেছিল। অর্থনীতির জটিল আবর্তে পর্যুদস্ত মানবজাতির আজাদি এনেছিলেন ইসলাম ও মহানবী। কিন্তু আজ বিশ্বব্যাপী পাশ্চাত্য পুঁজিবাদী অর্থনীতিই প্রবল। তার প্রভাব বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ভয়ঙ্কর। যে অর্থনীতির কারণে মানব সমাজ আজ বিপর্যস্ত। মানবজাতি তার প্রাথমিক প্রয়োজন অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থানের সমস্যায় জর্জরিত। আধুনিক অর্থনীতিবিদরা তাদের সীমিত চিন্তাভাবনা দিয়ে সমস্যা সমাধানের নিরন্তর প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। কিন্তু মানবরচিত কোনো অর্থব্যবস্থাই মানবতার এই করুণ আর্তনাদকে স্থিতিশীল করতে পারবে না। এ ক্ষেত্রে বিশ্ব মানবতার মুক্তির দূত মহানবী সা: নির্দেশিত ইসলামী অর্থব্যবস্থাই এনে দিতে পারে মানবতার মুক্তি ও কল্যাণ। লেখক : শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com