নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতিতে দিশেহারা সাধারণ মানুষ। তাই ভারসাম্য আনতে প্রয়োজনের তুলনায় কম কিনছেন। সন্তানদের জন্য আলাদা করে ফল-ফ্রুটস কিনে খাওয়াতে পারছেন না। রিকশাচালক শফিক মিয়া বলেন, আমাদের দেখার কেউ নাই। সারাদিন যা পাই চাল-ডাল আর সবজি কিনেই শেষ। ছেলে-মেয়েদের জন্য মাছ-মাংস কেনার টাকা থাকে না। আর ফল কেনার কথা তো চিন্তাও করতে পারি না। আহমেদ আলী নামে একজন বেসরকারি চাকরিজীবী বলেন, নিত্যপণ্যের দাম যতই বাড়ুক প্রয়োজনের তাগিদে ক্রয় করতেই হবে। কিন্তু যেসব জিনিস না লাগলেই নয় এখন তার বাইরে কিছুই কেনা হচ্ছে না। আগে বেতন পেয়েই এক মাসের জন্য দুই তিন বক্স বিভিন্ন বিস্কুট কিনে রাখতাম। এখন তা কিনছি না। সপ্তাহে কমলা, আপেল, মাল্টা কিনতাম। এখন শুধু কলা কেনা হয়। বাড়তি খরচ মেটাতে আমাদের মতো নি¤œ-মধ্যবিত্তদের সঞ্চয়ে হাত দিতে হচ্ছে। চড়া সবজির বাজার: গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে আগের মতো চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে সবজি। ফলে সবজি কিনতে এসে অস্বস্তিতে পড়েছেন ক্রেতারা। বাজারে সব থেকে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে শিম। এই সবজিটি কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ১৫০-১৬০ টাকায়। দাম অপরিবর্তিত রয়েছে পাকা টমেটো, গাজর ও বরবটির। এক কেজি পাকা টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১০০-১৩০ টাকায়। গাজর বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৩০ টাকা কেজিতে। বরবটির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকায়। এই সবজিগুলোর পাশাপাশি দাম অপরিবর্তিত রয়েছে অন্যান্য সবজির। বেগুনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০-৭০ টাকা, কাঁকরোল ৫০-৭০ টাকা, কাঁচা পেঁপে ২০-২৫ টাকা ও পটল ৪০-৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া কচুর লতি, ঝিঙে, চিচিঙ্গা বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকায়। করলার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০-৮০ টাকা। এদিকে প্রতি কেজি কাঁচামরিচ বিক্রি ৪০-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে যদিও কিছু আগে তা অস্বাভাবিক দাম বেড়ে ২শ’ টাকার উপরে বিক্রি হয়েছিল। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পর দফায় দফায় বাড়ে ডিমের দাম। যার ডজন ওঠে ১৬০ টাকায়। দেশের ইতিহাসে এর আগে কখনো এত বেশি দামে ডিম বিক্রি হয়নি। এরপর গত সপ্তাহে ডিমের দাম কমে ডজনে ১২০ টাকায় নেমে আসে। বর্তমানে এই দামেই বিক্রি হচ্ছে ডিম। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিমের দামে পরিবর্তন আসেনি। ডিমের পাশাপাশি অপরিবর্তিত রয়েছে মুরগির দাম।
বেশির ভাগ ব্যবসায়ী ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি করছেন ১৮০ টাকায়। এর আগে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পর মুরগির কেজি ২শ’ টাকা উঠেছিল। ব্রয়লার মুরগির পাশাপাশি অপরিবর্তিত রয়েছে পাকিস্তানি কক বা সোনালী মুরগির দাম। সোনালী মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৮০-৩০০ টাকায়। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পর সোনালী মুরগির কেজি ৩০০-৩২০ টাকায় বিক্রি হয়। এ ছাড়া রুই মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩২০-৪৫০ টাকা। তেলাপিয়া, পাঙাশ মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৬০-২০০ টাকায়। শিং মাছের কেজি ৩৫০-৪৬০ টাকা। আর ২০০-২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে কৈ মাছের কেজি। পাবদা মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৫০-৫০০ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে এসব মাছের দামে পরিবর্তন আসেনি। মাছের মধ্যে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে চিংড়ি ও ইলিশ। চিংড়ির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০০-১০০০ টাকা। আর এক কেজি ওজনের ইলিশের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৬০০-১৮০০ টাকা। ৭০০-৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি ৯০০-১০০০ টাকা। আর ৪০০-৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০০-৮০০ টাকা। নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে বিপাকে সাধারণ মানুষ। সবকিছুর দাম বাড়ায় ব্যয় বেড়েই চলেছে। বিপরীতে আয়ের অঙ্ক বাড়ছে না। এতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন ভোক্তারা। তাই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ছাড়া অন্য জিনিসপত্র খুব দরকার না হলে কিনছেন না ভোক্তারা। এতে করে কেক, বিস্কুট, আইসক্রিম কিংবা আপেল, মাল্টার মতো ভিটামিন জাতীয় খাবার বিক্রি কম হচ্ছে দোকানগুলোতে। ভোক্তারা বলছেন, নিরুপায় হয়েই এসব পণ্য কেনা বন্ধ করতে হয়েছে। রাজধানীর রাজারবাগে অবস্থিত মক্কা জেনারেল স্টোর। দোকানটির সামনে পসরা দেয়া বিভিন্ন ব্র্যান্ডের কেক, বিস্কুটসহ মুখরোচক খাবার। তবে এসব খাবারের ক্রেতা কমেছে বলে জানান দোকানের স্বত্বাধিকারী সজল ইসলাম।
বলেন, জিনিসপত্রের দাম বাড়ার পর থেকে মানুষ শুধু তিনবেলা খাবারে যে জিনিসগুলো প্রয়োজন তাই কিনছেন। অন্য জিনিসপত্র কেনা কমিয়ে দিয়েছেন। আগে আমি প্রতিদিন দুই-তিন কার্টুন আইসক্রিম বিক্রি করতাম। এখন এক কার্টুনও হয় না। অনেকেই আমার থেকে নিয়মিত বিস্কুট কিনতেন কিন্তু এখন নেন না। বর্তমানে চাল, ডাল, তেল, আটাসহ সবকিছুর দাম বেশি। মাছ কিংবা মাংসের দামও সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। বাজার করতে আসা ক্রেতারা বলছেন, তিনবেলা ভাত খাওয়ার জন্য যতটুকু তরকারি প্রয়োজন তারা ততটুকুই কিনছেন। বেশি কিনে মাস শেষে বিপদে পড়তে হবে। না খেয়ে থাকতে হবে।