মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারী ২০২৫, ০১:৪২ অপরাহ্ন

মিরোস্লাভ ক্লোসা এক কিংবদন্তির নাম

স্পোর্টস ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শনিবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২২

১৯৬৩ সালে বব ডিলানের গাওয়া ‘Blowin in the Wind’ বিখ্যাত এই গানটির লাইনের সাথে মিল রেখে আমাদের কবির সুমন গাইলেন, ‘কতটা পথ পেরুলে তবে পথিক বলা যায়?’ গানের ভাষা যেটাই হোক না কেনো অনুভূতি, অর্থ বা আক্ষরিক অনুবাদ সব একই। আর এই গানটাকেই জীবনের সাথে মেলালে এর বিশেষত্ব বেশ ভালোমতোই উপলব্ধি করা যায়।
ঠিক যেন এই গানের সাথেই মিলে যায় জার্মান কিংবদন্তি মিরোস্লাভ ক্লোসার জীবন। বিশ্বকাপ ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলদাতা, দেশের হয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতা, একটি বিশ্বকাপের অধিকারী এরপরও তাকে কিংবদন্তি বলা যাবে কিনা এ নিয়ে অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করতে পারেন। কারণ এতোটাই আন্ডাররেটেড তিনি আর তাকে নিয়ে এতোই কম আলোচনা হয় যে সবসময়ই তিনি পর্দার আড়ালে থেকে যান। ৪৪ বছর বয়সী ক্লোসা ১৯৭৮ সালে পোল্যান্ডের ওপোল শহরে জন্মগ্রহণ করেন। ফুটবলার বাবা আর হ্যান্ডবল খেলোয়াড় মাকে নিয়ে ৮ বছর বয়সে পাড়ি জমান জার্মানিতে। সেখানেই ফুটবলের হাতেখড়ি শুরু। ২০ বছর বয়সে পেশাদার ফুটবল ক্যারিয়ার শুরু করা ক্লোসা ১৮ বছর খেলেছেন বিভিন্ন ক্লাবের হয়ে। ২০১৬ সালে ইতালিয়ান ক্লাব লাজিওর হয়ে সর্বশেষ খেলেন ক্লোসা। ক্লাব ক্যারিয়ারে ৬৬৮ ম্যাচে ২৫৮ গোল এবং ১৩৪ এসিস্ট রয়েছে তার।
কিন্তু এসবের কোনোকিছুই দিয়েই ক্লোসাকে যাচাই করা যাবে না। ক্লাব ক্যারিয়ার বাদ দিয়ে শুধুমাত্র জাতীয় ক্যারিয়ার দিয়েই ক্লোসা কিংবদন্তি হবার জন্য যথেষ্ট। জার্মানির হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৩৭ ম্যাচ খেলেছেন ক্লোসা। আর গোল করেছেন দেশের হয়ে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৭১টি। বিশ্বকাপের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৪ ম্যাচ খেলার রেকর্ড মিরোস্লাভ ক্লোসার অধীনেই। সর্বোচ্চ ২৫ ম্যাচ খেলে শীর্ষে আছেন তারই স্বদেশী লোথার ম্যাথিউস।
৪টি বিশ্বকাপ খেলা ক্লোসা ১৬ গোলের মধ্যে ২০০২ এবং ২০০৬ বিশ্বকাপে করেছেন ৫টি করে গোল। ২০১০ বিশ্বকাপে ৪টি এবং ২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপে করেছেন ২টি গোল। ২০০২ বিশ্বকাপে ব্রাজিলের কাছে ফাইনালে হেরে স্বপ্নভঙ্গ হয় জার্মানির। আর ৫ গোল করে সেই বিশ্বকাপে সিলভার শ্যু জিতে নেন ক্লোসা। নিজের দেশের মাটিতে হওয়া পরের বিশ্বকাপ অর্থাৎ ২০০৬ বিশ্বকাপে বদ্ধপরিকর হয়ে খেলতে নামেন যে করেই হোক বিশ্বকাপের ট্রফিটা নিজ দেশেই রাখতে হবে। সেটা সম্ভব হয়নি। কিন্তু এবারো ৫ গোলে করে ঠিকই জিতে নেন গোল্ডেন শ্যুর খেতাব। সেই কৃতিত্বের কারণে ২০০৬ সালে জার্মান বর্ষসেরা ফুটবলারের স্বীকৃতিও পান ক্লোসা। সিলভার শ্যু, গোল্ডেন শ্যু, বর্ষসেরা ফুটবলার এতকিছুর পরেও যেন বিশ্বকাপের ওই সোনালী ট্রফিটা ছোঁয়া হচ্ছিল না কিছুতেই। আর সেই স্বপ্নই পূরণ হয় ২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপে।
২০১৪ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ব্রাজিলের মুখোমুখি হয় জার্মানি। হেক্সার স্বপ্ন নিয়ে যেখানে ৫৯ হাজার দর্শক খেলা দেখতে আসে বেলো হরিজন্তের মিনেইরাও স্টেডিয়ামে সেখানে ব্রাজিলের জালে একের পর এক গোল করে বুনো উল্লাসে মেতে উঠে জার্মান ফুটবলাররা। ম্যাচের ২৩ মিনিটে ক্লোসাও করেন ১ গোল আর সাথে সাথেই বিশ্বকাপ ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলদাতার পাতায় নিজের নামটি লিখে ফেলেন। সেমিফাইনালে এমন জয়ের পর আর পেছনে ফিরতে তাকাতে হয়নি জার্মানিকে। ফাইনালে আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে চতুর্থবারের মতো বিশ্বকাপের শিরোপা নিজেদের করে নেয় জার্মানি। আর ক্লোসার ক্যারিয়ারও অবশেষে বিশ্বকাপ ট্রফি দিয়ে পূর্ণতা পায়।
ক্লোসাই একমাত্র ফুটবলার যে কিনা নিজের ক্যারিয়ারের টানা চারটি বিশ্বকাপেই সেমিফাইনালে খেলেছেন। একের অধিক বিশ্বকাপে ৫ বা তার চেয়েও বেশি গোল করা তিনজন ফুটবলারের মধ্যে ক্লোসা অন্যতম। বিশ্বকাপে ক্লোসার ১৬টি গোলের মধ্যে একটাও পেনাল্টি নেই বরং ২০০২ বিশ্বকাপে নিজের ৫টি গোলই ক্লোসা করেন হেডে। যা এখনো বিশ্বরেকর্ড। এতো রেকর্ড, এতো অর্জনের পরও ক্লোসাকে কিংবদন্তি বলতে কোনো সন্দেহ থাকার কথা নয়। ক্লোসা জার্মানদের কাছে তো বটেই, পুরো ফুটবল বিশ্বের কাছেই এক কিংবদন্তির নাম। নিজের যোগ্যতা দিয়ে যে কিনা অর্জন করেছেন সবকিছু এবং বিশ্বকাপ ফুটবলে নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com