করোনা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম থমকে আছে
করোনা পরিস্থিতিতে দীর্ঘদিন সারা দেশের মতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম থমকে আছে। গত ১৮ মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত টানা সাড়ে তিন মাসের মতো শিক্ষা কার্যক্রম একেবারেই বন্ধ ছিল। জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহ থেকে অনলাইন মাধ্যমে ক্লাস শুরু করার সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ। ওই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে এখন পর্যন্ত পুরোদমে অনলাইন ক্লাস চলছে। যদিও বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার জন্য এই ক্লাসে শতভাগ শিক্ষার্থীর অংশ নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। অনলাইন ক্লাস চললেও বিশ্ববিদ্যালয় নতুন করে সেশনজটে পড়া এড়াতে পারবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ সংকট থেকে উত্তরণের বিষয়ে এখনও ভাবছে না প্রশাসন। তবে, সরকার এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে সংকট নিরসনে পরিকল্পনা নেওয়া হতে পারে। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কীভাবে সংকট মোকাবিলা করছে তাও পর্যবেক্ষণ করা হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক ড. লুৎফর রহমান বলেন, ‘১৯৮৫-৮৬ সালে আমরা যখন ছাত্র ছিলাম তখন বিভিন্ন কারণে সাংঘাতিক সেশনজটে ছিলাম। এরপর গণতান্ত্রিক সরকারগুলো ক্ষমতায় এসে এটি সমাধানে কাজ করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্তে আমরা বাড়তি ক্লাস নিয়ে জট দ‚র করেছি। করোনা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার আগ পর্যন্ত তেমন কোনও সেশনজট বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিল না। কোভিড-১৯-এর যে পরিস্থিতি ও প্রভাব তা বিশ্বব্যাপী। যার জন্যে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সবাই পিছিয়ে যাবে। উন্নত রাষ্ট্রগুলোতে অনলাইন সুবিধা বেশি, হয়তো এ বৈষম্যের জন্য আমরা একটু বেশি পিছিয়ে যাবো। কিন্তু সেশনজট কাটিয়ে আমরা যখন স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে আসবো, তখন ফিজিক্যাল ক্লাস শুরু করবো। ইতোমধ্যে অনলাইন মাধ্যমে ক্লাস চলছে। অনেক শিক্ষার্থীর ডিভাইস নেই, সেটির বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় এবং সরকার ভাবছে। সেশনজট নিরসনে পরামর্শ প্রয়োজন হলে শিক্ষক সমিতি অবশ্যই দেবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সরকারসহ সবার সহযোগিতায় সেশনজট কাটিয়ে উঠতে পারবো বলে আশা রাখছি।’
তিনি জানান, সেশনজটের বিষয়ে এখনও কোনও আলোচনা হয়নি। এখন শুধু অনলাইন ক্লাস মাধ্যমের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। তবে, অনলাইন মাধ্যমে পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আদেশে কিছু উল্লেখ নেই। বিশ্ববিদ্যালয় সেশনজটে আগেও বহুবার পড়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের সময় এবং ছাত্র সংগঠনগুলোর (ছাত্রলীগ ও ছাত্রদল) মধ্যে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সময় সংঘর্ষের কারণে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ছিল। যার জন্য সেশনজটে পড়তে হয়েছিল। ধীরে ধীরে পরিকল্পিতভাবে সেটি কাটিয়ে উঠতে পারলেও করোনা পরিস্থিতিতে আবারও সেশনজটে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতির ক্ষেত্রেও আগের অভিজ্ঞতা এবং পরিকল্পনাকে বিবেচনা করা হবে বলে জানা যায়। শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকসহ সরকারের সহযোগিতায় বেশি সংখ্যক ক্লাস-পরীক্ষা নিয়ে সংকট নিরসন করা যাবে বলে মনে করছেন শিক্ষকদের কেউ কেউ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী বর্তমান পরিস্থিতির জন্য সেশনজটে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এটা কীভাবে কাটিয়ে উঠতে পারবো, সে বিষয়ে এখনও তেমন কোনও আলোচনা শুরু হয়নি। তবে শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণ করছে। তারপরেও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কম সংখ্যক শিক্ষার্থী যদি অংশগ্রহণ করতে না পারে, তাহলে তো হবে না। এ বিষয়ে সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে উপায় ঠিক করতে হবে। আমি ছাত্র থাকাকালীনও সেশনজটে পড়েছিলাম। তারপরেও সেশনজট মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অনুসরণ করে এবং প্রাইভেট, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে আলোচনা করে পরিকল্পনা নিতে হবে।’ জানা গেছে, সেশনজট মোকাবিলা করতের অনলাইন ক্লাস কার্যক্রমকে অধিক গুরুত্ব দিচ্ছে কর্তৃপক্ষ। ইতোমধ্যে বিভিন্ন সংকটের জন্য যারা ক্লাস কার্যক্রমে অংশ নিতে পারছেন না তাদের ডিভাইস দেওয়ার কথা ভাবছে প্রশাসন। অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে কেন্দ্রীয়ভাবে নীতিমালা প্রণয়ন, তথ্যপ্রযুক্তিগত অবকাঠামো নির্মাণ, আর্থিক বিষয়সহ আনুষঙ্গিক বিষয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরির জন্য উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামালকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের অনলাইন ক্লাসে অংশ নিতে আবেদনের ভিত্তিতে ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস দেওয়ার সুপারিশ দু-এক দিনের মধ্যে জমা দেওয়ার কথা রয়েছে। সেশনজটের বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক মাকসুদ কামাল বলেন, ‘এখন অনলাইন ক্লাস কার্যক্রমের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। দু-এক দিনের মধ্যে সুপারিশ রিপোর্ট জমা দেওয়া হবে। এরপর সেশনজট নিয়ে কথা বলতে পারবো।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘কোভিড-১৯-এর জন্য পৃথিবীব্যাপী শিক্ষাকার্যক্রম ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। আমাদের বাস্তবতাকে মেনে নিয়েই বিজ্ঞানসম্মত ও পরিকল্পিত উপায়ে এগোতে হবে। সেশনজট নিরসনে আমাদের অনেক পরিকল্পনা রয়েছে। সে আলোকে এগোতে হবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, যথাসময়ে পরিকল্পনাগুলো জানানো হবে।