দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারদের নিরপেক্ষভাবে কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। জেলা পযায়ে শীর্ষ কর্মকর্তাদের সার্বিক কর্মকাণ্ড কমিশন পযবেক্ষণে রাখবেন বলেও সতর্ক করেছেন তিনি। গতকাল শনিবার আগারগাঁওস্থ নির্বাচন ভবনে সকল জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এমন দিকনির্দেশনা দেন সিইসি। এসময় চার নির্বাচন কমিশনার, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব, অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক, ইসি সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে ইসির মিডিয়া সেন্টারে সিইসি সাংবাদিকদের বলেন, কোনো অবস্থাতেই নির্বাচন বিষয়ে কর্মকর্তাদের আচরণে এমন কিছু যাতে প্রতিফলন না হয়-যাতে জনগণ ভাবতে পারেন আপনারা একটি দলের পক্ষে কাজ করছেন। আমরা অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চাই।
কর্মকর্তাদের হুশিয়ার করে দিয়ে হাবিবুল আউয়াল জানান, নির্বাচনের সময় ইসির অবস্থান থাকবে কঠোর। মাঠ কর্মকর্তাদের কাজও পর্যবেক্ষণ করা হবে। দায়িত্ব পালনে কোনো শৈথিল্য সহ্য করা হবে না। ইসি তার উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন ও ক্ষমতা প্রয়োগে কঠোর অবস্থানে থাকবে। সংসদ নির্বাচনকে অংশ নেয়া ও ইসির প্রতি আস্থা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে বিভাজন থাকলেও রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান হতে হবে বলে মনে করেন তিনি। সিইসি বলেন, সংসদ নির্বাচন নিয়ে পক্ষ-বিপক্ষ বিভাজন নিয়ে সংশয় থাকলেও আমরা আশা করি সংশ্লিষ্ট সব দল, পক্ষ তাদের সদিচ্ছা, প্রজ্ঞা যে কোনো সংকট-সংশয় নিরসনে সামর্থ্য রাখে। মতৈক্য ও সমঝোতা হবে। সংশয় ও সংকট কেটে যাবে।
তিনি বলেন, ইভিএম প্রসঙ্গ নিয়ে সভায় আলোচনা এলে কর্মকর্তারা এ নিয়ে ব্যাপক প্রচারণা চালানোর পরামর্শ দিয়েছেন। এছাড়া আইন-শৃঙ্খলা ব্যবস্থাপনা, ভোটারদের কথা বিবেচনায় নিয়ে ভোটকেন্দ্র বাড়লেও পাশাপাশি ভোটকক্ষ বাড়ানোর সুপারিশ করেছে।
সভায় তিনি বলেন, আমরা কঠোর ভাষায় বলছি- ভয়ভীতি, পক্ষপাতিত্ব, চাপ বা অন্য যে কোনো কারণে নির্বাচনে অবৈধ হস্তক্ষেপ প্রতিহত না করলে নির্বাচন হবে না, প্রহসন হবে। পরবর্তীতে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনে গুরুতর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। আপনাদের জবাবদিহি করতে হবে। সিইসি আরো বলেন, সভায় আলোচনা না হলেও পুলিশকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে কাউকে যেনো হয়রানি করা না হয় সে বিষয়টিও বলেছেন একজন। নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব খান লিখিত বক্তব্যে কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, নির্বাচনের আগে পরে রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের পক্ষ বা বিভিন্ন মহল থেকে নানা ধরনের গুজব বা অপপ্রচার ছড়ায় এবং অনেক মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করে বিশৃঙ্খলা পরিস্থিতি তৈরীর চেষ্টা করে। আপনারা এ বিষয়ে সতর্ক থাকবেন। কোন গুজবের সন্ধান পেলে বা এরকম পরিস্থিতি তৈরী হলে আপনারা দ্রুত গুজবকারীদের শনাক্ত করে ব্যবস্থা নেবেন। ছড়াচ্ছে কিনা সে বিষয়ে নজরদারি বৃদ্ধি করবেন। নির্বাচনের সময় অনেক প্রভাবশালী মহল বা রাজনৈতিক দলের নেতা, সাবেক/বর্তমান মন্ত্রী এমপিসহ নানা মানুষ এলাকায় প্রভাব বিস্তার করার প্রচেষ্ঠার বিষয়টি তুলে ধরেন এ নির্বাচন কমিশনার।
আহসান হাবিব বলেন, কেউ কেউ নির্বাচনের সময় অনেকে পেশি শক্তি, অর্থশক্তি বা ক্ষমতা প্রদর্শনের চেষ্টা করে। কালো টাকার ব্যবহারে কথাও শোনা যায়। আপনারা চোখ কান খোলা রেখে এই বিষয়গুলি নিয়ন্ত্রণ করবেন। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা না থাকলে কখনোই সুন্দর সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব না বলে উল্লেখ করেন তিনি।
বৈঠকে শেষে ইসির মিডিয়া সেন্টারে ব্রিফিংয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনিনরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আখতার হোসেন জানান, জেলা পরিষদ ও সংসদ নির্বাচনসহ সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ভবিষ্যতে যে নির্বাচনগুলো হয় তা শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানের বিষয়ে আলাপ হয়েছে। ডিসি-এসপি’রা পরামর্শ দিয়েছেন। তারা তাদের অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন।
তিনি জানান, গত নির্বাচনে ৪০ হাজারের মত ভোট কেন্দ্র ছিলো। আগামী নির্বাচনে এ ভোট কেন্দ্র বেড়ে প্রায় ৪৩ হাজারের উপরে হয়ে যাচ্ছে। নির্বাচনে ভোট কেন্দ্রের যে সংখ্যা তাতে পর্যাপ্ত সংখ্যক আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা যায় না। এজন্য আমরা চাচ্ছি ভোট ভেন্যুর সংখ্যা কমিয়ে বুথ বাড়িয়ে দেয়ার জন্য। এখন যেহেতু যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে। কাজেই ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন করে যৌক্তিক সংখ্যক করা হয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষে নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করা সম্ভবপর হবে। কোনো রকমের পক্ষপাতমূলক আচরণ যেন না হয় সে বিষয়ে ‘এনশিউর’ করা হবে বলেও জানান এই সচিব।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হয়রানিমূলক মামলার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়নি। তবে হয়রানিমূলক মামলার সুযোগ নেই। এর প্রশ্নই নেই। তিনি বলেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মাঠ প্রশাসনে রদবদল হয় না। এটি রুটিন ওয়ার্ক। কিছুদিন আগে পদোন্নতির কারণে আমরা ৪০টি জেলায় নতুন এসপি নিয়োগ দিয়েছি। ওই এসপিদের আমরা নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে বলেছি। পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি বলেন, নির্বাচনের সময় ইসির অধীনে পুলিশ প্রশাসন কাজ করে থাকে। পুলিশ নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনার আলোকে পুলিশ দায়িত্ব পালন করে। কারো বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।