আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর আখের ভালো ফলন পেয়েছেন চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার চাষিরা। আখের ফলন ভালো হওয়ায় এবং দাম বেশি পাওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। উপজেলার আখ চাষীরা এবার লাভবান হতে পারবেন বলে তাদের আশা। এখন আখ কাটা এবং বিক্রির ভরা মৌসুম। উপজেলার আখ চাষ এলাকার চতুর্দিকে আখ কাটার হিড়িক দেখা গেছে। ফরিদগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায় ২০২১/২২ অর্থবছরে পুরো উপজেলায় ২৯০ হেক্টর জমিতে আখ চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। কিš‘ দেখা যায় কৃষকরা আখ চাষে উদ্বুদ্ধ হয়ে ৩০০ হেক্টর জমিতে আখ চাষ করেন। বিশেষ করে উপজেলার ১, ২ , ৭ , ৮ , ৯, ১৫ , ১৬ নং ইউনিয়ন এবং পৌরসভার কিছু কিছু জায়গায় আখ চাষ করা হয়। যার মধ্যে শুধু ১ নং বালিথুবা ইউনিয়নেই ২০০ হেক্টর জমিতে আখ চাষ করা হয়। ফরিদগঞ্জ উপজেলায় বিশেষ করে রং বিলাস, চাঁদপুর গ্যান্ডারি, ঈশ্বরদী, মানিকগঞ্জ ২০৮জাতের আখ চাষ বেশি হয়। ছোট বড় সাইজের প্রতি পিস আখ খুচরা বাজারে ১০ থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হতে দেখা গেছে। আখের পাইকাররা বলছেন ভিন্ন কথা, তারা বলেন, জমিন থেকে আখ তুলে শ্রমিকের পয়সা এবং পরিবহন খরচ দিয়ে আমাদের বেশি একটা লাভ হয়না। ফরিদগঞ্জ উপজেলার আখ বিশেষ করে কুমিল্লা, সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নোয়াখালী, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ সহ কয়েকটি এলাকায় নিয়ে বিক্রি করা হয়। আখ চাষীদের মধ্যে হাবিবুর রহমান নামের একজন জানান তিনি মোট ১০০ শতাংশের মধ্যে আখ চাষ করেছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকার কারণে তার খুব ভালো ফলন হয়েছে। সব মিলিয়ে তার খরচ হয়েছে ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা। তিনি আশা করছেন এ বছর তাঁর ১ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা আখ বিক্রিতে আসবে। অন্যদিকে ফারুক খান নামের একজন আখ চাষী বলেন, তিনি ১৯শতক জমিনে আখ চাষ করেছেন। তার খরচ হয়েছে ২০ হাজার টাকা। কি‘ তিনি আখ বিক্রি করেছেন ৪০ হাজার টাকা। আমির হোসেন নামের আরেকজন আখ চাষী বলেন তিনি ৪০ শতক জমিনের মধ্যে আখ চাষ করেছেন। তার খরচ হয়েছে ১ লাখ ১১ হাজার টাকা। তিনি আখ বিক্রি করেছেন ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। ১নং বালিথুবা ইউনিয়নের সবচাইতে ভালো আখ চাষী কলন্তার খান বলেন তিনি রং বিলাস জাতের আখ চাষ করেছেন। এ আখ খেতে খুব সুস্বাদু। এবং খুব মিষ্টি ও খুব বেশি রসালো। এ জাতের আখ ফরিদগঞ্জে খুব কম চাষি চাষ করেন। তিনি মোট একশত বিশ শতক জমিনের মধ্যে আখ চাষ করেছেন। তিনি আরো বলেন গত বছর আখের দাম বেশি পেলেও এ বছর দাম কম। তিনি আরো বলেন ফরিদগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিস থেকে আমাদের আখ চাষীদের জন্য কোনরকম সহযোগীতা করছে না। আখ চাষী জুয়েল মিয়া বলেন, এবারের মৌসুমে আখের ভালো ফলন হয়েছে। ছোট-বড় সাইজের প্রতি পিস আখ বাজারে নিয়ে ১০-৬০ টাকা পর্যন্ত খুচরা বিক্রি করছে।। দাম ভালো পাওয়ায় তিনি খুব খুশি। এছাড়া আখ চাষী আব্দুর রব খান, হাসিম, সুজন, তাফাজ্জল মিয়া, জসিম হোসেন বলেন, গতবারের চেয়ে এবছর আখের দাম অনেক কম। খরচের তুলনায় আখের দাম আরও একটু বেশি হলে আমরা লাভবান হতে পারতাম। গত বছর এক পিচ আখ ১৫/২০ টাকা বিক্রি করলেও এ বছর আমরা পাইকারদের কাছে বিক্রি করছি ৭ থেকে ১০ টাকা। ফরিদগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আশিক জামিল মাহমুদ বলেন, আখ একটি সুস্বাদু রস যুক্ত খাদ্য। ফরিদগঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল আখ চাষের উপযোগী। ২০২১/২২ অর্থবছরে আখ চাষের নির্ধারণ করা হয়েছিল ২৯০ হেক্টর জমি। কিš‘ আখ চাষীরা উদ্বুদ্ধ হয়ে ৩০০ হেক্টর জমিতে চাষ করেন। আমি ইতিপূর্বে কয়েকটি এলাকায় আখ চাষ দেখতে গিয়েছিলাম। আখ কাটার এবং বিক্রির এখন ভরা মৌসুম। কৃষকরা ভাল দাম পেয়ে খুব খুশি বলে জানিয়েছেন। আগামীতে তাদেরকে পরামর্শ দিয়ে আরো বেশি করে আখ চাষে উদ্বুদ্ধ করবেন বলে তিনি জানান।