২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে নদীতে ইলিশ শিকারে নেমে আশানুরূপ ইলিশ না মিললেও জেলেদের জালে ধরা পরছে বিশাল সাইজের পাঙাশ। প্রতিটি জালে ১৫ থেকে ২০টি করে পাঙাশ ধরা পরেছে। যা প্রতিটি সর্বোচ্চ ২৫ কেজি থেকে সর্বনিন্ম ৫ কেজি ওজনের পাঙাশ। তার সাথে বড় বড় সাইজের ইলিশ থেকে শুরু করে জাটকা ইলিশও ধরা পরছে। শনিবার সকাল থেকে বরিশাল নগরীর ইলিশ মোকাম পোর্ট রোডে ফিরে এসেছে প্রাণচাঞ্চল্য। দীর্ঘদিন ইলিশ শিকার বন্ধ থাকায় পোর্ট রোডের শ্রমিকদের অলস সময় কাটাতে হয়েছে। সেখান থেকে বের হয়ে ইলিশের সাইজ নির্ধারণ শুরু করে ট্রলার থেকে ইলিশ নামানো এবং মাপ দিয়ে তা বরফজাত করাসহ বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন শ্রমিকরা। এরমধ্যে বড় বড় সাইজের পাঙাশ সকলের চোখমুখে এনে দিয়েছে বাড়তি আনন্দ। মেঘনা নদীতে ইলিশ শিকার করে পোর্ট রোডে ট্রলার নিয়ে আসা জেলে মোজাম্মেল হোসেন জানান, নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ায় পর পরই ট্রলার ছেড়ে নদীতে গিয়েছিলেন। শুক্রবার দিবাগত রাত সাড়ে বারোটার দিকে তারা নদীতে জাল ফেলেন। তিন ঘন্টা পর জাল যখন টান দিচ্ছিলেন তখন ভারে তাদের কাছে মনে হয়েছে জাল ভর্তি ইলিশ। আনন্দে জাল টেনে কাছে আসতেই বড় বড় সাইজের পাঙাশে তাদের চোখেমুখে আনন্দ ফুটে ওঠে। তিনি আরও বলেন, প্রথমবার তাদের এক জালে ছোট-বড় ২২টি পাঙাশ উঠেছে। এর সাথে বড় ও ছোট সাইজের ইলিশও ছিলো। তবে যে পরিমাণ ইলিশের আশা করেছিলেন তা ওঠেনি। তারা সর্বোচ্চ ২০ কেজি ওজনের পাঙাশ পেয়েছেন। তিনি জানান, তিনবার জাল টেনে ৫৩ পিস পাঙাশ তুলেছেন। তবে জালের প্রকার ভেদে অনেকের চেয়ে তারা বেশি পাঙাশ শিকার করেছেন। এ মৌসুমে পাঙাশ ধরা পড়ার বিষয়টি তারা আগেভাগেই জানতেন। তবে এতো পাঙাশ উঠবে তা তারা আশা করেননি। ভোলার তেতুঁলিয়া নদীতে ইলিশ শিকার শেষে পোর্ট রোডে আসা জেলে কাঞ্চন ঘরামী বলেন, ২৫ বছরের ধারণা থেকে বলতে পারি, এতো পাঙাশ আর কখনও ইলিশের জালে ওঠেনি। গত রাতে আমাদের আশা ছিল জাল ভরে বড় বড় সাইজের ইলিশ উঠবে। কারণ ২২ দিন জাল ফেলা হয়নি। এ কারণে ২২ দিনের ইলিশ রয়েছে নদীতে। কিন্তু আমাদের জালে ইলিশ ওঠেনি, উঠেছে পাঙাশ। ইলিশের দুঃখ পাঙাশে তুলে গিয়েছি। নগরীর পোর্ট রোডের আড়তদার জহির সিকদার বলেন, প্রতিটি ট্রলার থেকে ইলিশের সাথে সাথে বড় বড় সাইজের পাঙাশ নামছে। একদিনে দুইশ’ মণের অধিক পাঙাশ এসেছে। যারমধ্যে প্রতিটি সর্বোচ্চ ২৫ কেজি থেকে সর্বনিন্ম ৫ কেজি ওজনের পাঙাশ। যা পাঁচশ’ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। জহির আরও বলেন, শনিবার দুই কেজি ওজনের ইলিশের মণ ৮০ হাজার টাকা, ১২শ’ গ্রাম ৫০ হাজার, কেজি সাইজের ৪৬ হাজার, রফতানিযোগ্য এলসি সাইজ ৩৮ হাজার এবং ভেলকা প্রতি মণ ৩২ হাজার টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা চলাকালে নদীতে ৯৫৯টি অভিযান পরিচালিত হয়েছে। এ সময় জাল ও মা ইলিশসহ আটক ৫৪০ জন জেলেকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড এবং ৫ লাখ ৬৮০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। এছাড়া ৩৩ লাখ টাকা মূল্যের জাল ধ্বংস ও পাঁচ হাজার ১২১ মেট্রিক টন ইলিশ বিভিন্ন মাদ্রাসায় বিতরণ করা হয়েছে।