কোনো ব্যক্তি পাহাড় সমপরিমাণ পাপ করে যদি পাপের জন্য অনুতপ্ত হয়, এই পাপ অথবা গুনাহ নিয়ে শেষ বিচারের দিন তার রবের সামনে দ-ায়মান হওয়া নিয়ে ভয় করে, তাহলে আল্লাহ তায়ালা সেই ব্যক্তির পাপসমূহকে মাফ করে দেন।
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে- রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘তোমাদের পূর্ববর্তীদের মধ্যে এক লোক ছিল, যে পাপে নিমজ্জিত হয়ে নিজের ওপর সীমালঙ্ঘন করেছিল, নিজের ওপর অবিচার করেছিল; মৃত্যুর আগে তার সন্তানদের ডেকে বলল, হে আমার সন্তানরা আমি তোমাদের কেমন বাবা? তারা বলল, আপনি আমাদের উত্তম পিতা। সে বলল, হে আমার সন্তানরা মৃত্যুর আগে আমি তোমাদের একটি ওছিয়ত করছি, তোমরা আমার এই ওছিয়তটি রক্ষা করবে তো? তারা বলল- হ্যাঁ, অবশ্যই করব। তিনি বললেন, তোমরা আমার মৃত্যুর পরে আমার দেহটি আগুনে জ্বালিয়ে ছাই বানিয়ে দেবে অতঃপর সেই ছাই বাতাসে উড়িয়ে দেবে, যাতে আল্লাহর সামনে আমার এই পাপগুলো নিয়ে দ-ায়মান হতে না হয়। অতঃপর তার মৃত্যুর পর সন্তানরা শত কষ্টের পর বাবার ওছিয়ত অনুযায়ী দেহ জ্বালিয়ে ছাই করে বাতাসে উড়িয়ে দিলো এবং ওছিয়তটি বাস্তবায়ন করল।’ হাদিসের মধ্যে এসেছে- আল্লাহ তায়ালা কিয়ামত দিবসে বাতাসে উড়িয়ে দেয়া ছাইগুলো একত্রিত করবেন। ‘ইন্নালাহা আ-লা কুল্লি শাইয়িন কাদির’ (কেননা আল্লাহ তায়ালা তো সব বিষয়ের ওপর ক্ষমতাবান)। অতঃপর আল্লাহ তায়ালা তার সব অংশকে একত্রিত করে তাকে পুনর্জীবিত করবেন এবং সে ভয়ে কাঁপতে থাকবে। আল্লাহ তায়ালা বলবেন, ‘হে আমার বান্দা তুমি এই কাজটি কেন করলে? তুমি কি ধারণা করেছ আমি আবার তোমাকে পুনর্জীবিত করতে পারব না?’ এ কথা শুনার পর সে ভয়ের কণ্ঠে বলবে, হে আমার পালনকর্তা, মূলত আমার পাপের বোঝা নিয়ে আপনার সামনে দ-ায়মান হওয়া আমার কাছে লজ্জিত লাগছিল। তখন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ফেরেশতাদের ডেকে বলবেন, ‘হে আমার ফেরেশতারা তোমরা সাক্ষী থাকো, আমি আমার বান্দাকে ক্ষমা করে দিলাম।’
প্রিয় পাঠক! পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে- ‘আর যে ব্যক্তি তার রবের সামনে দ-ায়মান হওয়াকে ভয় করেছে এবং নিজেকে গর্হিত কাজ থেকে বিরত রেখেছে, জান্নাত-ই হচ্ছে তার একমাত্র আবাসস্থল।’
আলামা ইবনুল জাযি রাহিমাহুল্লাহ আরেকটি ঘটনা উল্লেখ করেছেন, এক আল্লাহভীরু ব্যক্তি মৃত্যুর আগ মুহূর্তে তার সন্তানকে ডাকলেন এবং সন্তানকে লক্ষ করে বললেন, হে আমার আদরের সন্তান, তুমি আমার কথা শুনো, আমি যেভাবে যে কাজ করতে বলি, তুমি সেভাবে তা পালন করো। তুমি দড়ি দিয়ে আমার ঘাড়টিকে বাঁধো, তারপর আমাকে টেনেহিঁচড়ে শাস্তি দিতে থাকো এবং আমাকে লক্ষ করে বলতে থাক- এটিই হচ্ছে তার প্রতিদান যে তার রবের অবাধ্য হচ্ছে। বাবার কথামতো ছেলে তাই করল। তখন সে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল, হে আমার রব, হে আমার মুনিব! আমি পাপি আর আপনি দয়ালু, আমি জঘন্য অপরাধী আর আপনি পরম করুণাময় ও অতি দয়ালু, আমি গোলাম আর আপনি মুনিব। আপনি চাইলে এখনি আমার মৃত্যু আসবে, কিন্তু আমি আমার পাপের বোঝা নিয়ে কিভাবে আপনার সামনে দ-ায়মান হবো? সুতরাং আমার পাপগুলো আপনি ক্ষমা করে দিন, আপনি ছাড়া আমার আর কোনো আশ্রয়স্থল নেই। এমন আকুতি মিনতি করতে থাকল তার রবের কাছে। আর এমন অবস্থাতেই তার রূহ বেরিয়ে গেল। তখন বাড়ির কোনো এক প্রান্ত থেকে একটি আওয়াজ এলো এবং উপস্থিত সবাই সেই আওয়াজ শুনতে পেল যে, বান্দা তার রবের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছে আর রব তাঁর বান্দাকে নিকটবর্তী করে নিয়েছেন, ক্ষমা করে দিয়েছেন এবং জান্নাতের উচ্চ আসনে তাকে সমাসীন করেছেন।
প্রিয় পাঠক! আসুন আমরাও পুণ্যবান ব্যক্তির মতো তাওবা করি, পাপের জন্য অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করি এবং বলি, ‘হে আমার রব! আমি জানি আমার গুনাহের পরিমাণ অনেক বেশি, তবে আমি তাও জানি তোমার দয়া তার চেয়েও আরো বেশি। যদি নেককাররাই শুধু তোমার দয়ার আশা করতে পারে, তবে আমার মতো পাপীরা কার কাছে যাবে? কার কাছে গিয়ে ক্ষমা চাইবে? হে আমার রব! তুমি যেভাবে নির্দেশ দিয়েছ, সেভাবে ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে অনুতপ্ত হয়ে তোমার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। দু’হাত তোলে ফরিয়াদ করছি, হে আল্লাহ! তুমি যদি ফিরিয়ে দাও, তাহলে কে আমায় রহম করবে? হে আল্লাহ! আমার বুকভরা আশা আর তোমার অনুগ্রহ ছাড়া আমার কাছে আর কোনো ওছিলা নেই। হে আমার রব! আমি তোমার কাছে আত্মসমর্পণ করছি, তুমি আমায় ক্ষমা করো।’ ‘আর তোমরা নিজেদের পালনকর্তা সমীপে ক্ষমা প্রার্থনা করো। অনন্তর তাঁরই প্রতি মনোনিবেশ করো। তাহলে তিনি তোমাদেরকে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত উৎকৃষ্ট জীবনোপকরণ দান করবেন এবং অধিক আমলকারীকে বেশি করে দেবেন আর যদি তোমরা বিমুখ হতে থাকো, তবে আমি তোমাদের ওপর এক মহা দিবসের আজাবের আশঙ্কা করছি।’ (সূরা হুদ-৩) লেখক : আলেম ও সাংবাদিক