সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:২৯ পূর্বাহ্ন

কত কথা বলেছেন- হাঁটু ভাঙা, মাজা ভাঙা, এখন ঘাবড়ে গেছেন কেন? :মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

শাহ্জাহান সাজু:
  • আপডেট সময় রবিবার, ৬ নভেম্বর, ২০২২

সরকারের বিরুদ্ধে জনগণ ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, সরকারের বিরুদ্ধে জনগণ ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে, ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। জনগণ আমাদের থেকে এগিয়ে যাচ্ছে। বরিশালের সমাবেশ, খুলনার সমাবেশ, ময়মনসিংহের সমাবেশে মানুষ সব বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে চলে এসেছে।
আজ রবিবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের এক আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব এসব কথা বলেন। জাতীয় প্রেস ক্লাবের চৌধুরী হলে নাগরিক ঐক্যের ‘যুগপৎ আন্দোলন ও রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তর’ শীর্ষক এই আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়। মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বরিশালের সমাবেশের আগে সব কিছু বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, মানুষ নদী সাঁতরে পার হয়েছে, পরপর দুই রাত খোলা আকাশের নিচে তারা শুয়ে কাটিয়েছে। বিভাগীয় সমাবেশগুলোতে এসব দেখে আমরা বেশি অনুপ্রাণিত হয়েছি। আমাদের মধ্যে বিশ্বাস জন্মেছে- মানুষের আকাঙ্ক্ষা হচ্ছে পরিবর্তনের, তারা পরিবর্তন চায়।’ তিনি আরো বলেন, ‘এত মামলা-মোকদ্দমা করে বিএনপিকে তো আপনারা একেবারে দমিত করে দিতে পারেননি, স্তিমিত করে দিতে পারেননি। কত কথা বলেছেন- হাঁটু ভাঙা, মাজা ভাঙা আরো কত কিছু বলেছেন। তাই যদি হয় তাহলে কেন এত ঘাবড়ে গেছেন, এত আশঙ্কা কেন? আর বলছেন কী? পালাব না, আমরা জেলে যাব। তাহলে জেলে যাওয়ার কথা চিন্তা করতে শুরু করেছেন। এটাই তো বোঝা উচিত ছিল তাদের। ‘ এত দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক দল, আমরাও তো আশা করেছিলাম যে তারা জনগণের চোখের ভাষা বুঝতে পারবে উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমি বারবার বলি, ভাই আবদ্ধ ঘর থেকে বের হয়ে আসেন। সাধারণ মানুষ রিকশাওয়ালা, শ্রমিক ভাই, গরিব কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে দেখেন- তারা কেমন আছেন। ‘
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজ সকালে আমাদের মহিলা দলের নেত্রী সুলতানা আহমেদকে র‌্যাব তুলে নিয়ে গেছে। দক্ষিণ সিটির আমাদের মেয়র পদপ্রার্থী ইশরাক হোসেনসহ ১১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, আমাদের ভোলার সভাপতি গোলাম নবী আলমগীরসহ নেতাকর্মীদের বহনকারী লঞ্চে হামলা করে মামলা দেওয়া হয়েছে। এখন গায়েবি মামলা শুরু হয়েছে আবার। ‘
সাভারে কোনো ঘটনাই ঘটেনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের সাভারের নেতা দেওয়ান মো. সালাহউদ্দিনসহ দেড় শজনের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। অর্থাৎ আন্দোলনকে কিভাবে মামলা-মোকাদ্দমা দিয়ে দমননীতি চালিয়ে বন্ধ করে দেওয়া যায় সেই প্রসেস তারা শুরু করেছে। ‘
তিনি বলেন, ‘সরকার বুঝতে পারছে না যে জনগণের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। জনগণ ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। এই হামলা-মামলা-মোকদ্দমা দিয়ে তো অতীতে লাভ হয়নি, এখনো হবে না। আজকে ১৫ বছর ধরে এগুলো করছে তারা। ‘ আমরা দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে একসঙ্গে আন্দোলনটা করতে চাই উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এটা আমাদের স্থির সিদ্ধান্ত। সেই সিদ্ধান্ত নিয়ে আমরা এগিয়ে চলেছি। ‘
তিনি আরো বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার কি হবে না হবে বা নির্বাচনকালীন সরকার কি হবে না হবে সেটা আমরা আলোচনার মধ্য দিয়ে ঠিক করে ফেলব। এটা বেশি সমস্যার হবে বলে আমরা মনে করি না। ‘
ফখরুল বলেন, ‘আমরা মনে করি, এই বিষয়গুলো নিয়ে দ্রুত আমাদের বসা উচিত এবং সমাধান করা উচিত। কারণ আমরা একটা বিষয় একমত হয়েছি যে গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার জন্য আমরা একযোগে যুগপৎ আন্দোলন করব। বাকি ইস্যুগুলো আলোচনা করে সমাধান করতে বেশি সময় লাগবে বলে আমি মনে করি না। ‘ মাহমুদুর রহমান মান্নার বক্তব্য উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যে কথাটা কিছুক্ষণ আগে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন যে মন্ত্রী বানাতে হবে না। আমরাও তো বলি মন্ত্রী বানাতে হবে না। আমাদেরকে ক্ষমতা দিয়েন না, কিন্তু পরিবর্তনটা আনুন। এ দেশের মানুষকে বাঁচতে দিন, এ দেশের মানুষকে একটা উচ্চ সমাজে বাঁচতে দিন। মানুষকে তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষাগুলো পূরণ করার একটা ক্ষেত্র তৈরি করে দিন। আসুন আমরা সবাই একসাথে হই। এটাই হচ্ছে আমাদের একমাত্র লক্ষ্য। ‘
তিনি বলেন, ‘আপনারা বলেছেন যে, এর পরে কী হবে? আপনারা প্রস্তাব দিচ্ছেন, আমরাও তো প্রস্তাব দিচ্ছি। আলোচনা করে আমরা ঠিক করে ফেলব- সামনের দিনে কী হবে, কিভাবে এগগোতে পারবে, কিভাবে আমরা ভবিষ্যতে রাষ্ট্র তৈরি করব, আসুন আমরা চেষ্টা করি, কথা বলি। আমার বিশ্বাস, কোথাও কোনো কিছু আটকাবে না। ‘ আমি অত্যন্ত আশাবাদী উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, আমরা পেরেছি তো অতীতে বহুবার। আমরা ১৯৪৬ সালে পেরেছি, আমরা ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন করে ভাষা নিয়ে এসেছি, আমরা তো ৯০-এ গণ-অভ্যুত্থান করেছি, আমরা এর পূর্বে ৬৯-এ গণ-অভ্যুত্থান করেছি, ছাত্র-গণঅভ্যুত্থান করেছি। একাত্তরে স্বাধীনতাযুদ্ধ করেছি। একসাথে করেছি বলে সফল হয়েছি। আমি বিশ্বাস করি, একসাথে যদি আমরা যাই সামনের দিকে, একসাথে যদি লড়াই করি তাহলে আমরা জয়ী হব। ‘ সভাপতির বক্তব্যে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘বিভিন্ন সমাবেশ থেকে বোঝা যায় দেশে গণ-অভ্যুত্থান সৃষ্টি হয়েছে। গোটা পরিস্থিতি এখন বদলে গেছে। এখন আর কোনো ভয়ের চাদর নেই। এই যে সংকট চলছে, এই সংকটে বিএনপি একা নয়, আমরাও পাশে আছি। ’ তিনি বলেন, ‘আসুন আমরা সবাই এই সংকট উত্তরণে এক হয়ে কাজ করি। আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, আমরা নীতিগতভাবে এই সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে চাই শর্তহীনভাবে। আমরা জনগণের কল্যাণ চাই, একটা সত্যিকার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণ করতে চাই। ‘ ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’ আগামী ১২-১৯ নভেম্বরের মধ্যে বিএনপির সঙ্গে ‘যুগপৎ আন্দোলনের’ বিষয়ে সংলাপ করবে বলে জানান তিনি। বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘বিএনপির সমাবেশগুলোতে বাজারের আগুন ও মানুষের মনের আগুন এক হয়ে গেছে। এটাই বাস্তবতা। এই পরিস্থিতি এখন গণ-অভ্যুত্থানের কাছাকাছি। ‘ গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘আমরা বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো একটি নতুন রাজনৈতিক চুক্তির ভিত্তিতে দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই। সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। আমাদের সরকার পতনের আন্দোলনকে সেই লক্ষ্যে এগিয়ে নিতে হবে। ‘ নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সারের সঞ্চালনায় আলোচনাসভায় ভাসানী অনুসারী পরিষদের শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের হাসনাত কাইয়ুম প্রমুখ বক্তব্য দেন।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com