কফি হতে পারে সিলেট অঞ্চলের পরবর্তী বিশেষ পণ্য। গবেষকদের মতে, সিলেটের পাহাড়ি এলাকা রবাস্টা প্রজাতির কফি উৎপাদনের জন্য উপযোগী। ইতোমধ্যে সিলেট জেলার গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার উপজেলায় বেশ কয়েক বিঘা জমিতে কফি চাষ করা হয়েছে। জানা গেছে-গোলাপগঞ্জের ৫০ বিঘা জমিতে একটি কফি বাগান তৈরী করা হয়েছে। বিয়ানীবাজারে আরো ১ বিঘা জমিতে লাগানো হয়েছে কফি গাছ। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহায়তায় এ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ধারণা করা যায়- সিলেট জেলার গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার উপজেলায় কফি চাষের ফলাফল ইতিবাচক হলে, সিলেট অঞ্চলের মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার পাহাড়ি এলাকাসমূহও কফি উৎপাদনের জন্য উপযোগী হবে। বর্তমানে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্মপ্লাজম সেন্টার সিলেট অঞ্চলে কফি উৎপাদন নিয়ে গবেষণা করছে। উল্লেখ্য, দীর্ঘকাল যাবৎ এদেশে চা একমাত্র সহজলভ্য ও জনপ্রিয় পানীয়। বর্তমানে চায়ের পাশাপাশি কফিও জনপ্রিয়তা পাচ্ছে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর মাঝে। তাই কফি চাষ অত্যন্ত লাভজনক ও অর্থকরী ফসল হয়ে ওঠতে পারে এমন অভিমত সংশ্লিষ্ট কৃষি কর্তৃপক্ষের। এদেশে কফির চাহিদা মেটাতে বিদেশ থেকে গ্রীণ ও রোস্টেড কফি আমদানি করা হয়। কিন্তু সিলেট অঞ্চলে যদি পর্যাপ্ত কফি উৎপাদিত হয়, তবে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রফতানি করা সম্ভব হবে। এতে অর্জিত হবে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা। শুধু সিলেট নয়, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও টাঙ্গাইলের পাহাড়ি ভূমিতেও কফি উৎপাদন সম্ভব বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন কৃষি গবেষকরা। তাদের মতে, এসব অঞ্চলের ভূমি ও আবহাওয়া কফি উৎপাদনের উপযোগী। কৃষিবিদরা বলেন- চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকায় ভালো স্বাদ ও গন্ধবিশিষ্ট উন্নতমানের কফি উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। ‘নর্থ এন্ড কফি রোস্টার্স’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত কফিকে হিলট্র্যাক্ট ব্লেন্ড হিসেবে বৈশ্বিক কফি উৎপাদনের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার লক্ষ্যে কাজ করছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলেছে- কফি উৎপাদনের জন্য অতিরিক্ত রাসায়নিক সার, কীটনাশক কিংবা সেচের প্রয়োজন হয়না। কফি চাষের জন্য ভূমি হতে হয় গভীর, বেলে আঁশ এবং জৈব পদার্থ ও হিউমাস সমৃদ্ধ- যা কিছুটা এসিডযুক্ত। কফি হালকা ছায়ায় জন্মে। এর সাথে পেঁপে ও আনারসও ফলানো যাবে। কফি গাছে সাধারণত: ফুল আসে জানুয়ারী ফেব্রুয়ারী মাসে। আর নভেম্বর-ডিসেম্বরে কফি সংগ্রহ করা যায়। কফি গাছ চা গাছের চেয়েও বেশী দীর্ঘস্থায়ী হয়। এগুলো ৬০ থেকে ১০০ বছর পর্যন্ত বাঁচে। রোপনের ৬-৭ বছর পর কফি ফল ধরতে শুরু করে। একটি কফি গাছ থেকে বছরে ৬ কেজি পর্যন্ত কফি সংগ্রহ করা যায়। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, একজন কফি চাষী এক একর ভূমিতে উৎপাদিত রবাষ্টা জাতের কফি থেকে ১ থেকে দেড় লাখ টাকা মুনাফা করতে সক্ষম। অবশ্য এর চেয়ে কিছু কম উৎপাদিত হয় অ্যারাবিকা প্রজাতির কফি। সিলেটের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলেছে- তারা কৃষি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দেশব্যাপী কফি ও কাজু বাদাম উৎপাদনকে জনপ্রিয় করার একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। কফি উৎপাদনের ক্ষেত্রে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় সিলেটের ভূমি ও আবহাওয়া সবচেয়ে বেশী উপযোগী। বিশ্ববাণিজ্যে তেলের পর কফিই হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক পণ্য। তাই, এ পণ্য বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনে বিশেষ ভূমিকা রাখতে সক্ষম। আমরা কফি চাষকে জনপ্রিয় করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের গৃহীত সকল পদক্ষেপকে স্বাগত জানাচ্ছি এবং এর সফলতা কামনা করছি।