পোল্যান্ড প্রবাসী মোঃ রাজু আহমদ দোলন। ছোটবেলা থেকে হেলিকপ্টারে চড়ে বিয়ে করার স্বপ্ন নিয়ে তার বেড়ে উঠা। অবশেষে তার সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। বিয়ে করে বউকে হেলিকপ্টারে করে বাড়িতে এনেছেন। প্রবাসী রাজু আহমদ দোলন শ্রীমঙ্গল শহরতলীর মুসলিমবাগ আবাসিক এলাকার কাপড় ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদীন এর বড়পুত্র। তার মায়ের নাম রুবিনা বেগম। গতকাল শহরতলীর কালিঘাট রোডস্থ চলন্তিকা মাঠ থেকে মা,বাবা, ভাই, বোন-কে সাথে নিয়ে হেলিকপ্টার চড়ে কনে আনতে যান শ্রীমঙ্গলের রাধানগর এলাকার পাঁচ তারকা হোটেলখ্যাত শ্রীমঙ্গলের গ্র্যান্ড সুলতান রিসোর্টে। এর আগে গ্র্যান্ড সুলতান রিসোর্ট অ্যান্ড গল্ফ এর কনভেনশন হলে তাদের বিবাহোত্তর ওয়ালিমা অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। হেলিকপ্টারটি চলন্তিকা মাঠে অবতরণ করলে ব্যতিক্রমী এ বিয়ে দেখতে চলন্তিকা মাঠে শত শত উৎসুক নারী-পুরুষ এবং শিশু-কিশোরেরাও ভিড় জমান। কনে মোছাঃ আছমা আক্তার ইতি একই এলাকা মুসলিমবাগ এলাকার বাসিন্দা মৃত নুরুল ইসলাম ও মরহুমা রাহেলা ইসলামের কনিষ্ট কন্যা। কনের বড় বোন শ্রীমঙ্গলের ঐতিহ্যবাহী স্কুল ভিক্টোরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা মাসুদা বেগম। জন্মসুত্রে রাজু আহমেদ দোলন বাংলাদেশী হলেও তিনি পোলিশ নাগরিকও (পোল্যান্ডের নাগরিক)। তিনি বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র মজলিসের সাবেক শ্রীমঙ্গল উপজেলা সভাপতি ছিলেন। রাজু আহমদ দৈনিক খবরপত্র-কে জানান-প্রায় এক যুগ আগে তিনি উচ্চশিক্ষার জন্য স্টুডেন্ট ভিসায় প্রথমে ইংল্যান্ড পাড়ি জমান। সেখানে ব্যবসার উপর ডিপ্লোমা শেষ করে দেশে ফিরে আসেন। দেশে কিছুদিন বাবার ব্যবসা-বাণিজ্য দেখাশোনা করে ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে পোল্যান্ড চলে যান। সেখানে প্রথমে একটি রেস্টুরেন্টে জব নেন। এরপর তিনি নিজে একটি রেস্টুরেন্ট এর ব্যবসা শুরু করে। ধীরে ধীরে ব্যবসা বড় হতে চললো। পর্যায়ক্রমে তিনি রাজু কেবাব, বার্গার এবং ইন্ডিয়ান নামে আরও ৩টি হোটেল অ্যন্ড রেস্টুরেন্ট এর শাখা চালু করেন।
এসবের সত্ত্বাধিকারীও তিনি। প্রবাসে তিনি একজন তরুণ সফল উদ্যোক্তা এবং ববসায়ী। হেলিকপ্টার নিয়ে বিয়ে করার উদ্যোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান- ছোটবেলা থেকেই একটা ইচ্ছে ছিল যে হেলিকপ্টার চড়ে বউ আনতে যাবো। আলহামদুলিল্লাহ হেলিকপ্টার চড়ে বউ এনে ছোটবেলার স্বপ্নটা পুরণ হলো। আল্লাহতায়ালে আমার মনের আশাটা পূরণ করলেন। দুআ করবেন সবাই আল্লাহ যেন আমাদের সঠিক পথে পরিচালিত করেন এবং আমাদের জুটিটাকে জান্নাতুল ফেরদাউস পর্যন্ত কবুল করেন। তিনি আরো জানান-আমার বিবাহকে জাঁকজমকভাবে শুধুমাত্র অনুষ্ঠান করা উদ্দেশ্য ছিল না। উদ্দেশ্য ছিলে সমাজে এমনটি মেসেজ দিতে যে, ইসলামি মরিয়াহ এর মধ্যে থেকেও জাঁকজমকভাবে বিয়ের অনুষ্ঠান করা যায়, যেমনটি আমি করেছি। সমাজে প্রত্যেকটি বিয়েতে গায়ে হলুদ অনুষ্ঠানের নামে যে পরিমাণ বেহায়াপনী করা হয়, গান-বাজনা, ড্যান্স, মেয়েদের অবাধ মেলামেশা সেটা না করে জমকালোভাবে আমি ইসলামী গজল সন্ধা করেছি। গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানের বিপরীতে ইসলামী গজল সন্ধার আয়োজন করি। বিয়ের আগের রাতে ৮ নভেম্বর দেশের নন্দিত ইসলামী সংগিত শিল্পী আহমদ আব্দুল্লাহ ঢাকা, জনপ্রিয় উর্দু নাশিদ শিল্পী শেখ এনাম এবং বিনোদন বন্ধু শেখ মহিউদ্দিন হাসান, আবাবিল সাংস্কৃতিক ফোরাম পরিচালক শাহ মিসবাহসহ স্থানীয় শিল্পীরা রাত ৮টা থেকে ১১টা পর্যন্ত ইসলামী সংগিত পরিবেশ করে দর্শক শ্রুতাদের মাতিয়ে রাখেন। রাজু আহমদ দোলন আরো বলেন, আমার বিবাহত্তোর ওয়ালিমা পাঁচ তারকা মানের হোটেল করেেলা আমার স্ত্রীকে পরিপূর্ণ পর্দার মধ্যে রেখেছি। শ্রীমঙ্গল এর মধ্যে প্রথম আমি হেলিকাপ্টার নিয়ে স্ত্রীকে আনতে গিয়েছি, কিন্তু কোনো ধরণের ব্যান্ড পার্টি দাওয়াত করিনি। আমার অনুষ্ঠানকে আমি চেষ্টা করেছি ইসলামী শরিয়তের ভেতরে থেকে প্রাণবন্ত করতে। বিয়েতে স্থানীয় সংসদ সদস্য উপাধ্যক্ষ ড. মো. আব্দুস শহীদ এমপি, শ্রীমঙ্গল পৌরসভার মেয়র মো. মহসিন মিয়া মধু, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব প্রফেসর ড. আহমদ আব্দুল কাদের, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র মজলিসের কেন্দ্রীয় সভাপতি বিলাল আহমদ চৌধুরীসহ বিভিন্ন শ্রেণির পেশার ৪শ মানুষকে ইনভাইট করেছিলাম পাঁচ তারকা হোটেল গ্র্যান্ড সুলতানে। অনেকেই এসেছেন। সবার প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা আদায় করছি।