সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৫৯ পূর্বাহ্ন

এই সরকারের পায়ের নিচে এখন আর মাটি নেই

বেলায়েত হোসেন লিটন, ফরিদপুর:
  • আপডেট সময় শনিবার, ১২ নভেম্বর, ২০২২

ফরিদপুরের বিশাল গণসমাবেশে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ফরিদপুরের গণ সমাবেশের জন স্রোতই বলে দেয় আওয়ামী লীগের দিন শেষ। এই সরকারের পায়ের নিচে এখন আর মাটি নেই। এই মুহুর্তেই নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ হারে হারে টের পাবে তাদের অবস্থান এখন কোথায়। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা এখন তলানিতে, বাহিনী দিয়ে এতোদিন ক্ষমতায় ছিলো এই সরকার। দেশের সাধারণ মানুষ এখন আর এই সরকারকে দেখতে চায় না। এই সরকার বিএনপির নেতা কর্মীদেরকে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেল খাটাচ্ছে, বেগম খালেদা জিয়াসহ সকল নেতা কর্মীর নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানিয়েছেন এবং আগামী সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষে ভোট দিয়ে এই জুলুমবাজ সরকারকে বিতাড়িত করার আহবান জানান।
গতকাল শনিবার বিকালে ফরিদপুরের কোমরপুর আঃ আজিজ ইনস্টিটিউশন মাঠে বিএনপির ফরিদপুর বিভাগীয় গণ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপির ফরিদপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এ এফ এম কাইয়ুম জঙ্গী এর সভাপতিত্বে এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গণ সমাবেশের প্রধান বক্তা মির্জা আব্বাস, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বিএনপির ভাইস- চেয়ারম্যান ব্যারিষ্টার শাহজাহান ওমর বীর উত্তম, ভাইস চেয়ারম্যান ও গণ সমাবেশের সমন্বয়ক ডাঃ এসএম জাহিদ হোসেন, যুগ্ন- মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহাবুব উদ্দীন খোকন, বরিশালের সাবেক মেয়র মজিবর রহমান ছারোয়ার, সাবেক সংসদ সদস্য শাহ মোঃ আবু জাফর, জহুরুল হক শাহজাদা মিয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ ইসলাম রিংকু, কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল, সহ- সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিম, কেন্দ্রীয় বিএনপির নেতা হেলেনা জেরিন, নায়েবা ইউসুফ, ইসমাত আরা হক, আলী নেওয়াজ খৈয়ম, কেন্দ্রীয় যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, ঢাকা মহানগর উত্তরের সাবেক যুগ্ন- সম্পাদক হাফিজুর রহমান শরীফ, ছাত্র দলের সভাপতি কাজী রওনোকুল ইসলাম শ্রাবন, জাসাস আহ্বায়ক চিত্রনায়ক হেলাল খান, জেলা বিএনপির সভাপতি এ্যাডঃ মোদাররেস আলী ইছা, যুগ্ন- সম্পাদক জুলফিকার হোসেন জুয়েলসহ জেলা নেতৃবৃন্দ। এছাড়া মাদারীপুর, শরিয়তপুর, গোপালগঞ্জ, রাজবাড়ীসহ দেশের বিভিন্ন জেলার নেতৃবৃন্দসহ আরো উপস্থিত ছিলেন নগরকান্দা উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি হাবিবুর রহমান বাবুল তালুকদার, সালথা উপজেলা বিএনপির সভাপতি ছিদ্দিকুর রহমান, নগরকান্দা উপজেলা বিএনপির সহ- সভাপতি আলিমুজ্জামান সেলু, সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রহমান মুকুল, সাংগঠনিক সম্পাদক শওকত আলী শরীফ, বিএনপি নেতা রেজাউল আলম রিজু, মজিবর রহমান, জেলা যুবদলের যুগ্ন- সম্পাদক হেলালউদ্দীন হেলাল, যুবদল নেতা তৈয়াবুর রহমান মাসুদ, রবিউল ইসলাম বাবু প্রমুখ।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, সরকারের কোনো সমর্থন নেই। সরকারের সমর্থন থাকলে তারা পরিবহন করতো না। তারা মোকাবেলা করতো। এ সময় তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগ এই দেশটাকে কোথায় নিয়ে গেছে। চুরি ডাকাতি ধর্ষণ লুটপাট বেড়েই চলেছে। এই সব বন্ধ করতে হবে। এই সরকারের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন দেশে দুর্ভিক্ষ হবে। আমি এর প্রতিবাদ করেছি। এখন তিনি আবার বলছেন দেশে দুর্ভিক্ষ হবে না।
মির্জা আব্বাস বলেন, দেশের রিজার্ভ খালি হয়ে গেছে। রেমিট্যান্স আসা কমে গেছে। বিএনপি এদেশে জনগণের বোঝা হয় নাই। কিন্তু তারা সিন্দাবাদের বোঝার মতো জনগণের ঘাড়ে এসে চেপেছে। তারা যে চুরির টাকাগুলো নিয়ে গেছে, দেশে তো দুর্ভিক্ষ হবেই। অভাব হবেই। এই বাংলাদেশ সোনার বাংলা। এবার যদি দুর্ভক্ষ হয়, তাহলে সেটি হবে রাজনৈতিক দুর্ভিক্ষ। এই রাজনৈতিক দুর্ভিক্ষ এদেশে কোনো দিন হয় নাই।
তিনি বলেন, আমরা যখন নির্বাচনের কথা বলি, গণতন্ত্রের কথা বলি, তখন তিনি আমাদের গলা চেপে ধরেন। গলা চেপে ধরার দিন শেষ। এই সরকার নিজেই ভোট দিয়ে দেয়। জনগণ ভোট দিতে পারে না।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটিয়ে দেশের সকল জাতীয় দলকে সাথে নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করা হবে। তিনি বলেন, এই সরকারকে হটাতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আর আগামী নির্বাচন অবশ্যই নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে হতে হবে। সেই নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনে ফরিদপুরের ফলাফল কি হতে পারে তার ইঙ্গিত আপনারা দেখিয়ে দিয়েছেন।
আমীর খসরু বলেন, বিএনপিকে হেফাজতের ভয় দেখানো হয়েছিল। তারপরও মানুষ সমাবেশে এসেছে। সব ধরনের বাধা দিয়েও তারা যখন পরাজিত হয়েছে তখন তারাও সমাবেশের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারা গ্রামে-গঞ্জে বাস-ট্রাক পাঠিয়েছে সমাবেশে লোক আনতে। কিন্তু তাদের সমাবেশে মানুষ একদিক দিয়ে এসে আরেক দিক দিয়ে বের হয়ে গেছে। আর আমরা কাউকে টাকা দেই নাই, কাউকে পরিবহন দেই নাই। কাউকে গরুর গোশতও খাওয়াই নাই। মানুষ তিন দিন আগে থেকে সব বাধা টপকে আসতে শুরু করেছে। ‘বিএনপির গণসমাবেশ ঠেকাতে আওয়ামী লীগ অনেক বাধা দিয়েছে। তবু তারা গণসমাবেশকে ঠেকাতে পারে নাই। মানুষ বাঁধভাঙা বানের মতো গণসমাবেশে যোগ দিয়েছেন,’ বলেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, দেশে বিএনপির নেতৃত্বে আগামীতে অবশ্যই নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে। আর সেই নির্বাচনের ফলাফল কি হতে পারে তার ইঙ্গিত আপনারা দেখিয়ে দিয়েছেন আজকের সমাবেশে।
বিএনপির ফরিদপুর বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক খন্দকার মাশুকুর রহমান মাশুক বলেছেন, অনেকেই মনে করেন ফরিদপুর আওয়ামী লীগের দুর্গ। কিন্তু আজ ফরিদপুরের গণসমাবেশে প্রমাণ হয়েছে ফরিদপুর বিএনপির ঘাঁটি, তারেক রহমানের ঘাঁটি। তিনি বলেন, বিএনপি ফরিদপুরে আওয়ামী লীগকে লাল কার্ড দেখিয়ে দিলো। আওয়ামী লীগ অনেক চেষ্টা করেও বরিশালের মতো ফরিদপুরের গণসমাবেশকে ঠেকাতে পারে নাই। সমাবেশে বক্তব্যকালে বিএনপির ফরিদপুর বিভাগীয় আরেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিম বলেন, প্রধানমন্ত্রী অনেক টাকা খরচ করে পদ্মা সেতু উদ্বোধনকালে যত মানুষ জড়ো করেছিলেন, আজ ফরিদপুরের এই গণসমাবেশে তার চেয়ে দশ গুণ বেশি মানুষ সমবেত হয়েছেন। ফরিদপুরের মাটি থেকেই খেলা শুরু হয়ে গেছে। সকালে গণসমাবেশ শুরুর পর দুপুরে প্রধান অতিথি, প্রধান বক্তা ও বিশেষ অতিথিদ্বয় সমাবেশস্থলে এসে পৌঁছেন।
শামা ওবায়েদ ইসলাম রিংকু এই গণ সমাবেশ স্বতস্ফর্ত ও শান্তিপুর্ণভাবে সম্পন্ন করায় কেন্দ্রীয় এবং ফরিদপুর বিভাগীয় বিএনপির সকল নেতৃবৃন্দদেরকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তিনদিন আগে থেকেই দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে দল বেধে ফরিদপুরের কোমরপুর আঃ আজিজ ইনস্টিটিউশন মাঠে এসে অবস্থান নেয় বিএনপির নেতা কর্মিরা। শনিবার গণ সমাবেশের তারিখ নির্ধারিত হওয়ার পর ফরিদপুর বাস মালিক সমিতি ও শ্রমিক ঐক্য পরিষদ তাদের দাবীদাওয়া নিয়ে আলটিমেটাম দিয়ে শুক্রবার ও শনিবার পরিবহন ধর্মঘট ডাক দেওয়া হয়। এর ফলে দুই দিন আগে থেকেই সমাবেশ স্থলে নেতা কর্মিরা এসে মাঠে জায়গা দখল করে। শুক্রবার বিকালেই কোমরপুর আঃ আজিজ ইনস্টিটিউশন মাঠ পরিপূর্ণ হয়ে যায়। শনিবার কোমরপুর হয়ে যায় জনসমুদ্রে পরিনত। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পৌনে দুটায় সমাবেশ স্থলে পৌছালে উপস্থিত নেতৃবৃন্দ তাকে বরণ করে নেয়। সারা দেশেই বিএনপির বিভাগীয় পর্যায়ে গণ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তারই অংশ হিসেবে ফরিদপুরের বিভাগীয় এ গণ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

তিনি আরো বলেন দেশের বিভিন্ন জেলায় আমাদের পাঁচজন নেতা কর্মীদের হত্যা করেছে এই সরকার। আমরা সেই হত্যা গুলোকে ব্যথা যেতে দিবোনা। এই সরকারের আমলে নিজের ভোট নিজে দিতে পারে নাই কেউ। প্রধান অতিথি বলেন সরকার এমন কোন দপ্তর নেই যেখানে চুরি করে নাই।
তারা বলতে থাকে দেশে কোন রিজার্ভ নাই। গনতন্ত্রের মাথা বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে আটকে রেখেছে। আমাদের সামনে একটাই কাজ জাতীয় ঐক্যের সরকার গঠন করা। মির্জা আব্বাস বলেন সরকার ফরিদপুরের গণ সমাবেশকে ভয় পেয়ে নেটও বন্ধ করে দিয়েছে। যাতে লাখ লাখ লোকের সমাগম যেন মিডিয়ায় প্রচার না করতে পারে। বিএনপিকে ভালোবেসেই তিনদিন মাঠেই না খেয়েও ঘুমাইছে ফরিদপুরের জনগণ। গণ সমাবেশের সভাপতি এফ এম কাইয়ুম জঙ্গী বলেন এই সমাবেশের একটাই উদ্দেশ্য আওয়ামিলীগ সরকারকে হটানো।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com