শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৩৩ পূর্বাহ্ন

কলাপাড়ায় আন্ধারমানিক নদীর ভাঙনে বিলীন হচ্ছে ঘর, ফসলি জমি

এনামুল হক কলাপাড়া
  • আপডেট সময় রবিবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২২

আন্ধারমানিক নদীর সাগর মোহনা ঘেষাঁ অসময়ের তীব্র ভাঙনে দিশেহারা পটুয়াখালী কলাপাড়া উপজেলার আন্ধারমানিক নদীর পাড়ে নীলগঞ্জ ইউনিয়নের মানুষ। বর্ষার আন্ধারমানিক নদীর ভাঙনের ক্ষতি কাটতে না কাটতেই আবার শুরু হয়েছে তীব্র ভাঙন। শুস্ক মৌসুমের এ ভাঙনে গত এক সপ্তাহে নদীতে বিলীন হচ্ছে ঘর বাড়ী ও শত শত বিঘা ফসলি জমি। প্রতি দিন একটু একটু করে আন্ধারমানিক হারিয়ে যাচ্ছে নীলগঞ্জ ইউনিয়নের মানচিত্র। নিঃস্ব হচ্ছে এলাকার মানুষ। গত ১৫ বছরে বিভিন্ন পর্যায়ে ও দপ্তরে থেকে আশ্বাস দেয়া হচ্ছে এ অঞ্চলের নদী শাসনের জন্য কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। শুস্ক মৌসুমে এই ভাঙনের ফলে আন্ধারমানিক নদীর পাড়ে র মানুষ ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নে ৪৬ পোল্ডারে সাত কিলোমিটারের অবস্থা খুবই নাজুক। জালালপুর, সদরপুর, আক্কেলপুর, সৈয়দপুর, মজিদবাড়িয়া, দরিয়াপুর, হাজীপুর, লস্করপুর গ্রামের কয়েক হাজার পরিবার। কৃষক আমন হারানোর শঙ্কায় পড়েছেন। নীলগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, ইউনিয়নের মোট আয়তন ছিল ৬৩.৩৮ বর্গকিলোমিটার। ক্রমান্বয়ে তা কমে বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ৬২ বর্গকিলোমিটার। এই হিসাব অনুযায়ী ১ বর্গকিলোমিটারের ও বেশি জমি নদীতে বিলীন হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলা নীলগঞ্জ ৪৬ পোল্ডারের জালালপুর গ্রামের অন্তত ৩০ মিটার বেড়িবাঁধ আন্ধারমানিক নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এখন শুধু কান্ট্রি সাইটের কিছুটা স্লোপ বাকি আছে। ফলে সেখানকার আট গ্রামের অন্তত দুই হাজার কৃষক পরিবার জোয়ারের পানি প্রবেশের শঙ্কায় রয়েছেন। তাইলে হারাবেন এসব পরিবার আমন ফসল। এসব কৃষকের পানির প্লাবনের শঙ্কায় রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। কৃষকের অভিযোগ, মাত্র কয়েক মাস আগে ওই স্পটের বাঁধটি বালু সিমেন্ট ভর্তি জিও ব্যাগ দিয়ে জরুরি প্রটেকশন দেয়া হয়েছে নামে মাত্র কিন্তু কোনো কাজেই আসছে না। ভাঙনে দিশেহারা নদীর পাড়ের বসবাসরত সাধারন মানুষ। নদী ভাঙনের কারনে এলাকার লোকজন এখন আতঙ্কের মধ্যে আছেন। নদীর পাড় দিয়ে বাঁধ নির্মান এবং নদী শাসন করলে হয়তো ভাঙন রোধ করা সম্ভব। বর্তমানে ভাঙন তীব্রতা বেড়ে যাওয়ার কয়েকটি বাড়ী-ঘর হুমকির মুখে রয়েছে। ভাঙন অব্যাহত থাকলে বা জরুরী ব্যবস্থা গ্রহন না করলে এলাকার ঘর-বাড়ী ফসলী জমি বিলিন হয়ে যাবে। ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন না করলে অচিরেই জালালপুর এলাকাটি নিশ্চিহৃ হয়ে যাবে। জালালপুর গ্রামে স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল জলিল হাওলাদার জানান, হঠাৎ করে রবিবার দুপুরে এই বাঁধটি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এখনও ভাঙ্গন অব্যাহত রয়েছে। এখন শুধু স্লোপ বাকি আছে। টপসহ মূল বাঁধ ভেঙ্গে গেছে। ফলে জালালপুর, সদরপুর, আক্কেলপুর, সৈয়দপুর, মজিদবাড়িয়া, দরিয়াপুর, হাজীপুর, লস্করপুর গ্রামের কৃষক আমন হারানোর শঙ্কায় পড়েছেন। দুই চারদিনের মধ্যে মেরামত না করলে কয়েক হাজার একর আমন ধান নদীর পানি প্রবেশ করে ডুবে যাবে। জালালপুর গ্রামের আসমা বলেন বেগম বয়স ৭৫ ছুই ছুই বলেন, আন্ধারমানিক নদী মোগো নিঃস্ব কইরা দেছে. এহন পরিবারলইয়া কোমনে মাথা গুঁজম কইতে পারি না। বর্তমানে ভাঙনে তীব্রতা বেড়ে যাওয়ার কয়েকটি বাড়ী ঘর হুমকির মুখে রয়েছে। মিরাজ হাওলাদার জানান, ৪-৫ মাস আগে এই বাঁধের কাজ করা হয়েছে। তাদের দাবি শুধুমাত্র বালু ভর্তি করে নামে মাত্র সিমেন্ট দিয়ে জিও ব্যাগ দেয়া হয়েছে। বর্তমানে বাড়িঘর সব পানিতে ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। স্কুলগামী শিশুদের যোগাযোগ বন্ধেরও শঙ্কা রয়েছে। ওই বাঁধ দিয়ে স্কুলগামী শিশুদের চলাচল করতে হয়। নীলগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ বাবুল মিয়া জানান, তিনি ঘটনাস্থলে গিয়েছেন। এলাকার মানুষ নিয়ে তিনি ভীত রয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি উপজেলা পরিষদের মিটিংএ এই বাঁধ মেরামতের কথা আগেই বলে আসছি। এখন ভেঙ্গে গেছে। আমার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের টোটাল বাঁধটি মেরামত করা প্রয়োজন।’ পানি উন্নয়ন বোর্ডকে তিনি জরুরি ভিত্তিতে ভাঙ্গা বাঁধ মেরামতের জন্য জোর অনুরোধ করেছেন। কলাপাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ড নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আরিফ হোসেন জানান, ৪৬ নম্বর পোল্ডারের জালালপুরে ৩০মিটার বাঁধ ভাঙ্গার খবর শুনে তাৎক্ষণিক একজন এসও ঘটনাস্থলে গিয়েছেন। তিনিও যাচ্ছেন। এখন জরুরি ভিত্তিতে ভাঙ্গা অংশ মেরামতের পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানালেন।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com