শুরু হয়েছে শীতের মৌসুম। ইতোমধ্যে সরিষা ও কুল চাষ করেছেন কৃষকরা। বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে এখন সরিষা আর কুল ফুলের সমারোহ। এরই মধ্যে সরিষা ও কুল ক্ষেতের পাশে বসানো হয়েছে মৌ-চাষের বাক্স। উন্নত জাতের অ্যাপিস মেলিফেরা মৌমাছি সরিষা ও কুল ফুলের পরাগায়নে সহায়তা করছে। এই মধু চাষ করে ভাগ্য বদলে গেছে যশোরের শার্শা উপজেলার মো. মহসিন খানের। উপজেলার নাভারণ বাজার এলাকার বাসিন্দা মহসিন আদর্শ মৌচাক প্রকল্পের স্বত্বাধিকারী। ২০০৭ সালেএই প্রকল্প চালু করেন। ১৫ বছর ধরে এই পেশায় যুক্ত আছেন। তিন শ্রমিক নিয়ে প্রতি বছর সব খরচ বাদ দিয়ে আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা আয় করেন তিনি।
মহসিন বলেন, ‘উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় যেমন, শার্শা, নাভারণ, কুলপালা, বুরুজবাগানসহ বেশ কিছু এলাকায় মধু চাষ করি। ২৫০টির মতো বাক্স আছে। এসব মধু নিতে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন আসেন। সবাই “মধু মহসিন” নামেই আমাকে চেনেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘শীতকালে মধু চাষিরা বিভিন্ন এলাকায় যেখানে সরিষা ফুল ফোটে, সেখানে অনেকগুলো কলোনি (বাক্স) ব্যবহার করে মধু সংগ্রহ করেন। মধু সংগ্রহ করতে এক মাস লাগে। একটি কলোনি থেকে দুই কেজি মধু সংগ্রহ করা যায়। এটাই হচ্ছে খাঁটি মধু। এখন ফুল থেকে মধু আহরণ চলছে পুরোদমে। এরপর সংগ্রহ করা মধু বাজারে বিক্রি করবো। সাত দিনে একবার করে ভেতরে থাকা মৌ-বাক্স বের করে মধু সংগ্রহ করি। প্রতি কেজি মধু ৮০০ থেকে এক হাজার টাকায় বিক্রি করি।’
মধু চাষে আগ্রহী ব্যক্তিদের উদ্দেশে মহসিন বলেন, ‘বাণিজ্যিকভাবে মধু চাষ করতে চাইলে যে কেউ ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা খরচ করলেই ব্যবসা শুরু করা সম্ভব হয়। কম খরচে ভালো লাভ হয়। তবে ব্যবসা করতে চাইলে আগে ট্রেনিং নিতে হবে। শীতকালে কলোনির (বাক্সের) ওপর বস্তা দিয়ে ঢেকে রাখতে হয় এবং বৃষ্টি হলে পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখতে হয়। তা না হলে কলোনির ভেতরে পানি ঢুকে মধু নষ্ট হয়ে যেতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘মৌমাছি চাষ সাধারণত আবহাওয়ার ওপর নির্ভর করে। ভালো আবহাওয়া থাকলে এক মাসেই চার-পাঁচ বার সংগ্রহ করা যায়। প্রতিবারে একটি বাক্স থেকে প্রায় দুই কেজি করে মধু পাওয়া যায়। তবে মৌমাছির বিভিন্ন রকম রোগ হয়, তাই প্রতি মাসে বাক্স থেকে ট্রেগুলো বের করে মৌমাছি সুস্থ আছে কিনা দেখতে হবে। এসব মৌমাছিকে অনেক সময় বিভিন্ন পোকা যেমন মোম বিটল পোকা, ছাই পোকা, মদ পোকা, লাবরা পোকা ইত্যাদি আক্রমণ করে। তখন তামাক পাতা পুড়িয়ে ধোঁয়া সৃষ্টি করে পোকা তাড়াতে হয়। এছাড়া ফরমিক এসিড পানির সঙ্গে মিশিয়ে স্প্রেয়ের মাধ্যমে পোকা তাড়ানো যায়। বর্ষা মৌসুমে যখন কোথাও ফুল থাকে না তখন মৌমাছিকে চিনি খাইয়ে বাঁচিয়ে রাখতে হয়।’
মহসিনকে দেখে মধু চাষে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন একই এলাকার বাসিন্দা মিকাইল হোসেন। প্রশিক্ষণ নিয়ে মৌ-চাষ করছেন তিনি। মিকাইল বলেন, ‘মহসিনের কাছ থেকে আমি প্রশিক্ষণ নিয়ে মধু চাষ শুরু করেছি। এটা একটি লাভজনক চাষ। কম খরচে বেশি আয় করা যায়। বর্তমানে আমার ১৫টি বাক্স আছে। খরচ বাদ দিয়ে ভালো আয় হয়। সামনে বাক্সের পরিমাণ আরও বাড়াবো।’
এ ব্যাপারে শার্শা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ কুমার ম-ল বলেন, ‘মহসিনের মধু চাষের বিষয়টি আমরা জানি। সবসময় তাকে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। তার মধুর অনেক সুনাম আছে। মধু চাষে প্রযুক্তি ব্যবহার করে চাষ বাড়ানো যায় কিনা সে ব্যাপারে উদ্যোগ নিচ্ছি। নতুন করে কেউ মধু চাষ করতে চাইলে কৃষি অফিস থেকে সহযোগিতা করা হবে।’-বাংলাট্রিবিউন