সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৪৪ অপরাহ্ন

১৩ দফা দাবিতে জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান

শ. ই. সরকার জবলু মৌলভীবাজার :
  • আপডেট সময় বুধবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২২

মাদরাসার জন্য স্বতন্ত্র শিক্ষাক্রম, পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ণসহ ১৩ দফা দাবিতে মৌলভীবাজারে মানববন্ধন ও প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছে জমিয়াতুল মোদার্রেছীন মৌলভীবাজার জেলা শাখা। বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের মৌলভীবাজার জেলা সভাপতি অধ্যক্ষ মুফতি মাওলানা মুহাম্মদ শামছুল ইসলামের সভাপতিত্বে মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবের সম্মুখস্থ রাজপথে ১৪ নভেম্বর সোমবার দুপুরে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধন শেষে জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর উক্ত ১৩ দফা দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন মৌলভীবাজার জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ মাওলানা শফিকুর রহমান ও যুগ্ম সম্পাদক অধ্যক্ষ মাওলানা বশির আহমেদের যৌথ সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এ মানববন্ধনে বক্তারা বলেন- মাদরাসা শিক্ষার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অবদান বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন কৃতজ্ঞতার সাথে আজীবন স্মরণ রাখবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়, কওমি মাদরাসার স্নাতকোত্তর (মাস্টার্স) সনদের মান প্রদান, জনবল কাঠামো অনুমোদন, মাদরাসার ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন, মাদরাসা অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা, ৫৬০টি মডেল মসজিদ, পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)-কে জাতীয় দিবস ঘোষণাসহ বহুমুখি পদক্ষেপ ইসলামি শিক্ষার ইতিহাসে সোনালী হরফে লেখা থাকবে। যুগের চাহিদা পূরণে রূপকল্প ৪১, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রেক্ষাপটে শিক্ষা ব্যবস্থার শিক্ষাক্রম, পাঠ্যপুস্তক পরিমার্জন, উন্নয়ন কিংবা যুগোপযোগী করা নিয়ে কারো দ্বিমত নেই। আলেম-ওলামাগণ বারবার দাবি করেন, মুসলিম জনগোষ্ঠির ইমান-আকীদা, শিক্ষা-সংস্কৃতি সমুন্নত রেখে আধুনিক বিষয়সমূহ অন্তর্ভূক্তি ও মাদরাসা শিক্ষার বৈশিষ্ট্য উপযোগী পরিমার্জন সাপেক্ষে এবং সমন্বয়ের মাধ্যমে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক উন্নয়ন ও সংস্কার করতে হবে। কিন্তু, দুর্ভাগ্যজনকভাবে ২০২২ সালের জন্য এনসিটিবি ৬২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৬ষ্ঠ শ্রেণির জন্য যে ৯টি বই পরীক্ষামূলকভাবে পাঠদান করা হয় এবং ঐসমস্ত বই ২০২৩ সাল থেকে ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণির পাঠ্যপুস্তক হিসেবে স্কুল ও মাদরাসায় বাধ্যতামূলকভাবে পড়াতে হবে মর্মে এনসিটিবি ঘোষণা দিয়েছে। ৬ষ্ঠ শ্রেণির ৯টি বইয়ে কুরআন, সুন্নাহ, সাহাবায়ে কেরাম, আহলে বাইত, মুসলিম মনীষী, বিজ্ঞানী, কবি, সাহিত্যিকদের বানী, উদ্ধৃতি, নীতি-নৈতিকতা সৃষ্টিকারী বিষয়ের স্থলে আপত্তিকর বিষয় উপস্থাপিত হয়েছে। যেমন- ১. বিজ্ঞান বইয়ে ১১ জন উলঙ্গ নারী-পুরুষের ছবি দিয়ে তাদের লজ্জাস্থানের পরিচয় দেয়া হয়েছে এবং ছেলে মেয়েদের বিভিন্ন অঙ্গের বর্ণনা দেয়া হয়েছে ২. ৯টি বইয়ে শতশত মেয়ের বেপর্দা ছবি ও হিন্দু মহিলার শাঁখা পরা ছবি রয়েছে ৩. ইংরেজি বইয়ে কুকুর ও নেকড়ে বাঘের ২৪টি ছবি রয়েছে ৪. ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে ডারউইনের বিবর্তনবাদ (মানুষ সৃষ্টি হয়েছে বানর থেকে), দেব-দেবীর নগ্ন ও অর্ধনগ্ন ছবি এবং দেবতাদের পরিচয় দেয়া হয়েছে ৫. জীবন জীবিকা বইয়ে ইশপের গল্প, প্রনাম, গানশোনা, নাচ, বাঁশি, হারমোনিয়াম, তবলা, গিটার ইত্যাদি বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়াও দূর্গাপুজা, গীতাঞ্জলী, কিশোর-কিশোরীদের বয়ঃসন্ধিকালীন পরিবর্তন অত্যন্ত লজ্জাজনকভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। উপরন্ত বইগুলোতে যে সমস্ত মানুষের নাম ব্যবহৃত হয়েছে তা একটি মুসলিম দেশে সত্যিই আপত্তিকর। সামগ্রিক বিবেচনায় ৯১% মুসলমানের দেশে পাশ্চাত্য ও দেব-দেবীর বিশ্বাস এবং তাদের আরাধনার শিক্ষা সংস্কৃতির আদলে তৈরি বইগুলো এদেশের স্কুলের জন্যও উপযোগি নয়। এ ধরণের পাঠ্যপুস্তক মাদরাসায় পাঠদানের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রেরিত এবং নির্দেশিত হলে, মাদরাসা শিক্ষাবান্ধব সরকারকে ইসলাম ও মুসলমানদের ঐতিহ্য বিরোধী হিসেবে দাঁড় করিয়ে ধর্ম ও মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়নে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সকল অর্জনকে ম্লান করে দিবে- যা কোন অবস্থাতেই মেনে নেয়া যায়না। মানববন্ধনে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন মৌলভীবাজার জেলা শাখার সহ-সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ মাওলানা শামসুল ইসলাম, সদর উপজেলা জমিয়াতুল মোদার্রেছীন সাধারণ সম্পাদক মাওলানা সৈয়দ ইউনুছ আলী, রাজনগর উপজেলা সভাপতি মাওলানা লুৎফুর রহমান সিরাজী, কুলাউড়া উপজেলা সাধারণ সম্পাদক মাওলানা সুলতান আহমদ ও শ্রীমঙ্গলের মাওলানা নুরুল আহাদ।
বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের দাবিসমূহ হলো- ১. মাদরাসা শিক্ষার জন্য এ সরকারের প্রণীত ও জাতীয় সংসদে গৃহীত জাতীয় শিক্ষা নীতি- ২০১০ এ বর্ণিত মাদরাসা শিক্ষার স্বীকৃতি লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পূরণের উপযোগী স্বতন্ত্র শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচী এবং পাঠ্যবই, এনসিটিবি, মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড এবং জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের বিজ্ঞ ও বিশেষজ্ঞ আলেমদের সমন্বয়ে প্রণয়ন করা ২. দাবীকৃত শিক্ষাক্রম অনুযায়ী পাঠ্যবই প্রণয়নের পূর্বপর্যন্ত প্রচলিত পঠ্যপুস্তকসমূহ পাঠদান অব্যাহত রাখা ৩. সাধারণ শিক্ষায় এসএসসি পরীক্ষা ১০টি বিষয়ে ১০০০ নম্বরের পরীক্ষার সাথে সমন্বয় করে মূল বিষয় ঠিক রেখে মাদরাসা শিক্ষার দাখিল পরীক্ষার জন্য ১০০০ নম্বর নির্ধারণ ৪. বেসরকারি সকল স্তরের শিক্ষক-কর্মচারীগণের চাকুরী জাতীয়করণ ৫. সংযুক্ত ইবতেদায়ী প্রধানসহ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা শিক্ষকদের উপযুক্ত বেতন/ভাতা এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ন্যায় স্বতন্ত্র ও সংযুক্ত ইবতেদায়ী শিক্ষার্থীদেরকে উপবৃত্তি, টিফিনসহ সুযোগ সুবিধা প্রদান ৬. মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক অনুমোদিত ২০১৮ সালে প্রণিত স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসার নীতিমালা শতভাগ বাস্তবায়ন এবং স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা মঞ্জুরীর ১৪ বছরের অচলাবস্থার অবসান ৭. মহিলা কোটা শিথিল ও সংশোধনপূর্বক যোগ্য ও মেধাবী শিক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা ৮. আরবি প্রভাষকগণের উচ্চতর পদে আসীন হবার ব্যবস্থা ৯. অধ্যক্ষ/উপাধ্যক্ষ পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে আরবি প্রভাষকদের জন্য পথ উন্মুক্তকরণ ১০. কামিল পাশ সহকারী মৌলভীদের উচ্চতর স্কেলের ব্যবস্থা ১১. মাদরাসা শিক্ষকগণের জন্য বিভাগীয় পর্যায়ে প্রশিক্ষণ ইনিস্টিটিউট স্থাপন ১২. মাদরাসার জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা ২০১৮ (২৩ নভেম্বর ২০২০ পর্যন্ত সংশোধিত) স্কুল ও কলেজের নীতিমালা ২০২১ এর সাথে সমন্বয় করে মাদরাসার অনার্স স্তরের জন্য শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিওভুক্তকরণ ১৩. অমানবিকভাবে কর্তনকৃত প্রায় ২ হাজার শিক্ষকের ইনক্রিমেন্ট বহাল ও বকেয়াসহ প্রাপ্য ইনক্রিমেন্ট প্রদানের ব্যবস্থা।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com