বাজারে ক্রমাগত বাড়ছে কাগজের দাম। লাগামহীন কাগজের দাম বাড়ায় অনেকটা বিপাকে প্রকাশনা শিল্প। এভাবে চলতে থাকলে মুদ্রণ ব্যবসা অনেক কঠিন হয়ে যাবে বলে মনে করেন বেলাল হোসেন নামের নামের এক মুদ্রণ ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, গত কয়েক মাসে কাগজের দাম অনেক বেড়েছে। প্রতি সপ্তাহে সপ্তাহে দাম বাড়ে। যে খাতা ৪০-৪৫ টাকায় কেনা যেত সেটা এখন ৬৫ থেকে ৭০ টাকা। ২৮০ টাকার রিম এখন প্রায় ৪০০ টাকা।
কাগজ ব্যবসায়ী জামাল উদ্দিন বলেন, নির্দিষ্ট চাহিদার কারণে খাতার কাগজের বিক্রি ঠিক আছে। তবে মুদ্রণের কাজে ৮০ শতাংশ কাগজ ব্যবহার হওয়ায় আমাদের গড় বিক্রি কমে গেছে। পাইকারি বাজারে শুধু যে কাগজের দাম বেড়েছে তা নয়। বেড়েছে মলাটের কাগজের দামও। গত এক সপ্তাহে প্রতি ১০০টি মলাটের কাগজের দাম ১ হাজার ৮০০ টাকা থেকে বেড়ে ২ হাজার ৬০০ টাকা হয়েছে। একই পরিমাণ আর্ট কার্ডের দামও এখন ৫০০ টাকা পর্যন্ত বাড়তি। ১০০টি আর্ট কার্ড মিলছে ৩ হাজার ৫০০ টাকায়। এক রিম রঙিন কাগজের দাম ৮৫০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা বেড়ে পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকায়। জানা গেছে, পাইকারি বাজারে কলম তৈরির প্লাস্টিকের প্রতি ২৫ কেজি বস্তার দাম ৩ হাজার ৮০০ টাকা থেকে বেড়ে ৪ হাজার ৪০০ টাকা হয়েছে। কাগজ–সংশ্লিষ্ট অন্যান্য উপকরণের দামও বাড়তি। পাইকারিতে এক সপ্তাহ আগে ১২০ পৃষ্ঠার এক ডজন খাতা বিক্রি হয়েছিল ৩১০ থেকে ৩২০ টাকায়। এখন তা ৪০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে।
রবিন স্টেশনারির কর্ণধার জয়নুল ইসলাম বলেন, খাতার মতো কাগজের উপকরণের দাম গত এক সপ্তাহে নতুন করে ৩০ শতাংশের বেড়েছে। মাঝারি আকারের ১০০টি খাকি খামের দাম ২৫ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৩০ টাকা। সবকিছুর নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। আগামী প্রকাশনীর প্রকাশক ওসমান গণি বলেন, এটা একেবারেই কৃত্রিম সংকট যা সরকার ছাড়া কেউ বন্ধ করতে পারবে না। খুবই দুঃখজনক একটি ঘটনা যে, প্রতি সপ্তাহে কাগজের দাম বৃদ্ধি করা হচ্ছে। দেশে কোন কিছুর দাম এভাবেই হুট করে ডাবল হয়নি। এটি আমাদের প্রকাশনায় মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। এজন্য সরকারের উচিত দ্রুত ট্যাক্স কমিয়ে বিষয়টিকে তদারকির মধ্যে আনা। তিনি বলেন, এ দাম বৃদ্ধির ফলে এনসিটিবিও সমস্যায় পড়বে। এ অবস্থায় সরকার যত দ্রুত পদক্ষেপ নেবে ততই ভালো হবে। না হলে প্রকাশনা শিল্প হুমকির মুখে পড়বে। মাওলা ব্রাদার্সের প্রকাশক মাহমুদুল হক বলেন, প্রকাশনা শিল্প পুরোপুরি কাগজের ওপর নির্ভরশীল। প্রকাশনা সংস্থাকে মার্কেট থেকে কাগজ কিনতে হয়। কিন্তু এভাবে কাগজের দাম বেড়ে যাওয়াটা প্রকাশনা শিল্পে একটা বিরূপ প্রভাব ফেলছে।
তিনি বলেন, নতুন বই ছাপানো বা বই রিপ্রিন্ট করা উভয় ক্ষেত্রে এটি মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। আমাদের ক্রেতার বড় অংশই হচ্ছে মূলত ছাত্র-ছাত্রী। কিন্তু আমরাতো ছাত্র-ছাত্রীদের আশানুরূপ চাহিদা মেটাতে পারবো না। পারলেও অনেক দাম হবে হয়তো। সব মিলিয়ে বলা চলে পরিস্থিতি সুখকর না।