বক্সের অনেক বাইরে এসে ইরানের মেহেদি তারেমিকে লাথি মেরে লাল কার্ড দেখে যখন মাঠের বাইরে চলে যান ওয়েলসের গোলরক্ষক ওয়েইন হেনেসি, তখন ম্যাচের ৮৫ মিনিট। ১০ জনের প্রতিপক্ষ পেয়ে ইরানও সে সুযোগ কাজে লাগাতে মরিয়া হয়ে উঠে।
একের পর এক আক্রমণ করে ইরান নাটকীয়ভাবে ম্যাচটি জিতে নেয় ইনজুরির সময়ের অষ্টম ও একাদশ মিনিটে দুটি গোল করে। নিশ্চিত ড্রয়ের দিকে হেলে পড়া ম্যাচটি থেকে ইরান পূর্ণ ৩ পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছাড়ে।
প্রথম ম্যাচে ইংল্যান্ডের কাছে শোচনীয়ভাবে হারা মধ্যপ্রাচ্যের দেশটির বিশ্বকাপে টিকে থাকার সম্ভাবনাও বেঁচে থাকলো ২-০ গোলের দুর্দান্ত এই জয়ে।
বিশ্বকাপে টিকে থাকতে বাঁচামরার লড়াই ছিল ওয়েলস ও ইরানের। শুক্রবার দোহার আহমেদ বিন আলি স্টেডিয়ামে ‘বি’ গ্রুপের ম্যাচটির প্রথমার্ধ গোলশূন্য থাকার পর দুটি গোলই হয়েছে ইনজুরি সময়ে।
শেষ ষোলোতে ওঠার স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখতে দুই দলের সামনেই জয়ের বিকল্প ছিল না। সেই সমীকরণ মিলিয়ে ইরান স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখলো।
এশিয়ার অন্য তিন দেশ সৌদি আরব, জাপান ও কোরিয়া যখন চমক দেখিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করেছে, সেখানে ইরান ছিল পুরোটাই ব্যাকফুটে। প্রথম ম্যাচে বড় ব্যবধানে হারের পর তারাও এবার ঘুরে দাঁড়ালো দুর্দান্তভাবে।
প্রথমার্ধে ওয়েলসের আধিপত্য বেশি থাকলেও দ্বিতীয়ার্ধে ইরান চড়াও হয়ে খেলতে থাকে প্রতিপক্ষে রক্ষণে। দ্বিতীয়ার্ধে ইরানই করেছে বেশি আক্রমণ। একের পর এক কর্নারও আদায় করে নিচ্ছিল তারা। কিন্তু তাদের আক্রমণগুলো কখনও ওয়েলসের গোলরক্ষকে, আবার কখনো পোস্ট বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছিল। এর মধ্যে ৫২ মিনিটে পরপর ইরানের দুটি শট ফিরে আসে পোস্টে লেগে। আজমুনের শট পোস্টে লেগে ফিরে আসলে বল চলে যায় আলি গোলিজাদেহ’র কাছে। তার জোরালো শটও ফিরে আসে পোস্টে লেগে। ফিরতি বলে আজমুন হেড নিলে সেটা প্রতিহত করেন ওয়েলসের গোলরক্ষক হেনেসি। ৭৩ মিনিটেও গোল পেতে পারতো ইরান। কিন্তু এজাতোলাহির শট বাইরে চলে যায় পোস্টে বাতাস দিয়ে। ৮৪ মিনিটে সুযোগ তৈরি হয়েছিল ওয়েলসের সামনে। বক্সের মাথা থেকে ডেভিসের নেওয়া শট বাইরে চলে যায় ক্রসবার উঁচিয়ে।
১০ জনের ওয়েলসের বিরুদ্ধে সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে আক্রমণের ধারও বাড়িয়ে দিয়েছিল ইরান। ইনজুরি সময়ের অষ্টম মিনিটে বক্সের বেশ বাইরে থেকে চোখ ধাঁধানো এক শটে প্রথম গোল করেন রোজবেহ চেশমি। তিন মিনিট পর দ্বিতীয় গোল করেন রামিন রেজাইন।
ওয়েলস শুরু থেকে ইরানের ওপর চাপিয়ে খেলতে থাকে। প্রথমার্ধে ৬৫ ভাগ বল খল রেখে তারা আক্রমণ করে। তবে গোল আদায় করার মতো কোন সুযোগ তৈরি করতে পারেনি। ১৩ মিনিটে কেইফার মুর ছোট বক্স থেকে শট নিয়েছিলেন। কিন্তু সেই শট ইরানি গোলরক্ষক হোসেন হোসেইনকে পরাস্ত করার মতো যথেষ্ট ছিল না। প্রতি আক্রমণের কৌশলে ওয়েলসের রক্ষণে তিনবার হানা দিয়েছিল ইরান। ১৬ মিনিটে তো তাদের একটি গোল বাতিল হয়ে যায় অফসাইডের কারণে। ইনজুরি সময়ে মাঝ মাঠ থেকে আসা একটি বলের খুব কাছে ছিলেন সর্দার আজমুন। কিন্তু বল-পায়ে সংযোগ ঘটাতে পারেননি তিনি। পরের মিনিটে নুরুল্লাহি বক্সের বাইরে থেকে আচমকা শট নিয়েছিলেন। সেই শট জমা পরে ওয়েলস গোলরক্ষকের হাতে।
এই জয়ে দুই ম্যাচে ৩ পয়েন্ট ইরানের পকেটে। অন্যদিকে প্রথম ম্যাচ যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে ড্র করা ওয়েলস এই হারের পড়ে গেলো বিদায়ের শঙ্কায়। তাদের পয়েন্ট ২ ম্যাচে মাত্র ১। ওয়েলসের শেষ ম্যাচ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে, ইরানের ম্যাচ বাকি যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে।