অলিভিয়ের জিরু, ফ্রান্স ফুটবলের এক অবিচ্ছেদ্য নাম। ফ্রান্সের জার্সি গায়ে সর্বকালের সর্বোচ্চ গোল সংগ্রাহক তিনি। যেই কীর্তি তিনি গড়েছেই এই বিশ্বকাপেই। কাতার বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে জোড়া গোলে অঁরিকে ছুঁয়েছিলেন জিরু। আর শেষ ষোলোয় পোল্যান্ডের বিপক্ষে গোলের পরই থিয়েরি অঁরির নজির ছাপিয়ে যান অলিভিয়ের জিরু। তার গোলসংখ্যা ৫২। ফ্রান্সের ইতিহাসে সর্বাধিক গোল স্কোরার। কাতার বিশ্বকাপ যেন অলিভিয়ের জিরুর চিত্রটাই পাল্টে দিয়েছে। আগের রাশিয়া বিশ্বকাপে তার পারফরম্যান্স অবাক করেছিল সবাইকে, বইয়ে দিয়েছিল সমালোচনার ঝড়। দলের স্ট্রাইকার ছিলেন তিনি, চ্যাম্পিয়নও হয়েছিল ফ্রান্স। অথচ পুরো টুর্নামেন্টে গোল তো দূর, একটি গোলমুখী শটও ছিল না জিরোর দখলে। দিদিয়ের দেশঁম তাকে বিশেষ সুবিধা দিয়েছিলেন, এমনটাই গুঞ্জন ছিল ফুটবল পাড়তে।
ফ্রান্স দলের কখনোই সেরা তারকা ছিলেন না তিনি, তবে সুযোগের সদ্ব্যাবহার করতে ছাড় দেননি। এই বিশ্বকাপটাও হয়তো কাটাতে হতো বেে বসে, কিন্তু দলের সেরা ফুটবলার করিম বেনজেমার ইনজুরিতে জিরুর কপাল খুলে। অতঃপর ইতিহাস। তবে তার পথচলাটা খুব সহজ ছিল না। যদিও প্রতিটি সফলতার পেছনেই একটি করে অন্ধকার অতীত থাকে, তবে জিরুর গল্পটাতে আছে ভিন্নতা। অলিভিয়ার জিরুর বয়স যখন ২১, তখনো তিনি খেলছিলেন ফ্রান্সের তৃতীয় বিভাগের ফুটবলে। সে সময়ে তার কোনো এক ম্যানেজার তার প্রতি বিরক্ত হয়ে বলেছিলেন, জিরু টপ ফুটবলে খেলার যোগ্যতা রাখেন না। যাহোক, সময়ের সাথে উন্নতি করে ২৩ বছর বয়সে সেকেন্ড ডিভিশনের ক্লাবে মুভ করেন। তার ঠিক ১ বছর পর প্রথমবারের মতো লীগ ওয়ান খেলার সুযোগ পান জিরু। লীগ ওয়ান খেলতে এসেই জিরুর বাজিমাত। দ্বিতীয় সিজনেই মন্টপেলিয়ের কে জেতান লীগ ওয়ান শিরোপা, হোন যৌথভাবে লীগ ওয়ানের সর্বোচ্চ গোলদাতা। মন্টপেলিয়েরের হয়ে এমন পারফরম্যান্স তাকে বড় ইউরোপিয়ান ক্লাবগুলোর আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু বানায়। ফলে ২৬ বছর বয়সে যোগ দেন আর্সেনালে, খেলার সুযোগ হয় প্রিমিয়ার লীগ।
আর্সেনালে এসে নিজেকে প্রলিফিক গোলস্কোরার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন জিরু। আর্সেনালের হয়ে ৫ বছরে ১৮০ প্রিমিয়ার লীগ ম্যাচে ৭৩ গোল, সব মিলিয়ে ২৫৩ ম্যাচে ১০৫ গোল করা জিরু ৩১ বছর বয়সে যোগ দেন চেলসিতে। আর্সেনালের হয়ে ৫টি ট্রফি জেতার পাশাপাশি জেতেন পুস্কাস এওয়ার্ডও। অর্জনের দিক দিয়ে চেলসিতে থাকাকালীন সময়ে জিরুর ক্যারিয়ার সবচেয়ে উজ্জ্বল। ৩২ বছর বয়সে জিতলেন বিশ্বকাপ, একই বয়সে জিতলেন ইউরোপা লীগ। তার ২ বছর পর চেলসির হয়ে জিতলেন চ্যাম্পিয়নস লীগ, যে ক্যাম্পেইনে টপ স্কোরার ছিলেন তিনি। ৩৫ বছর বয়সে ক্যারিয়ারের পড়ন্ত সময়ে ইংলিশ ফুটবল ছেড়ে জিরুর পরবর্তী গন্তব্য হলো এসি মিলান। সেখানেও নিজের ক্লাসের প্রমাণ পুরোপুরি রেখেছেন তিনি। এসি মিলানের হয়ে প্রথম সিজনেই মিলানকে এক দশক পর জেতালেন স্কুদেত্তো। আর কিছুদিন আগে, ৩৬ বছর বয়সী জিরু কিংবদন্তি থিয়েরি অঁরিকে টপকে হয়ে গেলেন ফ্রান্স ফুটবলের ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলদাতা। অথচ কে ভেবেছিল, ২১ বছর বয়সে ফ্রান্সের তৃতীয় ডিভিশন ফুটবল খেলতে থাকা ছেলেটার এতো অর্জন হবে? কে ভেবেছিল ম্যানেজারের চোখে ব্যর্থ ছেলেটি ফ্রান্স ফুটবলেরই রাজা হয়ে যাবে!