সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় ফসলি কৃষি জমিতে চলছে অবাধে পুকুর খনন। উপজেলার উধুনিয়া ইউনিয়নের শ্যামপুর গ্রামে কৃষি জমিতে পুকুর খনন কাজের বেকো আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে দুবৃত্তরা। ভুমি মালিকের অভিযোগের আঙ্গুল স্থানীয় ইউপি সদস্য সহ বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে। এভাবে অবাধে কৃষকের ফসলি জমি ও বিল কেটে পুকুর খনন করলে নেমে আসবে প্রাকৃতিক পরিবেশের বিপর্যয়। দেখা দিবে চরম খাদ্য সংকট। নামেমাত্র প্রশাসন অভিযান চালালেও স্থানীয় প্রভাবশালী ও প্রকৃত অপরাধীরা থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। সোমবার সরেজমিনে দেখা যায়, সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার উধুনিয়া ইউনিয়নের শ্যামপুর গ্রামের বিলের ধারে বিস্তীর্ণ ফসলের জমিতে বেকো লাগিয়ে পুকুর খনন চলছিল। পূর্ব শত্রুতার জেরে রাতের আধারে জমির মাটি কাটা বেকো পুড়িয়ে দিয়েছে দুবৃত্তরা। বেকো মালিক আলম জানান, ৩২ লাখ টাকা দামের বেকো গান পাউডার দিয়ে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়ায় তার অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। এই জমির মালিক নোমান অভিযোগ করে জানান, স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল জব্বার সহ বেশ কয়েকজন জড়িত রয়েছেন এই অপকর্মের সাথে। স্থানীয়রা জানান, জমির মালিক প্রভাবশালী হওয়ায় মানছে না কোন আইন। মাঠের মধ্যে তার নিজস্ব পাঁচ বিঘা ও আশেপাশের কৃষকের জমি ইজারা নিয়ে খনন করছে পুকুর। জমির মাটি অবাধে বিক্রি করছে ইটভাটায়। সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই কৃষি জমির মাটি কেটে অবাধে খনন করছে এই পুকুর। যেন দেখার কেউ নেই। এতে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে ভুক্তভোগী কৃষক। এদিকে উপজেলার রামকৃষ্ণপুর ও বাঙ্গালা ইউনিয়নের অধিকাংশ মৌজায় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় রাতের আধারে শত শত বিঘা ফসলি জমির মাটি কেটে সুকৌশলে এক শ্রেণীর সুবিধা বাদীরা খনন করছে এ সমস্ত পুকুর। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কৃষক জানান, সাধারণ কৃষকের উপর প্রভাব খাটিয়ে জোরপূর্বক লিজ নিচ্ছে এসব জমি। এছাড়াও উপজেলার উধুনিয়া, পূর্ণিমাগাঁতী, কয়ড়া, বড়পাঙ্গাসী, লাহিড়ী মোহনপুর, দূর্গানগর, উল্লাপাড়া সদর, সলপ, পঞ্চক্রোশী, বড়হর, সলঙ্গা ও হাটিকুমরুলের অধিকাংশ ইউনিয়নে কৃষি জমি নষ্ট করে খনন করা হচ্ছে পুকুর। কৃষকের জমি থেকে মাটি নিতে আসা ট্রলি ও ট্রাক্টর চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ সমস্ত প্রতি গাড়ি মাটি বিক্রি করা হচ্ছে সাত থেকে আট’শ টাকায়। এ সমস্ত মাটি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বিভিন্ন ইটভাটায়। বিভিন্ন এলাকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অন্তত ১০ জন কৃষক জানান, অনেকেই এখন কৃষিজমি, বিল, ভিটেজমি ও বাগান কেটে সাময়িক লাভের আশায় পুকুর খনন করছে। মাঝে মধ্যে প্রশাসনের লোকজন দু-একটা অভিযান চালালেও তাতে কোনো ভাবেই বন্ধ হচ্ছে না কৃষি জমির এই ধ্বংসযজ্ঞ। উধুনিয়া ইউপি সদস্য জব্বার বলেন, বেকো পোড়ানো সাথে আমার কোন সম্পৃক্ত নেই। অন্যদের কথা বলতে পারবো না। তবে পূর্ব শত্রুতার কারণে এমন সন্দিহান করছে তারা। উধুনিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ রেজাউল করিম বাচ্চু বলেন, বেকো পোড়ানো সাথে ইউপি সদস্য জড়িত কি-না তা জানা নেই আমার। তবে বেকো পুড়েছে এটা তিনি মৌখিকভাবে জানেন। উল্লাপাড়া কৃষি কর্নকর্তা সুবর্ণা ইয়াসমিন সুমি বলেন, ফসলি জমি কেটে পুকুর খনন করা যেমন আইন বিরোধী তেমনি গুরুতর ক্ষতি হচ্ছে প্রকৃতিরও। শ্রেণী পরিবর্তনের অনুমতি ছাড়া কোন কৃষকই পুকুর খনন করতে পারেন না। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে লিখিতভাবে জানানো হবে। উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ উজ্জল হোসেন বলেন, উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় কৃষি জমিতে পুকুর খনন করার অভিযোগে জমির মালিকসহ গাড়ি চালকের অনেককে এর আগে নিষেধাজ্ঞা ও বিভিন্ন দন্ডে জরিমানা করা হয়েছে। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনে আরোও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।