যেকোনো ব্যাংকের আর্থিক সক্ষমতা ও দক্ষ ব্যবস্থাপনার বড় একটি নির্দেশক হলো ব্যাংকটির নগদ প্রবাহ বা ক্যাশ ফ্লো। নগদ অর্থ প্রবেশের চেয়ে বের হয়ে যাওয়ার প্রবণতা বেড়ে গেলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের নগদ প্রবাহে ঘাটতি তৈরি হয়। এ ঘাটতি যত বড় হয়, ব্যাংকের তারল্য ঝুঁকিও তত বেড়ে যায়।
দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৩৩ ব্যাংকের আর্থিক প্রতিবেদনে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে দেশের বেশির ভাগ ব্যাংকেরই শেয়ারপ্রতি নিট পরিচালন নগদ প্রবাহে (এনওসিএফএস) বড় ধরনের ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে। তালিকাভুক্ত ৩৩ ব্যাংকের মধ্যে ১৮টিরই এনওসিএফএস ঋণাত্মক ধারায় নেমে এসেছে। এর মধ্যে নয়টি ব্যাংকের এনওসিএফএস ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে ইতিবাচক ধারায় থাকলেও চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে তা নেতিবাচক অবস্থানে চলে গিয়েছে। বাকি নয়টি ব্যাংকের এনওসিএফএস গত বছরের সেপ্টেম্বরেও নেতিবাচক ধারায় ছিল।
বারবার ঋণের কিস্তি পরিশোধে ছাড়, মেয়াদোত্তীর্ণ ও খেলাপি ঋণের পরিমাণ এবং ঋণপত্রের দায় সমন্বয়ের সময়সীমা বৃদ্ধির কারণে ব্যাংকগুলোর নগদ প্রবাহে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলে মনে করছেন ব্যাংক নির্বাহীরা। তাদের ভাষ্যমতে, বাংলাদেশ ব্যাংকের দেয়া নানা নীতিছাড়ের প্রভাবও এখন ব্যাংকগুলোর নগদ প্রবাহে দেখা যাচ্ছে। আবার ব্যাংকঋণ বাড়াতে না চাইলেও অসমন্বিত এলসি দায় ফোর্স লোন হয়ে মেয়াদি বিনিয়োগে রূপান্তর হচ্ছে। এর সঙ্গে সঙ্গে ডলারের বিনিময় হার বৃদ্ধিও ব্যাংকগুলোর নগদ প্রবাহের ঘাটতি বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রেখেছে।
চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) ১৪ হাজার ৬৯৩ কোটি টাকার আমানত বেড়েছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের। একই সময়ে ২৫ হাজার ৩৪৮ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে ব্যাংকটি। আমানতের তুলনায় বিনিয়োগের প্রবৃদ্ধি অনেক বেশি হলেও প্রত্যাশিত মুনাফা পায়নি ইসলামী ব্যাংক। এ সময়ে বিনিয়োগ থেকে ব্যাংকটির আদায় কমেছে। বেড়েছে মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণ। আবার ঋণপত্রের দায় সমন্বয় না হওয়ায় ব্যাংকটির ফোর্স লোনের পরিমাণও বেড়েছে। সব মিলিয়ে গত নয় মাসে ইসলামী ব্যাংকে যে পরিমাণ অর্থ ঢুকেছে, বের হয়েছে তার চেয়ে বেশি। এ কারণে ব্যাংকটির পরিচালন কার্যক্রম থেকে নিট নগদ প্রবাহে (নিট ক্যাশ ফ্লো ফ্রম অপারেটিং অ্যাক্টিভিটিজ) বড় ধরনের ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে।
২০২১ সালের সেপ্টেম্বর শেষে ইসলামী ব্যাংকের পরিচালন কার্যক্রম থেকে নগদ প্রবাহে উদ্বৃত্ত ছিল ৯ হাজার ৩৫৮ কোটি টাকা। কিন্তু চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে গুরুত্বপূর্ণ এ সূচকে ৭ হাজার ২০৫ কোটি টাকা ঘাটতি তৈরি হয়েছে। ব্যাংকটির এনওসিএফএস এ বছরের সেপ্টেম্বর শেষে ৪৪ টাকা ৭৫ পয়সা ঋণাত্মক অবস্থানে রয়েছে, যেখানে আগের বছরের সেপ্টেম্বরে ব্যাংকটির এনওসিএফএস ছিল ইতিবাচক ধারায়, ৫৮ টাকা ১৩ পয়সায়।
নগদ প্রবাহ নেতিবাচক ধারায় চলে যাওয়ার পেছনে কভিড ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সৃষ্ট বৈশ্বিক পরিস্থিতির ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করছেন ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিছাড়ের কারণে নির্দিষ্ট সময়ে বিনিয়োগের অর্থ ফিরে আসছে না। কিস্তি পরিশোধের নীতিছাড়ের কারণে বিনিয়োগের মেয়াদ বাড়াতে হচ্ছে। আবার দেশের অর্থনীতির স্বার্থেই গত এক বছর আমরা বেশকিছু নতুন বিনিয়োগ করেছি। ইসলামী ব্যাংক একাই দেশের এক-তৃতীয়াংশ রেমিট্যান্স আহরণ করে। রেমিট্যান্সের জন্য এক বছর আগে আমরা ডলারপ্রতি ৮৫-৮৬ টাকা পরিশোধ করতাম। এখন ১০৭ টাকার বেশি পরিশোধ করতে হচ্ছে। এ কারণে ব্যাংকের বিপুল তারল্য বের হয়ে যাচ্ছে।’
আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, চলতি পঞ্জিকাবর্ষের সেপ্টেম্বর শেষে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড, মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেড, ব্যাংক এশিয়া লিমিটেড ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক (এমটিবি) লিমিটেডের নগদ প্রবাহ পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। সাউথইস্ট ব্যাংক লিমিটেড, প্রাইম ব্যাংক লিমিটেড, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড ও আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক লিমিটেড ইতিবাচক ধারা ধরে রাখতে পারলেও অবনতি হয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলোর নগদ প্রবাহ পরিস্থিতির। অন্যদিকে গত বছরের সেপ্টেম্বরে এনওসিএফএস নেতিবাচক ধারায় থাকলেও চলতি পঞ্জিকাবর্ষের একই সময়ে এসে তা ইতিবাচক ধারায় আনতে সক্ষম হয়েছে যমুনা ব্যাংক লিমিটেড, ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড, শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, প্রিমিয়ার ব্যাংক লিমিটেড, ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেড, এনআরবিসি ব্যাংক লিমিটেড ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড।
ব্যাংক নির্বাহীরা বলছেন, কভিডের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার পর থেকেই ব্যাংকঋণ পরিশোধে বিশেষ ছাড় পেয়ে আসছিলেন ঋণগ্রহীতারা। ২০২০ সালজুড়ে ঋণের কোনো কিস্তি পরিশোধ না করেই খেলাপি হওয়া থেকে নিষ্কৃতি পেয়েছিলেন ঋণগ্রহীতারা। গত বছরের পুরো সময়ও নানা নীতিছাড় উপভোগ করেছেন ব্যবসায়ীরা। এখন আবার রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটকে সামনে এনে ঋণ পরিশোধে নতুন ছাড় দেয়া হয়েছে। বারবার ঋণের কিস্তি পরিশোধে ছাড়ের কারণে ব্যাংকগুলোর ঋণ আদায় কমছে। বিপরীতে বাড়ছে মেয়াদোত্তীর্ণ ও খেলাপি ঋণের পরিমাণ। ঋণপত্রের দায় সমন্বয়ের সময়সীমাও কয়েক দফায় বাড়ানো হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের দেয়া নীতিছাড়ের প্রভাব পড়েছে ব্যাংকগুলোর নগদ প্রবাহে। ব্যাংকঋণ বাড়াতে না চাইলেও অসমন্বিত এলসি দায় ফোর্স লোন হয়ে মেয়াদি বিনিয়োগে রূপান্তর হচ্ছে। এর সঙ্গে সঙ্গে ডলারের বিনিময় হারের ঊর্ধ্বমুখিতায়ও এখন ব্যাংকের নগদ প্রবাহ পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে।
নগদ প্রবাহকে ব্যাংকের আর্থিক সক্ষমতা ও দক্ষ ব্যবস্থাপনার নির্দেশক হিসেবে বিবেচনা করা হয় জানিয়ে পেশাদার হিসাববিদরা বলছেন, কোনো ব্যাংকের আমানত প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার পাশাপাশি ঋণ আদায় পরিস্থিতির অবনতি হলে নগদ প্রবাহ নেতিবাচক ধারায় চলে যায়। এনওসিএফএসের মাধ্যমে একটি প্রতিষ্ঠানের তারল্য পরিস্থিতির শক্তিমত্তা পরিমাপ করা যায়। এনওসিএফএস নেতিবাচক ধারায় থাকার অর্থ হলো প্রতিষ্ঠানের পরিচালন কার্যক্রম থেকে যে পরিমাণ নগদ প্রবাহ আসছে তা পরিচালন ব্যয় মেটানোর জন্য পর্যাপ্ত নয়। এ ঘাটতি পূরণ করতে প্রতিষ্ঠানকে অন্য উৎস থেকে অর্থ ধার করতে হয়। এতে সুদ বাবদ প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ব্যয় বেড়ে যায়, যা মুনাফাকেও সংকুচিত করে তোলে। ঋণপত্রের (এলসি) দায় নির্দিষ্ট সময়ে সমন্বয় না হলে সেটিকে গণ্য করা হয় ফোর্স লোন হিসেবে। এভাবে নানাভাবে ব্যাংকে নগদ অর্থের আন্তঃপ্রবাহ কমে বহিঃপ্রবাহ বাড়লে তা সার্বিক নগদ প্রবাহকে ঘাটতিতে ফেলে দেয়। এ ঘাটতি বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যাংকের তারল্য ঝুঁকিও বেড়ে যায়।
এদিক থেকে এখন সবচেয়ে সঙ্গীন অবস্থানে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংক লিমিটেড। ব্যাংকটির আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে রূপালী ব্যাংকের আমানত কমেছে। ২০২১ সালের ডিসেম্বর শেষে রূপালী ব্যাংকের আমানত ছিল ৫৭ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকটির আমানত ৫৭ হাজার ২৭৭ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। বিপরীতে এ সময়ে ঋণ বাড়িয়েছে ব্যাংকটি। গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকটির বিতরণকৃত ঋণের স্থিতি ছিল ৩৮ হাজার ১৪৭ কোটি টাকা। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে ঋণের স্থিতি ৪১ হাজার ২৫৮ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছে। ঋণ বাড়লেও রূপালী ব্যাংকের সুদ আয়সহ মুনাফা কমেছে। এ কারণে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি নগদ প্রবাহের ঘাটতি ৭০ টাকা ৯৭ পয়সায় গিয়ে ঠেকেছে। এক বছর আগেও রূপালী ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি নগদ প্রবাহ ছিল ১৭ টাকা ৮০ পয়সা।
চলতি পঞ্জিকাবর্ষের সেপ্টেম্বর শেষে ঢাকা ব্যাংক লিমিটেডের শেয়ারপ্রতি নিট পরিচালন নগদ প্রবাহের ঘাটতি ছিল ২৭ টাকা, যেখানে আগের বছরের একই সময়ে ব্যাংকটির এ প্রবাহের উদ্বৃত্ত ছিল ১ টাকা ৩৫ পয়সা।
দেশের বেশির ভাগ ব্যাংকে যে পরিমাণ টাকা ঢুকছে, তার চেয়ে বেশি টাকা বের হয়ে যাচ্ছে বলে মনে করেন ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমরানুল হক। তিনি বলেন, ‘ব্যাংক খাতে আমানতের প্রবৃদ্ধি আগের চেয়ে অনেক কম। আবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিছাড়সহ নানা কারণে ঋণগ্রহীতারা কিস্তি পরিশোধ করছেন না। এলসি দায় সমন্বয় না হওয়ার কারণে ফোর্স লোনের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। এসব কারণে ব্যাংকের ক্যাশ ফ্লো কম। দক্ষ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে আমরা নগদ প্রবাহ বাড়ানোর চেষ্টা করছি।’
গত বছরের সেপ্টেম্বরে এক্সিম ব্যাংকের এনওসিএফএস ছিল ঋণাত্মক ১০ টাকা ৭৫ পয়সা। সেপ্টেম্বর ২০২২ শেষে তা হয়েছে ঋণাত্মক ২০ টাকা ৩২ পয়সা।
ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ ফিরোজ হোসেন বলেন, ক্যাশ ফ্লো নেতিবাচক ধারায় থাকলেও এক্সিম ব্যাংকে তারল্য সংকট নেই। ব্যাংকের পরিচালন মুনাফাসহ অন্যান্য সূচক ইতিবাচক ধারায় রয়েছে।
এবি ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি নিট পরিচালন নগদ প্রবাহের ঘাটতি গত বছরের সেপ্টেম্বরের ১৭ টাকা ৩২ পয়সা থেকে এবার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯ টাকা ৩ পয়সায়। একই সময়ের মধ্যে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি) লিমিটেডে এ ঘাটতির পরিমাণ ১৮ টাকা ৩১ থেকে বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ টাকা ৬৮ পয়সায়, যেখানে গত বছরের সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকটির এনওসিএফএস ছিল ঋণাত্মক ১৮ টাকা ৩১ পয়সা।
এক বছরে নগদ প্রবাহ পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে উত্তরা ব্যাংক লিমিটেডের। এ বছরের সেপ্টেম্বরে ব্যাংকটির এনওসিএফএস দাঁড়িয়েছে ঋণাত্মক ১৫ টাকা ১৩ পয়সায়। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে এর পরিমাণ ছিল ঋণাত্মক ১৭ টাকা ১০ পয়সা।
নগদ প্রবাহে ঘাটতি বেড়েছে ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডের (এনবিএল)। এ বছরের সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকটির এনওসিএফএস দাঁড়িয়েছে ঋণাত্মক ১০ টাকা ৮৩ পয়সায়, যেখানে গত বছরের সেপ্টেম্বর শেষে এটি ঋণাত্মক ৫ টাকা ৬২ পয়সা।
পূবালী ব্যাংক লিমিটেডের এনওসিএফএস এ বছরের সেপ্টেম্বর শেষে ঋণাত্মক ৯ টাকা ১ পয়সায় দাঁড়িয়েছে। গত বছরের সেপ্টেম্বর শেষে তা ছিল ৬ টাকা ৫১ পয়সা।
এ বছরের সেপ্টেম্বর শেষে দ্য সিটি ব্যাংক লিমিটেডের এনওসিএফএস দাঁড়িয়েছে ঋণাত্মক ৭ টাকা ৩৫ পয়সায়, যেখানে গত বছরের একই সময়ে তা ছিল ঋণাত্মক ৫ টাকা ৬৯ পয়সা।
তবে তারল্য পরিস্থিতির ক্ষেত্রে সিটি ব্যাংক শক্ত অবস্থানে আছে বলে জানালেন ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিন। তিনি বলেন, ‘ব্যাসেল-৩ ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী আমরা লিকুইডিটি কাভারেজ রেশিও (এলসিআর) ও নিট স্টেবল ফান্ডিং রেশিও (এনএসএফআর) দিয়ে তারল্যে পরিস্থিতি পরিমাপ করি। এ দুটি নির্দেশকের ভিত্তিতে সিটি ব্যাংকের অবস্থান খুবই ভালো।’
ওয়ান ব্যাংক লিমিটেডের এনওসিএফএস ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর শেষে ঋণাত্মক ৫ টাকা ২৫ পয়সায় দাঁড়িয়েছে। যদিও গত বছরের সেপ্টেম্বরে ব্যাংকটির এনওসিএফএস ছিল ইতিবাচক ধারায়, ২২ পয়সায়।
এ বছরের সেপ্টেম্বর শেষে স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক লিমিটেডের এনওসিএফএস দাঁড়িয়েছে ঋণাত্মক ৪ টাকা ১৪ পয়সায়, যেখানে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর শেষে তা ছিল ঋণাত্মক ৪ টাকা ১৫ পয়সা। এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংকটির নগদ প্রবাহ পরিস্থিতির তেমন হেরফের হয়নি।
সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের (এসআইবিএল) এনওসিএফএস এ বছরের সেপ্টেম্বর শেষে ঋণাত্মক ৩ টাকা ৬২ পয়সায় দাঁড়িয়েছে, যেখানে গত বছরের একই সময়ে ছিল ৫ পয়সা।
ন্যাশনাল ক্রেডিট অ্যান্ড কমার্স (এনসিসি) ব্যাংক লিমিটেডের এনওসিএফএস এ বছরের সেপ্টেম্বর শেষে দাঁড়িয়েছে ঋণাত্মক ২ টাকা ৮৬ পয়সায়, যেখানে গত বছরের সেপ্টেম্বর শেষে ছিল ঋণাত্মক ২ টাকা ৬৯ পয়সা।
এক বছর আগে নগদ প্রবাহে শক্তিশালী অবস্থানে থাকলেও এ বছরে এসে কিছুটা ঘাটতিতে পড়েছে ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড (ইবিএল)। এ বছরের সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকটির এনওসিএফএস ঋণাত্মক ২ টাকা ৪৬ পয়সায় দাঁড়িয়েছে, যেখানে গত বছরের একই সময়ে ছিল ১৮ টাকা ৪ পয়সা।
সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স (এসবিএসি) ব্যাংক লিমিটেডের এনওসিএফএস এ বছরের সেপ্টেম্বর শেষে দাঁড়িয়েছে ঋণাত্মক ২ টাকা ৩৯ পয়সায়, যেখানে গত বছরের সেপ্টেম্বরে তা ছিল ঋণাত্মক ১২ টাকা ১৩ পয়সা। এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংকটির নগদ প্রবাদ পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।
২০২২ সালের সেপ্টেম্বর শেষে ঋণাত্মক ৯৮ পয়সা এনওসিএফএস হয়েছে ইউনিয়ন ব্যাংক লিমিটেডের, যেখানে গত বছরের একই সময়ে ছিল ২ টাকা ১ পয়সা।
এক বছরের ব্যবধানে নগদ প্রবাহে কিছুটা ঘাটতির মুখে পড়েছে আইএফআইসি ব্যাংক লিমিটেড। এ বছরের সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকটির এনওসিএফএস ঋণাত্মক ৮ পয়সায় দাঁড়িয়েছে। যদিও গত বছরের সেপ্টেম্বরে ব্যাংকটির এনওসিএফএস ছিল ১ টাকা ১৩ পয়সা।
দেশের ব্যাংক খাতে এখনো যথেষ্ট পরিমাণ উদ্বৃত্ত তারল্য রয়েছে বলে জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক। তিনি বলেন, চলতি বছরের অক্টোবর শেষেও ব্যাংকগুলোর হাতে ১ লাখ ৬৯ হাজার ৫৫৫ কোটি টাকার বিনিয়োগযোগ্য তারল্য রয়েছে। কিছু ব্যাংকের কাছে তারল্য কম থাকলেও অন্য ব্যাংকের কাছে বেশি আছে। ব্যাংকগুলো চাইলেই কলমানি বাজার থেকে ধার নিয়ে তহবিল ব্যবস্থাপনা ঠিক রাখতে পারছে।
মেজবাউল হক বলেন, নগদ প্রবাহ ঘাটতি মানে এটি নয় যে ওই ব্যাংকের আর্থিক পরিস্থিতি খারাপ। বরং অনেক বড় ব্যাংকও অলস তারল্য হাতে না রেখে বিনিয়োগ করে। আবার প্রয়োজন হলে কলমানি বাজার কিংবা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ধার করে চলে। এতে ব্যাংকের মুনাফা বাড়ানো যায়। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলোর ক্যাশ ফ্লো ঘাটতি হওয়ার পেছনে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ভূমিকাই বেশি। কভিডের সময় বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ঋণ পরিশোধে বিভিন্ন ধরনের নীতিছাড় দেয়া হয়েছে। এ কারণে ব্যাংকগুলোর ঋণ আদায় কমছে। ব্যাংক খাতের বিদ্যমান সমস্যাগুলো দক্ষ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কাটিয়ে উঠতে হবে। নীতিছাড় কিংবা আরো নীতি প্রণয়নের মাধ্যমে এ সমস্যা মিটবে না।
প্রসঙ্গত, দেশে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকের সংখ্যা ৩৪। এর মধ্যে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক গত মাসে তালিকাভুক্ত হওয়ায় ব্যাংকটির নগদ প্রবাহ পরিস্থিতি এ প্রতিবেদনে বিবেচনায় নেয়া হয়নি।